ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ২ কোটি ৭০ লাখের বেশি গ্রাহক ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছেন।
এর মধ্যে ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ জন গ্রাহক বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) ৮০টি ইউনিটের আওতায় রয়েছে।
এছাড়া পশ্চিমাঞ্চল পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ জন গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন রয়েছেন।
সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিআরইবি-এর আওতাধীন প্রায় ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন ছিলেন। পরে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৫০ গ্রাহকের লাইন ঠিক করা হয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিআরইবির আওতাধীন এলাকায় ঝড়-বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। ৮০টি ইউনিটের মধ্যে অন্তত ৬৫ ইউনিটেড় ভোক্তারা আংশিক বা সম্পূর্ণ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
ঝড়ের কারণে মোট ২,৭১৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ২,৩৫৩টি ট্রান্সফরমার, ২২,৮৪৪টি ইনসুলেটর, ৫৩,৪২৫টি মিটার ও ৭১,৭২৯টি স্থানে তার বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষতি হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব চলমান থাকায় ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নির্ণয় করা যায়নি।
বিআরইবি ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে।
ঝড় বা বাতাস কমলেই বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকে কমিয়ে দিয়েছে।
এদিকে উপকূল ছাড়াও রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে।
বিপিডিবি কর্মকর্তাদের দাবি, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপকূলীয় এলাকায় বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে ঢাকাসহ জেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্রিয় থাকলেও দুর্ঘটনা এড়াতে বিতরণ লাইনগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, সোমবার উৎপাদন ছিল প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। তবে, রবিবার ছিল ১২,০০০ মেগাওয়াটের বেশি।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে রবিবার থেকে সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ খুলনা বিভাগের অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যুৎবিহীন। কবে নাগাদ বিদ্যুত চালু হবে তা নিশ্চিত করেনি স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
সাতক্ষীরা পৌরসভার বাসিন্দা ও সাংবাদিক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে রবিবার থেকে আমরা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিলাম। সোমবার বিকেলে তা সংক্ষিপ্তভাবে ফিরে আসলেও গত চার ঘণ্টা ধরে বন্ধ রয়েছে। এখানে গত ২৪ ঘন্টায় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখনও অনেক গাছপালা ঝড়ের প্রভাবের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় গ্রামীণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলেছে, সোমবার বিকেলের মধ্যে বিদ্যুৎ পুনঃস্থাপন করা হবে।”
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোড এলাকায় ভোর থেকেই লোডশেডিং সমস্যা। নুমি সাহা নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সোমবার লোডশেডিং খুব বেশি ছিল। আমাদের গ্যাসের সমস্যা, রান্না ও পানি সরবরাহে বাধা রয়েছে।”
পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দারাও লোডশেডিংয়ের অভিযোগ করেছেন। তারা উল্লেখ করেন, ঘূর্ণিঝড় বা অতিবৃষ্টি হলে সব সময়ই লোডশেডিং সমস্যা হয়।
নারায়ণগঞ্জে সদর ও ফতুল্লাসহ এলাকায় ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে।
দেওবাগ রোডের বাসিন্দা সিমেডন বলেন, ‘‘দুপুর পর্যন্ত আমাদের ১৫-২০ মিনিট লোডশেডিং ছিল, কিন্তু দুপুর ১টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি, এখন সন্ধ্যা ৬টা।”
বিপিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের সময় সারাদেশে, বিশেষ করে খুলনা ও বরিশালে অনেক বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশব্যাপী লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।”