মিরপুরের উইকেটকে ব্যাটারদের জন্য বলা হয়ে থাকে মৃত্যুকূপ। সেটি বুধবার (৬ ডিসেম্বর) আরেকবার প্রমাণ হলো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাটসম্যানদের অবস্থা ছিল শোচনীয়। এক দিনে পড়ে গেছে একে একে ১৫টি উইকেট। বহুদিনের চেনা এই উইকেটে দাঁড়াতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররাও।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে মিরপুরের মন্থর উইকেটে ব্যাটাররা নিউজিল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে লড়তে পারেননি। মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেন দীপুর ৫৭ রানের জুটিতে কোনোরকমে ১৭২ রান করতে পারে তারা। তবে শেষ ঘণ্টায় ব্যাটিংয়ে নেমে নিউজিল্যান্ড ৫৫ রান তুলতেই হারায় ৫ উইকেট। এতেই আড়ালে চলে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং। দিন শেষে বলাই যায়, বাজে ব্যাটিংয়ের পরও ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটি বাংলাদেশের।
প্রথম দিনের প্রথম ঘণ্টায় মিরপুরের উইকেটে আধিপত্য দেখিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের স্পিনাররা। দিনটা বাংলাদেশের হয়েছেও এই স্পিনারদের জন্য। এজাজ প্যাটেল, মিচেল স্যান্টনার, গ্লেন ফিলিপস- তিন কিউই স্পিনার মিলে নেন ৮ উইকেট। আর দিনের শেষভাগে নিউজিল্যান্ডের পাঁচটি উইকেটও তুলে নেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার তাইজুল ও মিরাজ।
শুরুটা বাংলাদেশকে দিতে পারেননি দুই ওপেনার জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয়। দুজনই উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন দলীয় ২৯ রানে। তাদেরকে হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরানোর দায়িত্ব ছিল অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিজ্ঞ মুমিনুল হকের। কিন্তু এজাজ প্যাটেলের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে মুমিনুল বিদায় নেন দুই অঙ্কে (৫) পৌঁছানোর আগেই। আর ৬ রান উঠতেই অধিনায়ক শান্তও বিদায় নেন। ৪৭ রানে টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটারকে হারিয়ে খেই হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেন অভিজ্ঞ মুশফিক ও তরুণ ব্যাটার দীপু। দুজন মিলে ১৫৪ বলে ৫৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। মুশফিক হাত দিয়ে বল আটকে “অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড” আউট না হলেও জুটিটা আরও বড় হতে পারতো। কিন্তু মুশফিকের ওই আউটেই মূলত ছন্দপতন ঘটে। ৮৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় মুশফিক খেলেন ৩৫ রানের ইনিংস।
মুশফিকের আউটের পর দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আউট হন দীপু। তিনি করেন ৩১ রান। এরপর বাংলাদেশের মোট সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ১৭২ রানে। মিরাজ ২০, নাঈম হাসান ১৩ ও শরিফুল ইসলামের ব্যাট থেকে আসে ১০ রানের ইনিংস। সবমিলিয়ে ৬৬.২ ওভারে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে গিয়ে প্রথম ওভারে শরিফুলকে দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের বোলিং। এক ওভার শেষ করেই তাইজুলের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক শান্ত। দুই প্রান্ত থেকে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল আক্রমণ চালিয়ে কিউই ব্যাটারদের চাপে ফেলে দেন। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মিরাজের বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন ডেভন কনওয়ে। পরের ওভারে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের দারুণ ক্যাচ অপর ওপেনার টম ল্যাথামকে সাজঘরের পদ দেখায়, তাকে ফেরান সিলেট টেস্টের নায়ক তাইজুল।
দুই ওভার বিরতির পর তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার হন হেনরি নিকোলস। মিডঅনে লম্বা শট খেলতে গিয়ে শরিফুলের দারুণ ক্যাচ হন কিউই এই ব্যাটার। এরপর মিরাজের অফস্টাম্পের বাইরে হালকা লাফিয়ে উঠা বল খেলতে গিয়ে শট লেগে ক্যাচ দেন কেন উইলিয়ামসন। সেই ক্যাচ ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেন দীপু। তাতেই মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হিসেবে সাজঘরে ফেরেন উইলিয়ামসন। একই ওভারের চতুর্থ বলে টম ব্লান্ডেলকে ফেরান বাংলাদেশি স্পিনার।
এরপর আলোকস্বল্পতার কারণে দিনের ৮.২ ওভার আগেই প্রথম দিনের খেলা বন্ধ করে দেন দুই ফিল্ড আম্পায়ার। তাতে ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করে সফরকারী নিউজিল্যান্ড। ১১৭ রান পিছিয়ে থেকে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন শুরু করবে কিউইরা।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে অফস্পিনার মিরাজ ১৭ রান খরচায় শিকার করেন তিনটি উইকেট। এছাড়া ২৯ রান খরচায় তাইজুলের পকেটে গেছে দুটি উইকেট।
গুমোট আবহাওয়ার কারণে স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল দিনজুড়েই। তারপরও আলোকস্বল্পতায় খেলা শেষ করতে হয়েছে বিকেল সোয়া চারটায়।