বর্তমান সময়ে বিশ্বের শীর্ষ জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপস রয়েছে যেগুলোকে আমরা বর্তমানে যেমন দেখি তা প্রতিষ্ঠাকালে মোটেও এমন ছিল না। এসব ওয়েবসাইট ও অ্যাপস যে উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, সময়ের সাথে ও গ্রাহক চাহিদায় তা আমূল বদলে গেছে। এই প্রতিবেদনে এমন ১০টি ওয়েবসাইট ও অ্যাপসের তালিকা তুলে ধরা হলো যার শুরু ও বর্তমান রূপের অনেক ব্যবধান।
ইউটিউব ছিল ডেটিং ওয়েবসাইট
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব। কিন্তু সাইটটির তিন প্রতিষ্ঠাতা চ্যড হারলি, স্টিভ চ্যান ও বাংলাদেশি বংশদ্ভুত জাওয়েদ করিম ইউটিউবকে মূলত ডেটিং ওয়েবসাইট হিসেবে তৈরি করেন। তারা চেয়েছিলেন ব্যবহারকারীরা তাদের সম্পর্কে ভিডিও আপলোড করবেন এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের পার্টনার খুঁজে নেবেন। কিন্তু প্রথম কয়েক মাসে কোনো নারীই তাদের ভিডিও আপলোড করেননি। এমনকি ভিডিও আপলোডের শর্তে ২০ ডলার দেওয়ার প্রস্তাবেও তাদের পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখেনি। তাই বাধ্য হয়েই উদ্যোক্তারা সব ধরনের ভিডিও আপলোডের জন্য ইউটিউবকে উন্মুক্ত করে দেয়।
ছবি শেয়ারিং অ্যাপ ছিল না ইন্সটাগ্রাম
ইন্সটাগ্রামকে আমরা ছবি শেয়ারিং অ্যাপস হিসেবেই জানি। কিন্তু শুরুতে এর নাম ছিল বার্বন। যৌথভাবে এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেভিন সিস্ট্রোম ও মাইক ক্রিজার। এরমধ্যে কেভিন সিস্ট্রোম বার্বন নামের একটি হুইস্কি খেতে পছন্দ করতেন। হুইস্কির নামেই তিনি অ্যাপসটির নামকরণ করেন বার্বন। প্রাথমিকভাবে এর উদ্দেশ্য ছিল, ব্যবহারকারীরা যেন কোথায়ও বেড়াতে গিয়ে, আড্ডা দিতে দিতে ছবি তুলে চেকইন দিতে পারে। কিন্তু এর ব্যবহার প্রক্রিয়া খুবই জটিল হওয়ায় বার্বন প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়। সিস্ট্রোম খেয়াল করেন যে, ব্যবহারকারীরা অ্যাপসটির অন্যান্য ফিচারের চেয়ে ছবি দিতেই বেশি আগ্রহী। পরবর্তী সময়ে এটি ছবি শেয়ারিং অ্যাপস ইন্সটাগ্রামে রূপান্তর করা হয়।
ম্যাসেজিং অ্যাপস ছিল না হোয়াটস অ্যাপস
স্মার্টফোনের একটি জনপ্রিয় ম্যাসেজিং অ্যাপস হোয়াটসঅ্যাপ। ২০০৯ সালে ইয়াহুর সাবেক কর্মী ব্রায়ান অ্যাক্টন ও জান কউম যৌথভাবে হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করেন। তারা উভয়েই চেয়েছিলেন আইফোনের জন্য এমন একটি অ্যাপস বানাতে যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর নামের পাশে তার স্ট্যাটাস লেখার সুযোগ থাকবে। এছাড়া এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী অপর একজন ব্যবহারকারীকে তথ্যও পাঠাতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এটি ম্যাসেজিং অ্যাপসে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এই অ্যাপসের মাধ্যমে চ্যাটিং, অডিও ও ভিডিও কলসহ নানারকম সুবিধা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করতে চেয়েছিল উইকিপিডিয়া
উইকিপিডিয়া একটি মুক্ত ও অলাভজনক বিশ্বকোষ যেখানে ৩০১টি ভাষায় পৃথিবীর প্রায় সব ধরনের তথ্য পাওয়ায় যায়। ২০০১ সালে এর প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস এবং ল্যারি স্যাঙ্গার উইকিপিডিয়া চালু করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা আয় করা। তারা ভেবেছিল বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আয়কৃত টাকা দিয়ে সাইটটির সব ধরনের খরচ তুলে লাভ করতে পারবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ওয়েবসাইটটি লাভের মুখ দেখেনি। যদিও তারা ২০০২ সালে উইকিপিয়াতে বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ করেন এবং এটিকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলেন। বর্তমানে এই ওয়েবসাইটটি দাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।
চকলেট বেচাকেনার জন্য বানানো হয়েছিল ইবে
