দারুণ সব ফুটবলারে ভরা অসাধারণ ভারসাম্যের আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে কেমন খেলবে বার্সেলোনা-তা নিয়ে দলটির সমর্থকদের অনেকেই ছিলেন সংশয়ে। তবে চলতি মৌসুমের প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও দলটির বিপক্ষে হতাশা সঙ্গী হয়েছে কাতালান জায়ান্টদের।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বার্সেলোনার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে কোপা দেল রের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-৪ গোলে ড্র করেছে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।
ম্যাচের প্রথম ৬ মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছেয়ে পড়েছিল দিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা। কিন্তু শেষের দিকে বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের সমন্বয়হীনতা আর রক্ষণের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সমতায় ফেরার স্বস্তি নিয়েই মাঠ ছেড়েছে মাদ্রিদের দলটি।
অপরদিকে, ৪-২ গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষ মুহূর্তে সেই ব্যবধান খোয়ানোয় বার্সেলোনার সঙ্গী হয়েছে হতাশা।
পরের লেগের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আতলেতিকোর মাঠে। ফলে এই ড্রয়ের পরে ঘরের মাঠে নিজ সমর্থকদের সামনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ থাকবে তাদের।
ম্যাচ শুরু হতেই এদিন স্বাগতিকদের চেপে ধরে গোল আদায়ের চেষ্টা করে আতলেতিকো মাদ্রিদ, তাতে দারুণ সাফল্য পায় দলটি। প্রথম মিনিটেই আন্তোয়ান গ্রিজমানের ক্রসে বার্সার ডি-বক্সের ভেতর থেকে হেডারে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করেন হুলিয়ান আলভারেস, কিন্তু বল ক্রসবার ঘেঁষে জালের ঢোকার আগমুহূর্তে তা ক্লিয়ার করেন ভয়চিয়েখ স্টান্সনি।
তবে পরের মুহূর্তে আর জাল অক্ষত রাখতে পারেননি বার্সার এই পোলিশ গোলরক্ষক। কর্নার থেকে ছোট পাসে বল পেয়েই গোলমুখে উড়িয়ে দেন গ্রিজমান, এরপর দূরের পোস্টের কাছ থেকে হেডারে ঠিকানা খুঁজে নেন আলভারেস।
প্রথম মিনিটেই গোল হজম করার পর সমতায় ফেরায় মনোযোগ দেয় বার্সেলোনা। তবে তাদের হাই ডিফেন্স লাইন ভেঙে ষষ্ঠ মিনিট পড়তেই আরও এক গোল করে এগিয়ে যায় আতলেতিকো মাদ্রিদ।
এবারও সেই আলভারেস-গ্রিজমান যুগলবন্দি, তবে এবারের গোলটি করেন গ্রিজমান। আলভারেসের ডিফেন্সচেরা পাস ধরে এগিয়ে গিয়ে খানিকটা এগিয়ে আসা স্টান্সনিকে বোকা বানান ফরাসি তারকরা।
দ্বিতীয় গোল হজম করার পর বার্সেলোনার সমতায় ফেরার চেষ্টা ব্যবধান কমানোয় রূপ নেয়। এ সময় থেকে বলের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে ফ্লিকের শিষ্যরা। এর ধারাবাহিকতায় দ্বাদশ মিনিটে গোলের পরিষ্কার একটি সুযোগও আসে তাদের সামনে, কিন্তু আতলেতিকো গোলরক্ষক হুয়ান মুসোকে একা পেয়েও বল জালে পাঠাতে ব্যর্থ হন লেভানডোভস্কির পরিবর্তে একাদশে জায়গা করে নেওয়া ফেররান তোরেস।
তবে সাত মিনিট পর অপ্রতিরোধ্য বার্সেলোনাকে আর আটকে রাখতে পারে না আতলেতিকোর জমাট রক্ষণ। বাঁ দিকে দলটির দুই খেলোয়াড়কে ড্রিবল করে এগোতে থাকা জুল কুন্দের উদ্দেশে পাস বাড়ান লামিন ইয়ামাল। এরপর বল নিয়ে গোললাইন ধরে বক্সের দিকে কিছুটা গিয়েই ক্রস দেন কুন্দে। সেই ক্রস ধরে নিপুণতার সঙ্গে জাল খুঁজে নেন পেদ্রি।
গোল পাওয়ার পর প্রতিপক্ষের ওপর এমন চাপ তৈরি করে কাতালানরা, যে তাদের আক্রমণ আর চাপে দিশেহারা হয়ে যায় আতলেতিকো মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা। একে তো তারা বলই পাচ্ছিল না, তারপর কোনো কোনো সময় বল ধরলেও বার্সার খোলোয়াড়দের দুর্দান্ত চাপে খেই হারিয়ে আবার পজেশন হারাচ্ছিল তারা।
এর ফলস্বরূপ দুই মিনিট পরই সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। কর্নার থেকে রাফিনিয়ার পাঠানো ক্রসে গোলমুখ থেকে ঠিকানা খুঁজে নেন পাউ কুবারসি। এটি ছিল বার্সেলোনার জার্সিতে এই তরুণ ডিফেন্ডারের প্রথম গোল।
সমতায় ফেরার পর শুরু হয় বার্সার এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা। এভাবে অন্তত ২০ মিনিট চলার পর কর্নার থেকে তৃতীয় গোলটি আদায় করে সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।
৪১তম মিনিটে আবারও সেই রাফিনিয়ার ওড়ানো কর্নার কিক যখন কোনো বাধা ছাড়াই দূরের পোস্ট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎ করে ছুটে গিয়ে পোস্টের কাছ থেকে দুর্দান্ত হেডারে গোল করেন ইনিগো মার্তিনেস।
এরপর যোগ করা পাঁচ মিনিটের শেষ মিনিটে আরও একবার মুসোর পরীক্ষা নেন দানি অলমো, তবে এবার শটটি প্রতিহত করেন তিনি। ফলে স্কোরলাইন ০-২ থেকে ৩-২ এ পরিণত করে বিরতিতে যায় ফ্লিকের দল।
এর ফলে আতলেতিকো মাদ্রিদের সঙ্গে চলতি মৌসুমে দুবারের দেখাতেই জয়বঞ্চিত রইল বার্সেলোনা। গত ডিসেম্বরে লা লিগায় এর আগের ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেছেল সিমিওনের শিষ্যরা।
সেই ম্যাচেও যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জেতান সোরলথ। দ্বিতীয় ম্যাচে তার গোলেই শেষ মুহূর্তে হার এড়িয়েছে তার দল।
কোপা দেল রের দ্বিতীয় লেগে আগামী ২ এপ্রিল রিয়াদ এয়ার মেত্রোপলিতানোয় খেলতে যাবে বার্সেলোনা। অবশ্য তার আগে আরও একবার মুখোমুখি হবে দুই দল। আগামী ১৭ মার্চ লা লিগার ফিরতি লেগে বার্সেলোনাকে আতিথ্য দেবে আতলেতিকো মাদ্রিদ।
কোপা দেল রের অপর সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বুধবার রাতে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ।