বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে ব্রাজিলের বিদায়ের পর মানসিকভাবে ভেঙে পরেছিলেন রিচার্লিসন স্ট্রাইকার রিচার্লিসন। এমনকি ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছিলেন তিনি। শেষপর্যন্ত মনোবিদের সাহায্যে কাটিয়ে ওঠেন এই পরিস্থিতি।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে টটেনহ্যাম হটস্পারের রিচার্লিসনের মানসিক বিষণ্ণতার বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল। ওই ম্যাচে ৫-১ গোলের জয় পায় ব্রাজিল। তবে তাকে খেলার মাঝে উঠিয়ে নেওয়া হয়। তখন ডাগআউটে বসে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল এই ফরোয়ার্ডকে। তার কান্নার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে হাস্যরসও করে। এরপরই মনোবিদের শরণাপন্ন হন।
২৬ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় ব্রাজিলের হয়ে ৪৮ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। তার মতে, খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিৎ।
ইএসপিএন ব্রাজিলকে রিচার্লিসন বলেছেন, আগে থেকেই মানসিক বিষণ্ণতা চলছিল। ২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। এরপরই নিজের মানসিক পরিবর্তন টের পান তিনি।
তিনি বলেন, “মাত্রই বিশ্বকাপ খেললাম তখন, নিজের খেলার চূড়ায় ছিলাম। সামর্থ্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে যাচ্ছিলাম… জানি না আসলে… নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা বলছি না আমি, তবে বিষন্নতায় ভুগছিলাম তখন এবং সব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম।”
“আমার মতো একজন মানুষ, যাকে মনে হতো মানসিকভাবে ভীষণ শক্ত… বিশ্বকাপের পর মনে হচ্ছিল, সবকিছু চুরমার হয়ে গেছে।”
২০২২ সালে ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডে (৭৫.৬৮ মিলিয়ন ডলার) এভারটন থেকে টটেনহ্যাম হটস্পারের যোগ দেন। এই মৌসুমে ২৬ ম্যাচে ১১ গোল করেছেন।
জানান, ওই সময়ে খেলাই ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। রিচার্লিসন বলেন, “অনুশীলনে যাওয়ার আগে আমার মনে হতো, বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভালো। বাড়িতে ফিরে গিয়ে নিজের ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে হতো আমার… জানি না মাথার ভেতর কী চলছিল। এমনকি বাবার কাছে গিয়েও বলেছি যে, আমি (খেলা) ছেড়ে দিতে চাই।”
“বিশ্বকাপের পর যেসবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম আমি… বাবার সঙ্গে এসব কথা বলা ছিল খুবই দুঃখজনক। যে ছিল আমার পথচলার সঙ্গী এবং একসঙ্গেই স্বপ্নটাকে তাড়া করেছি আমরা… তার কাছে গিয়ে বলা যে, ‘বাবা, আমি (খেলা) ছেড়ে দিতে চাই’… পুরো পাগলাটে ব্যাপার ছিল এটা।”
এমন পরিস্থিতিতে মনোবিদের কাছে যাওয়া সেরা সিদ্ধান্ত ছিল বলে জানান তিনি।
রিচার্লিসন বলেন, “থেরাপিস্ট তখন আমাকে বাঁচিয়েছে… পছন্দ করুন আর না করুন, আমার জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি। তখন আমি স্রেফ আজেবাজে কথাই ভেবেছি…।”
তিনি বলেন, “কারও যদি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন মনে হয়, তাহলে যাওয়া উচিত, কারণ কারও কাছে এভাবে খোলামেলা হওয়া, মন খুলে কথা বলা, এসব খুবই জরুরি এই সময়ে।”
এই সাক্ষাৎকারের পর রিশার্লিসনের ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পার ও তার সাবেক ক্লাব এভারটন সামাজিকমাধ্যমে জানায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে তার পাশে আছে তারা।
এবারের ফিফা উইন্ডোতে ব্রাজিলের দুই ম্যাচেই রিচার্লিসন ছিলেন বেঞ্চে। তবে এমন সাক্ষাৎকারে আলোচনায় আছেন ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকার।
মার্সিসাইড ক্লাব এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেছে, “আমরা আমাদের প্রাক্তন ফরোয়ার্ড রিচার্লিসনের প্রতি আমাদের শক্তিশালী সমর্থন প্রকাশ করি। আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এবং সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তার গুরুত্বপূর্ণ বার্তাকে শক্তিশালী মনে করি। এটা গুরুত্বপূর্ণ।”
এতে ক্লাবটি বলেছে, “প্রতিটি এভারটোনিয়ান তোমার সাথে আছে, রিচি।”