নয় বছর আগে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়। ছেলের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত আর বিচার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন।
রাজীব হত্যায় আসামিদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় ডা. নাজিম উদ্দিন দুঃখ করে বলেন, “হাইকোর্টের রায়ের পর আর কোনো খবর-টবর রাখি না। আমি যতটুকু শুনেছি, আপিল বিভাগে গেছে। আমরা ফেডআপ হয়ে গেছি।”
আহমেদ রাজীব হায়দার যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর ১০ দিনের মাথায় ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মিরপুরের কালশীতে নিজের বাসার কাছে চাপাতি হামলায় খুন হন। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী রাজীব পেশায় ছিলেন একজন স্থপতি। তিনি উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির স্বরূপ উন্মোচনে অনলাইনে লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন।
নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানির উগ্রবাদী শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ছাত্র মিলে হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। রাজীবের পর পুলিশের তদন্তে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক মিলে আরও কয়েকজনের হত্যাকাণ্ডে আনসারুল্লাহর সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসে পুলিশ তদন্তে।
তিন বছর পর ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজীব হত্যা মামলার রায়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র পলাতক রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসির রায় দেয় ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। বিভিন্ন মেয়াদে আরও ছয়জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে মাকসুদুল হাসান অনিক, এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজের জরিমানাসহ ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আনসারুল্লাহ প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং সাদমান ইয়াসির মাহমুদকে ৩ বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
রাজীব হত্যায় “উসকানিদাতা” হিসেবে রাহমানির সাজা হয়। ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট এই শাস্তিই বহাল রাখে। রাজীবের বাবা কারাদণ্ড পাওয়া আসামিদের শাস্তি বাড়াতে আবেদন করলে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানিতে না থাকায় তা খারিজ হয়ে যায়। আসামিদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় হতাশ বাবা নাজিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, “টাকা-পয়সা খরচ করে মামলা কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে, জেনে কোনো লাভ নেই বরং কষ্ট বাড়ে। ... মামলার যে প্রসেস, তাতে বিরক্ত, খোঁজ রাখি না।”
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের মধ্যে রেদোয়ানুল আজাদ রানা ঘটনাস্থলে ছিল না জানিয়ে রাজীবের বাবা বলেন, “সে সময় রানা মালয়েশিয়া ছিল। পলাতক অবস্থায় তার ফাঁসির রায় হয়েছে। হাইকোর্টের রায় প্রকাশের সাত দিন আগে তাকে মালয়েশিয়া থেকে আনা হয়। রানাকে তো রিমান্ডে নেওয়া হয়নি, রানা ঘটনাস্থলে ছিল না। যে কোপ দিয়েছিল তার ফাঁসি হয়েছে, আর যে প্রধান সহযোগী, তার যাবজ্জীবন হয়েছে।”
রানার নির্দেশে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে মন্তব্য করে নাজিম উদ্দিন বলেন, “রানা কার নির্দেশে কাজ করেছে, কে এই নির্দেশ দিয়েছে, সেটা আমরা জানতে পারিনি।”
অন্যদিকে ছেলে হত্যা মামলার রায়ে অসন্তোষ থাকলেও অন্য মামলাগুলোর রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ডা. নাজিম বলেন, “দীপন হত্যা, অভিজিত হত্যায় আসামিদের সবার ফাঁসি হয়েছে। মোটামুটি এটা স্বস্তিদায়ক।”
নিজের ছেলের ঘটনায় “ন্যায়বিচার পাননি” দাবি করে ডা. নাজিম বলেন, “যে দুইজনের ফাঁসির রায় হয়েছে, আমার মনে হয় না এদের ফাঁসি হবে।”
রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, ভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি ও মুক্ত মতের প্রচারকদের লক্ষ্য করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একের পর এক জঙ্গি হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটে। রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, নীলাদ্রিসহ ১১টি হত্যার তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “এরইমধ্যে তিনটি মামলার রায় হয়েছে, অন্যগুলোর বিচার চলছে।”