একটা জবাব কিন্তু নেইমার মাঠের খেলা দিয়েই দিতে পারেন, ম্যাচ জিতে-ট্রফি জিতে।
মেসি-রোনালদোর পর বিশ্ব ফুটবলের পরবর্তী সময়ের রাজা হিসেবে অনেক দিন ধরেই নেইমারের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। নিজের মাঠে হতাশার ২০১৪ বিশ্বকাপ। এই দুঃস্বপ্নকে বিস্মৃত করে হেক্সা জয়ের স্বপ্নের ভার নিজের কাঁধেই বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন রাশিয়া। কিন্তু রাজকুমারের রাজ-অভিষেক তো হলই না বরং আলোচনায় এসেছেন সব অফুটবলীয় কারণে। উদ্ভট চুলের ছাট আর ডাইভিং-এর করা হয়েছে বিদ্রূপাত্মক ট্রল।
বিশেষ করে সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে টাচলাইনে নেইমারের ডান পা ধরে কাতরানোর ওই দৃশ্যটি নিয়ে কম ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা হয়নি। সেই সাথে নেইমারের অহেতুক ডাইভ নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হয়েছে বিস্তর ‘মিম’। বলাবাহুল্য, বিশ্বকাপ শেষ হতেই এই খোয়া যাওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য অগ্নিপরীক্ষাই দিতে হবে নেইমারকে ।
এসবের একটা জবাব কিন্তু নেইমার মাঠের খেলা দিয়েই দিতে পারেন, ম্যাচ জিতে-ট্রফি জিতে। সে কাজটা যে তিনি বেশ করেই পারেন, ব্রাজিল-স্পেন-ফ্রান্সে জেতা লিগ, বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা এসবেরই প্রমাণ। কিন্তু মাঠের বাইরে নিজের নামটা আবারো আগের জায়গায় আনাই নেইমারের আসল চ্যালেঞ্জ।
ব্রাজিলের খেলোয়াড় কাকার জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ দিয়েগো কতসো নেইমারের বর্তমান অবস্থা বোঝাতে গিয়ে বললেন, ‘যোগাযোগের কথা যদি বলি, তবে নেইমার বেশ বড় সমস্যায় আছে। অন্য অনেক অ্যাথলেটের মতো সে-ও খারাপ সময়ে কাউকে পাশে পাচ্ছে না। এমনিতে নেইমারকে সবাই আগলে রাখে, নিজে থেকে কিছু বলে না। ওর হয়ে ওর মা-বাবা, বোন, প্রেমিকারা কথা বলে। (নেইমার) যা বলে সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা কোনো সাক্ষাৎকারেই। এতে করে ভক্ত-সমর্থকদের সঙ্গে তাঁর একটা দূরত্ব রয়েই যায়।’ বাজে সময় কাটানোর উপায়টাও জানিয়েছেন কতসো। তাঁর মতে, নেইমারকে সবাই ভুল বোঝে। আসল নেইমারকে বোঝানোর দায়িত্বও নেইমারেরই, ‘নেইমারকে এখন মনের কথা বলতে হবে। মানুষের সামনে আসল নেইমারকে তুলে ধরার দায়িত্ব তারই।’
কতসো সতর্ক করেছেন, নেইমারের কাণ্ডকারখানা তাঁকে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মাঠের বাইরের আচরণে খেলোয়াড়দের থেকে পৃষ্ঠপোষকদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কতসো তাই বললেন, ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের খেলোয়াড়েরা ফুটবল খেলে যা আয় করে, তা থেকে অনেক গুণ বেশি আয় করে ইমেজ স্বত্ব থেকে। স্পনসরদের অনাগ্রহেই হয়তো তার টনক নড়বে।’
বিশ্বকাপে নেইমারের পারফরম্যান্স বিস্তর সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে ইতোমধ্যে তাকে ‘বখে যাওয়া’ ও ‘আত্মপ্রেমী’ বলেও অপবাদ দিয়ে ফেলেছে। এসব অপবাদ-উপহাস ঝেড়ে ফেলতে হবে শিঘ্রই। কিন্তু এর জন্য ভালো খেললেই চলছে না, সমর্থকদের আদরের পুরোনো ‘নেইমি’ হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জটাও নিতে হবে গুরুত্বের সাথে।
মতামত দিন