লিগ পর্বে শীর্ষে থাকা কলকাতা নাইট রাইডার্স শিরোপা ঘরে তুলেই শেষ করল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের (আইপিএল) এবারের আসর।
রবিবার (২৬ মে) রোতে চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ১০ বছর পর শিরোপা ঘরে তুলল কলকাতা।
এবারের পুরো আসরে রানের তাণ্ডব চালোনা সানরাইজার্স ফাইনালে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১১৩ রানে গুটিয়ে যায়। যা এখন পর্যন্ত আইপিএলের ১৭ ফাইনালের মধ্যে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ তো বটেই; ফাইনালে কোনো দলের প্রথমবার অলআউট হওয়ার ঘটনাও। ১১৪ রানের লক্ষ্যটা কলকাতা ছুঁয়ে ফেলে ৫৭ বল আর ৮ উইকেট হাতে রেখে।
বলিউড কিংবদন্তি শাহরুখ খানের মালিকানাধীন দলের এটি তৃতীয় আইপিএল শিরোপা। এর আগের দুটি জিতেছিল ২০১২ ও ২০১৪ সালে।
এবারের পুরো আসরেই দুর্দান্ত খেলেছে কলকাতা। লিগ পর্বের ১৪ ম্যাচের মধ্যে সবার চেয়ে কম মাত্র তিন ম্যাচ হেরেছে তারা।
আর দুর্দান্ত এই সাফল্যের পেছনে উঠে এসেছে আরেকজনের নাম। তিনি গৌতম গম্ভীর। ভারতের জাতীয় দলের সাবেক এই তারকা ব্যাটারের নেতৃত্বেই ২০১২ ও ২০১৪ সালে আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কলকাতা। খেলোয়াড়ি জীবনে সফল গৌতম গম্ভীর পরামর্শক হিসেবেও বেশ ভালো করছেন। আইপিএলের সর্বশেষ দুই আসরে লক্ষ্ণৌ সুপার কিংসের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আর এই দুবারই প্লে-অফ পর্বে ওঠে অপেক্ষাকৃত নবীন ফ্র্যাঞ্চাইজি লক্ষ্ণৌ।
এদিকে গত ৯ মৌসুমেও কোনো শিরোপা জিততে না পারায় এবার শেষ পর্যন্ত গম্ভীরের দ্বারস্থ হন শাহরুখ খান। অবশেষে নিজের পুরোনো ডেরা কলকাতায় ফেরেন গৌতম গম্ভীর। পরামর্শকের দায়িত্ব নেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের। আর তাতেই যেন বদলে গেল সব। একচেটিয়া আধিপত্যে শিরোপা জিতে নিল কলকাতা। আর আইপিলে কলকাতার তিন শিরোপার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকল গৌতম গম্বীরের নাম।
ফাইনালে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেই বড়সড় ধাক্কা খায় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। শুরুতেই স্টার্কের আগুনে বোলিংয়ের শিকার হন অভিষেক শর্মা (২)। পরের ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ট্র্যাভিস হেডকে সাজঘরে পাঠান ভাইভাভ আরোরা। ইনিংসের ৫ম ওভারে আবার স্টার্কের আঘাত। ১৩ বলে ৯ করে ফেরেন আগের ম্যাচের নায়ক রাহুল ত্রিপাঠি।
হায়দ্রাবাদ শিবিরে চতুর্থ আঘাত হানেন কলকাতার হর্ষিত। তার বলে খোঁচা দিয়ে ১৩ রানে সাজঘরে ফিরলেন নীতিশ রেড্ডি। এরপর কিছুটা ধীরে খেলেন ক্লাসেন এবং মার্করাম। তবে কলকাতার বোলিং তোপে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি এই জুটি। দলীয় ৬২ রানে মার্করামকে স্টার্কের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান আন্দ্রে রাসেল। ২৩ বলে ২০ রান করেন মার্করাম।
এরপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি হায়দ্রাবাদ। ৮ রানে শাহবাজ, ৪ রানে আব্দুল সামাদকে হারায় তারা। দলীয় ৯০ রানে হায়দরাবাদের ভরসা ক্লাসেনকে বোল্ড করেন হর্ষিত। ১৭ বলে ১৬ রান করেন তিনি।
একসময় দলীয় ১০০ পার হওয়া নিয়েই শঙ্কায় পড়ে যায় হায়দ্রাবাদ। সেখান থেকে তাদের পথ দেখান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। জয়দেব উনাদকাটকে নিয়ে পার করেন দলীয় শতরান। তাদের জুটি থেকে এসেছিল ২৩ রান। এরপর উনাদকাটের পর ফিরে যান প্যাট কামিন্সও (২৪)। রাসেলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দেন অজি এই অলরাউন্ডার। তাতেই ১৮.৩ ওভারে অলআউট হয়ে ১১৩ রানে শেষ হায়দ্রাবাদের ইনিংস।
আইপিএলের ফাইনালে এটিই যেকোনো দলের জন্য সর্বনিম্ন স্কোর। ২০১৩ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ১৪৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১২৫ রানে আউট হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস।
কলকাতার পক্ষে আন্দ্রে রাসেল শিকার করেন তিনটি উইকেট। এছাড়া দুটি করে উইকেট পান মিচেল স্টার্ক ও হর্ষিত রানা, একটি করে উইকেট শিকার করেন ভাইভাভ আরোরা, সুনীল নারিন ও বরুণ চক্রবর্তী।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই নারিনকে হারায় কলকাতা। শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ভেঙ্কাটেশ আইয়ার। গুরবাজ ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করতে থাকলেও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন ভেঙ্কাটেশ। স্রেফ ৪৫ বলে ৯১ রানের জুটি গড়ে দলকে তারা নিয়ে যান জয়ের কাছাকাছি।
নবম ওভারে শাহবাজের বলে এলবিডব্লিউ হন গুরবাজ। ৩২ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। একটু পর ২৪ বলে ফিফটির দেখা পান ভেঙ্কাটেশ। আর নিশ্চিত করেন দলের জয়ও। ২৬ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৩ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন শ্রেয়াস আইয়ার।