কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটসহ এক্স-রে মেশিনের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীসহ ৫৯টি পদের মধ্যে ১৭টি পদ শূন্য রয়েছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগ চালু করা হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে অন্তঃবিভাগ চালু করা হয়।
জরুরি ভিত্তিতে এসব শূন্যপদ পূরণ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল পদায়ন করলে প্রায় ৪ লাখ মানুষ উপকৃত হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ২০ মে তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা উপজেলার উত্তর রামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন করেন। পরে একই বছরের ১৭ অক্টোবর শ্রীমন্তপুর এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্থায়ী ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ও বর্তমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি ও কুমিল্লা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বর্তমান বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জননেতা মনিরুল হক চৌধুরী।
২০০৭ সাল থেকে সীমিত পরিসরে জরুরি বিভাগ ও আউটডোর বিভাগে রোগীদের সেবা প্রদান করে আসছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
অস্থায়ী কার্যালয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ১৫ বছর পর ২০২১ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অন্তঃবিভাগ চালু করা হয়। যার ফলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড ও উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ লক্ষাধিক জনতা চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার ফলে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি থেকে ২০২৩ সালে ২,৫৭৭ জন রোগী ইনডোর, ১ লাখ ২৯,৩৭২ জন রোগী আউটডোর, ১০,০৬৭ জন রোগী জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এ সময় ইউজার ফি আদায় হয়েছে ৭ লাখ ৬৩, ৪৭২ টাকা।
২০২৪ সালে ৩,০২৬ জন রোগী ইনডোর, ১ লাখ ৩৬,৫৪৬ জন রোগী আউটডোর, ১০,৬৪৯ জন রোগী জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এতে ইউজার ফি আদায় হয়েছে ১৪ লাখ ৯৮, ৮৪৫ টাকা। যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
অর্গ্রানোগ্রাম অনুযায়ী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট পদ সংখ্যা ৫৯টি। এর মধ্যে ১৭টি পদশূন্য রয়েছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ২টি, স্বাস্থ্য সহকারীর ১টি পদ শূন্য রয়েছে। কুক পদ ২টি শূন্য থাকলেও আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সুইপার ও ঝাড়–দারের পদ ৫টি। এর মধ্যে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যকম শুরু হওয়ার প্রায় ১৯ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত এক্স-রে মেশিনের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। যার ফলে রোগীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
এসব শূন্যপদ পূরণ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল পদায়ন করার জোরদাবী দাবী জানিয়েছেন উপজেলাবাসী।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দীন ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা কার্যক্রম চালুকরণ করা হলেও অদ্যাবধি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জনবলের কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়ে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দ্রুত জনবল পদায়ন করা হলে সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের আরও উন্নত সেবা প্রদান সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যকম শুরু হওয়ার প্রায় ১৯ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত এক্স-রে মেশিনের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।