দেশের ১০,৬৯৬ জন ভোটারের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে যে, বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগের মতো পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারের আস্থা রয়েছে। ভোটারদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিএনপি। জরিপে অংশ নেওয়া ৪২% ভোটার আগামী নির্বাচনে দলটিকে সমর্থন করবেন বলে মত দিয়েছেন।
ইনোভিশন কনসাল্টিং নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিচালিত “জনগণের নির্বাচন ভাবনা: ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০২৫” শীর্ষক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে কোন দলকে ভোট দেবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ৬৫% ভোটার তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ৪২% বিএনপিকে সমর্থন করেছেন, ৩২% বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে মত দিয়েছেন, আর আওয়ামী লীগ পেয়েছে মাত্র ১৪% ভোটারের সমর্থন।
জরিপে উঠে এসেছে, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা এখনও টিকে থাকলেও, তরুণ ভোটারদের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সামান্য ব্যবধানে তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দলকে পেছনে ফেলেছে। জেন-জি ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১১% সমর্থন, যেখানে তরুণদের রাজনৈতিক দল পেয়েছে ১০%। তবে সামগ্রিকভাবে এই তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত মাত্র ৫% ভোটারের সমর্থন আদায় করতে পেরেছে।
গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। তবে, বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে দলটি ভোট কারচুপি, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং দুর্নীতির অভিযোগের কারণে ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দলটি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনে সরকার ব্যাপক দমন-পীড়ন চালালে দেশজুড়ে তীব্র গণবিক্ষোভ সৃষ্টি হয়, যার ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। বৈষম্য দূর করার দাবিতে শুরু হওয়া এই ছাত্র আন্দোলন ধীরে ধীরে একটি রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। তরুণদের মধ্যে পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোর প্রতি অসন্তোষ এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকে গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল।
জরিপের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বয়স্ক ভোটারদের মধ্যে বিএনপি তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। জেনারেশন এক্স ও বুমার প্রজন্মের ৪৭% ভোটার বিএনপিকে সমর্থন করছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ৩৫% জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আশ্চর্যজনকভাবে দলটি জেনারেশন জি-এর ৩৪% ভোটারের সমর্থন পেয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে রক্ষণশীল দল হিসেবে পরিচিত হলেও জামায়াত তরুণদের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে বলে জরিপ থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, গ্রাম ও শহরের ভোটারদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের জনপ্রিয়তায় কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি গ্রামাঞ্চলে ৪২% এবং শহরে ৪০% ভোটারের সমর্থন পেয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। অন্যদিকে, জামায়াত গ্রামে ৩২% ও শহরে ৩০% ভোটারের সমর্থন পেয়েছে।
লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিএনপির সমর্থন পুরুষ ও নারীদের মধ্যে প্রায় সমান। দলটি পুরুষ ভোটারদের মধ্যে ৪২% এবং নারী ভোটারদের মধ্যে ৪১% সমর্থন পেয়েছে। তবে, জামায়াতে ইসলামী পুরুষদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি জনপ্রিয়, যেখানে দলটি ৩৩% পুরুষ এবং ৩০% নারী ভোটারের সমর্থন পেয়েছে।
জরিপের ফলাফল থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এখনও উল্লেখযোগ্য সমর্থন রয়েছে। বিএনপি বয়স্ক ও গ্রামীণ ভোটারদের মধ্যে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী তরুণ ও প্রবীণ- উভয় ভোটারদের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য সমর্থন বজায় রেখেছে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রবণতা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগ এখনও কিছুসংখ্যক প্রবীণ ভোটারের সমর্থন ধরে রেখেছে। তবে, ছাত্র নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দল ক্রমশ তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করা ও কার্যকর রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা, যা ভোটারদের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।