Saturday, March 22, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

ল্যাটিন দেশ পেরুর বৈচিত্র্যময় নির্বাচন ব্যবস্থা

তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রটিতে বিরাজমান স্বচ্ছ রাজনীতি যেকোনো দেশের জন্য অনুকরণীয়

আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০৩ এএম

ভ্রমনপিপাসু ও জ্ঞানসন্ধিৎসু মানুষের কাছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরু এক আশ্চর্যের নাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় প্রাণীতে ভরপুর দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি।

এর রাজধানীর নাম লিমা এবং প্রধান ভাষা স্প্যানিশ। দেশটির মুদ্রার নাম সল। ত্রয়োদশ শতক থেকে শক্তিশালী ইনকা সাম্রাজ্যের অবস্থান ছিল এই পেরুতে। সেকালে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্যের একটি ছিল ইনকা। ইনকা সাম্রাজ্যের সময় পেরু ছিল প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত রাষ্ট্র। ষোড়শ শতকে পেরু স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ অঞ্চলের এখতিয়ারসহ পেরুতে একটি উপ-সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। 

তিন বছর ধরে চলা আয়াকুচো যুদ্ধের পর ১৮২১ সালে পেরু স্পেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। 

বিরাজমান প্রকৃতির মতোই বৈচিত্র্যময় দেশটির নির্বাচন ব্যবস্থা। তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রটিতে বিরাজমান স্বচ্ছ রাজনীতি যেকোনো দেশের জন্য অনুকরণীয়। দেশটিতে একই সঙ্গে কার্যকর প্রেসিডেন্ট, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী আছে। 

সাধারণত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট অথবা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী-কেন্দ্রিক সরকার বিরাজমান। বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকেন। দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। আর প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

পেরুতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট একজন ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেন। তিনি প্রেসিডেন্টকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন। প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে তিনিই রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। আর মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। পেরুর মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ১৮। প্রধানমন্ত্রীকেও মনোনীত করেন প্রেসিডেন্ট। রাষ্ট্রপরিচালনার চাবিকাঠি প্রেসিডেন্টেরই হাতে।

বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একাধিক রাজনৈতিক সংগঠন থাকলেও প্রধানত দুটি শক্তিশালী দলকে কেন্দ্র করেই ক্ষমতার পালাবদল হয়। কিন্তু পেরুতে এমন শক্তিশালী প্রধান রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১০টির মতো। গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থায় সরকার গঠন করতে হলে একক রাজনৈতিক দল অথবা তাদের জোটকে ৫০%-এর বেশি ভোট পেতে হয়। কিন্তু পেরুতে প্রায় ১২টি প্রধান রাজনৈতিক দল থাকায় কারো পক্ষেই ৫০% ভোট পাওয়া সম্ভব নয়। কোনো দলই পেরুতে সাধারণত ১৩%-এর বেশি ভোট পায় না।

তাই বাধ্য হয়ে সরকার গঠনের স্বার্থে পেরুতে দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়। এই ভোটিং পদ্ধতির পারিভাষিক নাম “রানঅফ ভোটিং” (Runoff Voting)। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থী পুনরায় ভোটের লড়াইয়ে নামেন। বাকি দলগুলোর প্রার্থীরা রানঅফ ভোটিংয়ে অংশ নিতে পারেন না। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ৫০%-এর বেশি ভোট পায় তারা সরকার গঠন করে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দল বা জোট বিরোধীদলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে পেরুকে মেগাডাইভার্স কান্ট্রি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আন্দিজ পর্বতমালা,অ্যামাজন বন,স্বর্ণ,কফি, তামা, টিটিকাকা হ্রদ, স্যাক্রেড ভ্যালির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এসবের পাশাপাশি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর কাছে পেরুর রাজনৈতিক স্বচ্ছতা নিঃসন্দেহে অনুসরণীয় মডেল।

সাবাব সাজিদ 
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
   

About

Popular Links

x