“ইবে” ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছিল চকলেট বিক্রির উদ্দেশে। ১৯৯৪ সালে পিয়ারার তার গার্লফ্রেড পামেলার সঙ্গে দেখা করেন। পামেলা বিশেষ ধরনের চকলেটের ব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে পিয়ারা চকলেটের ব্যবসা সহজ করতে ইবে তৈরি করেন। প্রাথমিকভাবে সাইটটিতে চকলেটই বেচাকেনা হতো। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ইবে নিত্য ব্যবহার্য প্রায় সকল পণ্যের ওয়েবসাইটে পরিণত হয়।
ছবি তুলনা করার জন্য তৈরি হয়েছিল ফেসবুক
২০০৩ সালে মার্ক জাকারবার্গ যখন ফেসবুক তৈরি করেন তখন এর নাম ছিল ফেসম্যাশ। এই সাইটটির মাধ্যমে ওয়েবসাইটে দু’জনের ছবি আপলোড দিয়ে তার তুলনা করা হতো। এই সাইটটি প্রথমদিকে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই এই সাইটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন - জেনে নিন বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত দশটি মোবাইল অ্যাপস
২০০৪ সালে জাকারবার্গ প্রায় একই রকম আরেকটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন যার নাম দেন দ্য ফেসবুক। এই সাইটে ফেসম্যাশের সুবিধাসহ আরো কিছু ফিচার যোগ করা হয়। এই সাইটটিই ফেসবুক নামে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
ফ্লিকার
ছবি, ভিডিও ও মেসেজ শেয়ারিংয়ের জন্য ফ্লিকার বেশ জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। ২০০৪ সালে স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ড ও তার স্ত্রী ক্যাটরিনা ফ্যাক ফ্লিকার তৈরি করেন। প্রাথমিকভাবে তারা একটি ভার্চুয়াল গেম তৈরি করেন তার শিরোনাম ছিল “গেম নেভারএন্ডিং”। ফ্লিকার ছিল মূলত এই গেমসের সাইড প্রজেক্ট। পরবর্তী সময়ে বাটারফিল্ড দম্পতি ফ্লিকারে ছবি, ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এমনকি চ্যাটিংয়ের সুযোগও চালু করেন।
টুইটার
২০০৬ সালের টুইটারের জ্যাক ডর্সি আনুষ্ঠানিকভাবে টুইটারের উদ্বোধন করেন। ডর্সির পরিকল্পনা ছিল এটি হবে এমন একটি সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট যেটিতে আপডেটের মাধ্যমে তথ্য বা মেসেজ আদান-প্রদান করা যাবে। কিন্তু ডর্সির এই পরিকল্পনা শুরুতেই ধাক্কা খায়। পরবর্তী সময়ে উইলিয়াম স্টোন নামের অপর এক ব্যবসায়িক অংশীদার টুইটারে বিভিন্ন রকম অ্যাপসসহ নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। স্টোনের ওই পরীক্ষা-নিরীক্ষাই টুইটার বর্তমান রূপ পেয়েছে।
ভয়েস কল করার জন্যই তৈরি হয়েছিল ফেসটাইম
অ্যাপল কর্পোরেশনের অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় অ্যাপের মতো আরেকটি অ্যাপ ফেসটাইম। এর প্রাথমিক কাজ ছিল ম্যাক কম্পিউটারের মাধ্যমে ভয়েস কল করা।
রবার্তো গ্রাসিয়া নামে একজন অ্যাপল কর্মী এই অ্যাপসটি তৈরি করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটি জনপ্রিয় ভিডিও কলিং অ্যাপস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে ভিডিও কলিং চলাকালে গেমস খেলারও সুবিধা যুক্ত হয়েছে। ২০১০ সালের মাঝামাঝি মুঠোফোনে ভিডিও কলিং অ্যাপস ফেসটাইম উন্মুক্ত করে অ্যাপল। এর মাধ্যমে অফলাইনে থাকা অপর প্রান্তের ব্যবহারকারীকেও ভিডিও বার্তা পাঠানো যেতো। এরপর ধীরে ধীরে নতুন সব ফিচার সংযুক্ত হয়েছে এই অ্যাপে।
বই বিক্রির ওয়েবসাইট ছিল অ্যামাজন
জাফ বেজোস ১৯৯৫ সালে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন বছর এই ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে তিনি শুধু বই ও গানের সিডি বিক্রি করতেন। ১৯৯৮ সালে বেজোস ওয়েবসাইটটিকে আরো সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা করেন। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জাংলি কর্পোরেশন নামের একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সঙ্গে চুক্তি করেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। অ্যামাজনের পরিসর বিশ্বব্যাপী দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। একটি বই বিক্রির ওয়েবসাইটটিই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স ওয়েবসাইট হিসেবে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে।