পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের হাতে জিম্মি যাত্রীদের উদ্ধারে অভিযান চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার (১২ মার্চ) সকাল পর্যন্ত ১০৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্তত ১৬ জন সদস্য নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১৭ জন আহত যাত্রী রয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। আহত যাত্রীদের নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
রেডিও পাকিস্তানের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রমতে, অভিযানের কারণে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা এলাকায় অভিযানে অংশ নিচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের একজন মুহাম্মাদ বিলাল বলেন, “আমরা কীভাবে পালাতে পেরেছি তা বর্ণনা করার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এটা ছিল আতঙ্কজনক।”
আরেক যাত্রী আল্লাহদিত্তা জানান, হৃদরোগের সমস্যা থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বর্ণনা করেন, কীভাবে যাত্রীরা আতঙ্কে সিটের নিচে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে।
এর আগে কোয়েটার স্থানীয় রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, ট্রেনের ৮০ জন যাত্রী নিকটতম পানির রেলস্টেশনে হেঁটে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে ছিলেন ১১ জন শিশু, ২৬ জন নারী ও ৪৩ জন পুরুষ।
এক ব্যক্তি, যার শ্যালক ট্রেনে আটকে ছিলেন, সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মুহূর্তের বর্ণনা দেন। তিনি জানান, তিনি এলাকায় গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু রাস্তা বন্ধ থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি।
এদিকে, যাত্রীদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা প্রিয়জনদের সম্পর্কে কোনো খবর পাওয়ার আশায় কোয়েটা রেলস্টেশনের কাউন্টারে ভিড় করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে কোয়েটা থেকে লাহোরগামী এক যাত্রীর ছেলে মুহাম্মদ আশরাফ বিবিসি উর্দুকে জানান, তিনি এখনও তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
অন্য এক যাত্রীর আত্মীয় জানান, তিনি তার চাচাতো ভাই ও তার ছোট সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যম ডনকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় ৯টার দিকে নয় বগির জাফর এক্সপ্রেস খাইবার পাখতুনখওয়ার পেশোয়ার শহরের উদ্দেশে বেলুচিস্তানের কোয়েটা ছেড়ে যায়। দুপুর প্রায় ১টার দিকে তারা খবর পান বেলুচিস্তানের বোলান জেলার পানির ও পেশি রেল স্টেশনের মাঝামাঝি মুশকাফের নিকটবর্তী রেলওয়ে টানেল ৮ এর কাছে ট্রেনটিতে হামলা হয়েছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, “সশস্ত্র ব্যক্তিরা ট্রেনের লোকোমোটিভ লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে ও গুলিবর্ষণ করে, এতে ট্রেনটি থেমে যায়।”
প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা গেছে, হামলাকারীরা ট্রেনটির বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষীকে হত্যা করে ট্রেনটি ছিনতাই করে। তারপর তারা যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষা শুরু করে এবং কিছু যাত্রীকে জিম্মি করে ধরে নিয়ে যায়।
এ হামলার মোট কতজন হতাহত হয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রেনের চালকসহ অন্তত ১০ নিহত হয়েছেন।
এদিকে, বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।