ওপেনিং পজিশনটি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ দলের কাছে এক গোলকধাঁধার। লিটন দাস ও দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল অনুপস্থিতিতে এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি কেমন করে, তা নিয়ে সবারই বাড়তি আগ্রহ ছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন মোহাম্মদ নাইম শেখ ও অভিষিক্ত তানজিদ হাসান তামিম। তবে সেই জুটি টিকেছিল মাত্র আট বল, রান এসেছিল চার।
রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে দলে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। পরিবর্তনের মধ্যে ছিল ওপেনিং জুটিও। তানজিদ বাদ পড়ায় নাইমের সঙ্গে দলের ইনিংসে উদ্বোধন করেন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। দলে এনামুল হক বিজয় থাকতেও মিরাজ ওপেনিংয়ে নামবেন, সেটি অনেকের অনুমানে ছিল না।
মিরাজকে ওপেনিংয়ে দেখে চমকানোর আরও কিছু কারণ ছিল। বাংলাদেশের বিগত ওয়ানডেগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, মিরাজ সাধারণত লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করে থাকেন। তাছাড়া ৫০ ওভারের ক্রিকেটে মিরাজ ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন একবারই, ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে। পাঁচ বছর পর মিরাজকে আবার ওপেনিংয়ে আনাটা তাই একরকম জুয়া খেলার মতোই ছিল।
তবে সেই জুয়া যে দারুণভাবে কাজে লেগেছে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এশিয়া কাপে বাঁচামরার ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হাতে আঘাত পেয়ে উঠে যাওয়ার আগে ওপেনিংয়ে নেমে ১১৯ বলে সাত বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় অপরাজিত ১১২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন মিরাজ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর বল হাতে এক উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচসেরা হন তিনি।
ম্যাচের পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসে মিরাজ জানান, ওপেনিংয়ে তার উঠে আসার সিদ্ধান্তটা এসেছিল ম্যাচের আগের দিন। আফগানিস্তান ম্যাচের আগের দিন। শনিবার রাতেই মিরাজকে সাকিব আল হাসান জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি ওপেন করতে পারবেন নাকি। মিরাজের সামর্থ্যের কথা জেনেই হয়তো তাকে ওপেনিংয়ে আনার ঝুঁকিটি নিয়েছিলেন সাকিব। মিরাজও সুযোগটা কাজে লাগিয়ে অধিনায়কের আস্থার যোগ্য প্রতিদান দিয়েছেন।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো শতকের পর নিয়মিতই টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন মিরাজ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “পরের ম্যাচেও যদি সুযোগ হয় আর আমি ভালো করতে পারি তাহলে হয়তো টপ অর্ডারে সব সময় খেলার সুযোগ পাবো। টিম ম্যানেজমেন্ট যদি আমাকে টপ অর্ডারে সুযোগ দেয়, তাহলে সেটা আমার জন্য ভালো হবে।”
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮৯ রানের জয় তুলে নিয়ে সরাসরি সুপার ফোরে টিকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। সুপার ফোরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিপক্ষ হতে যাচ্ছে টুর্নামেন্টের মূল আয়োজক পাকিস্তান। নেপালের বিপক্ষর বড় ব্যবধানে জিতে এবং চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান দলের বোলিং আক্রমণে রয়েছে শাহিন আফ্রিদি-হারিস রউফ-নাসিম শাহকে নিয়ে গড়া বিধ্বংসী পেসার ত্রয়ী। স্বাভাবিকভাবেই মিরাজের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, পাকিস্তান বোলারদের সামলাতে কোনো পরিকল্পনা নিয়ে তিনি প্রস্তুত আছেন কি-না।
জবাবে মিরাজ হাসিমুখেই চ্যালেঞ্জটি নিতে তৈরি থাকার কথা জানালেন। মিরাজ বলেন, “আমি যেকোনো বোলারের মুখোমুখি হতে সর্বদা প্রস্তুত। আমি কোনো বোলারকে (মুখোমুখি হওয়া) নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না। আমি মিডল অর্ডারে ভালো খেলতে চাই।”