প্রায় ছয় ঘণ্টার জন্য ফেসবুকসহ স্যোশাল মিডিয়ার আরও কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করতে পারেননি ব্যবহারকারীরা। এই বিভ্রাটের জন্য “ত্রুটিপূর্ণ কনফিগারেশন পরিবর্তন”-কে দায়ী করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (৪ অক্টোবর) ঘটা এই বিভ্রাটের জন্য বিশ্বের প্রায় ৩৫০ কোটি ব্যবহারকারী হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং মেসেঞ্জারের মতো মেসেজিং পরিষেবাগুলো ব্যবহার করতে পারেননি।
তবে কনফিগারেশন পরিবর্তন কারা করেছে এবং এটি পরিকল্পিত ছিল কি-না সে বিষয়ে সোমবারের শেষ দিকে দেওয়া ব্লগ পোস্টেও ফেসবুক নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ফেসবুক কর্মী রয়টার্সকে বলেছে, ইন্টারনেট ট্রাফিক কীভাবে সিস্টেমে রুট করে, সে ধরনের কোনো অভ্যন্তরীণ ভুলের কারণেই এই বিভ্রাট ঘটেছে।
কর্মীরা বলেন, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ সরঞ্জাম এবং অন্যান্য সম্পদের ব্যর্থতা একই নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করলে তা ত্রুটিকে আরও জটিল করে তোলে।
তবে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অসাবধানতাবশত ভুল বা একজন ভেতরের কারও অপকর্ম উভয়ই কারণেই এমনটি হতে পারে।
ব্লগে ফেসবুক জানায়, আমরা বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাই যে এই বিভ্রান্তির মূল কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ কনফিগারেশন পরিবর্তন।
“প্রতিটি ছোট এবং বড় ব্যবসা, পরিবার এবং ব্যক্তি যারা আমাদের উপর নির্ভর করে, আমরস দুঃখিত,” ফেসবুকের চিফ টেকনোলজি অফিসার মাইক শ্রোফার এক টুইট বার্তায় জানান।
তবে, ওয়েব মনিটরিং গ্রুপ ডাউনডিটেকটর দ্বারা বিভ্রান্তি এখন পর্যন্ত ফেসবুকে সবচেয়ে বড় বিভ্রাট।
বিশ্বে যখন টুইটার এবং টিকটকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপগুলোর দিকে ঝুঁকছে, তখন সোমবার, গত নভেম্বরের পর থেকে ফেসবুক সবচেয়ে বড় দৈনিক পতন (৪.৯%) দেখল।
তবে, পরিষেবা পুনরায় শুরু হওয়ার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেয়ার প্রায় অর্ধেক বেড়েছে।
হার্ভার্ডের বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির পরিচালক জোনাথন জিট্রেন টুইটে বলেন, “ফেসবুক মূলত তার গাড়ির চাবি বন্ধ করে দিয়েছে।”
এদিকে, ফেসবুক বিভ্রাট চলাকালে সোমবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে টুইটার। যার ফলে টুইটারে কিছু পোস্ট এবং সরাসরি বার্তা পাঠাতে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন পরিমাপ সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড মিডিয়া ইনডেক্সের অনুমান অনুসারে, গুগলের পরে বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন বিজ্ঞাপন বিক্রেতা ফেসবুক বিভ্রাট চলাকালে প্রতি ঘণ্টায় ৫ লাখ ৪৫ হাজার ডলার বিজ্ঞাপন আয় হারিয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সোমবার রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে হঠাৎই ডাউন হয়ে যায় ইনস্টাগ্রাম, ওয়ার্কপ্লেস টুলস এবং অভ্যন্তরীণ প্রোগ্রামসহ ফেসবুকের পরিষেবাগুলো। পরে দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে অ্যাক্সেস ফিরতে শুরু করে।
ফেসবুকের ওয়েবপেজে ত্রুটি বার্তাটি ডোমেইন নেম সিস্টেম (ডিএনএস) নামে দেখা দিয়েছিল।
এর আগে ক্লাউড কোম্পানি আকামাই টেকনোলজিস ইনকর্পোরেটেডের অনুরূপ একটি বিভ্রাটের কারণে জুলাই মাসে একাধিক ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়।
রবিবার ফেসবুকে প্রোডাক্ট ম্যানেজার ফ্রান্সেস হাউজেন জানান, সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে “কিশোরীদের ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারে ক্ষতি” বিষয়ক একটি তদন্ত এবং মার্কিন সেনেটের শুনানীর জন্য তিনি নথি সরবরাহ করেছিলেন।
রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী, হাউজেন মঙ্গলবার একই সেনেট উপ-কমিটিকে তামাকের কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনুরোধ করেছিল।