দৈনন্দিন জীবনে শরীরে কাটাছেঁড়া, ক্ষত বিরল ঘটনা নয়। বিশেষ করে শিশুরা ঘনঘন আহত হয়। প্রচলিত ভুল ধারণার বদলে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ক্ষতের চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
শরীরের বেশিরভাগ সাধারণ ক্ষত উদ্বেগের কারণ হয় না। তবে কোন ক্ষতের চিকিৎসা নিজে করা সম্ভব, আর কোন ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত, সেটা জানা জরুরি।
জেনারেল প্র্যাকটিশনার হিসেবে ইলকার আয়দিনের চেম্বারে নিয়মিত এমন রোগী আসেন। যেমন এক নারী সিঁড়ি থেকে পড়ে চোট পেয়েছেন। তিনি জানান, “তিনি এমন আঘাত পেয়েছেন, যার ক্ষত বন্ধ করতে হবে। তবে প্রথমে আমরা কমপ্রেস করছি। সেই লক্ষ্যে চারিদিকে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছি। এভাবে রোগীকে নিশ্চিন্ত মনে হাসপাতালে পাঠানো যায়, যেখানে ক্ষতের চূড়ান্ত চিকিৎসা হয়।”
বেশিরভাগ দুর্ঘটনা সাধারণত এমন জায়গায় ঘটে, যেখানে কোনো ডাক্তার থাকেন না। যেমন শিশুদের ত্বক ঘষে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি হলে কী করা উচিত? ড. ইলকার আয়দিনের পরামর্শ হলো, “হাতে কিছুই না থাকলে কলের পানি দিয়ে ধুইয়ে ফেলা উচিত। এভাবে জীবাণু দূর করা যায়। পরিষ্কার করার পর জীবাণু দূরে রাখতে ক্ষত ঢেকে দিতে হবে। বাসায় কমপ্রেশন প্যাড বা প্লাস্টার থাকলে সেটাই ব্যবহার করা উচিত।”
অর্থাৎ, ক্ষতের চিকিৎসার আগে হাত ভালো করে ধুতে হবে। জীবাণুমুক্ত গ্লাভস পরতে হবে। দ্বিতীয়ত ক্ষত পরিষ্কার করে ডিসইনফেক্ট করতে হবে। অর্থাৎ পরে ক্ষতের প্রদাহ এড়াতে নোংরা দূর করতে হবে। সবার শেষে প্লাস্টার বা ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
ক্ষতের উপর ফু দেওয়া কিন্তু মোটেই ভালো আইডিয়া নয়। কারণ আমাদের মুখের লালার মধ্যে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা ক্ষতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ফু দেওয়া একেবারেই চলবে না।
কাটাছেঁড়া আরও বিপজ্জনক হতে পারে। এমন ক্ষত দিয়ে অতিরিক্ত রক্ত বের হলে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। ড. ইলকার আয়দিন বলেন, “কেটে গেলে ক্ষত কতটা গভীর, তা দেখতে হবে। ত্বকের নীচে মাংস বা হাড়ও কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? টেন্ডন বা শিরা কি আহত হয়েছে? রক্ত পড়া বন্ধ করতে এমন ক্ষত কমপ্রেস করা অত্যন্ত জরুরি। কমপ্রেস করে শক্ত করে জায়গাটা বেঁধে দিলে কাজ হতে পারে।”
ক্ষত নিরাময় সম্পর্কে অসংখ্য ধারণা চালু আছে। যেমন কোনো ক্ষতের উপর নাকি যতটা সম্ভব বাতাস চলাচল করতে দেওয়া উচিত৷। সেটা কি ঠিক? ড. আয়দিন বলেন, “সত্যিকারের ক্ষত সাধারণত বন্ধ রাখা উচিত অথবা সেটির প্রয়োজনমতো চিকিৎসা করা উচিত। প্রথমত আরও জীবাণুর প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত এমন আর্দ্রতা সৃষ্টি হবে, যা ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে।”
সমুদ্রের পানিতে লবণ থাকায় ক্ষতের নিরাময় আরও ভালো হয় বলেও একটা ধারণা চালু রয়েছে। ড. ইলকার আয়দিন মনে করিয়ে দেন, “সমুদ্রের পানি অত্যন্ত সংক্রামক। তাজা ক্ষত নিয়ে কখনোই সমুদ্রের পানিতে প্রবেশ করা উচিত নয়। সেখানে কোনো জীবাণু ক্ষতের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।”
অ্যালকোহলযুক্ত কোনো পানীয় ক্ষত জীবাণুমুক্ত করার জন্য কতটা উপযুক্ত? ড. আয়দিন বলেন, “খাঁটি অ্যালকোহল, যেমন আগেকার দিনের কাউবয় হুইস্কির বোতল খুবই খারাপ। কারণ, সেটি ক্ষতের আশেপাশের জায়গার ক্ষতি করতে পারে। ফলে হিতে বিপরীত হয়।”
বাসায় ক্ষত চিকিৎসার প্রস্তুতি হিসেবে একাধিক প্লাস্টার, কমপ্রেশন প্যাড, ব্যান্ডেজের প্যাকেজ, জীবাণুমুক্ত গ্লাভস এবং ডিসইনফেক্টেন্ট স্প্রে রাখা উচিত।