বাগেরহাটে রামপালে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে অধিগ্রহণ করায় খাস জমিতে বসবারত পরিবারগুলোর জন্য কৈগরদাসকাঠি চরে সরকার গড়ে তোলা হয় গুচ্ছগ্রাম। এ গুচ্ছগ্রামে ঠাঁই নেয় ৮০০ পরিবার। সরকার ১৪২ পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেয়। কিন্তু বাদ বাকী পরিবারগুলো নিজের মত করে ঘর তুলে বসবাস করছে। তবে আজ পর্যন্ত এ পরিবারগুলোর জন্য রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি গুচ্ছগ্রামে বৈদ্যুতিক লাইন থাকলেও তার বিল পর্যন্ত গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারাই পরিশোধ করেন।
কৈগরদাসকাঠি গুচ্ছ গ্রামের নিবাসী মো. মুহিব্বুল্লাহ বলেন, “ডিসিআর কেটে আমরা খাস জমিতে বসবাস করতাম। কিন্তু তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে অধিগ্রহণ হওয়ার পর আমরা বিপাকে পরি। তখন সরকার আমাদের জন্য কৈগরদাসকাঠি চরে গুচ্ছগ্রাম করে। এখানে ১৪২টি ঘর তুলে দেয় সরকার। কিন্তু এ গুচ্ছগ্রামে বসবাস করছে ৮০০ পরিবার।”
তিনি নিজেও একটি ঘর পেয়েছেন। কিন্তু পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে থাকা কঠিন। তাই পাশের পুকুরের জায়গায় ঘর তুলে নিয়েছেন।
কৈগরদাসকাঠির বাসিন্দা মোসা. সুফিয়া বেগম বলেন, “আমরা কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছি। সরকার কিছু ঘর তুলে দিয়ে পুনর্বাসন কাজ শেষ করেছে। এখন ৮০০ পরিবারের দুর্বষহ জীবন চলছে। কিন্তু রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গুচ্ছ গ্রামের মানুষদের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে এখানের লোকজনের দুর্দশা কাটছে না।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমরা শুরু থেকেই এই বিদ্যুৎ প্লান্টের ফলে পরিবেশ প্রতিবেশ ক্ষতির প্রভাব সম্পর্কে বলে আসছি। এটি বন্ধ করার দাবিও জানিয়েছি। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি। এখন মানুষের দুর্ভোগের চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে এ সম্পর্কিত ডাটা, তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে অবস্থান পরিস্কার করবো।”
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাশানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, “স্থানীয়দের জন্য সিএসআর এর আওতায় এখন পর্যন্ত ২৩ ধরনের সেবা দেওয়া হয়েছে। যা চলমান রয়েছে। ফ্রী স্বাস্থ্য সেবা, শিশুদের শিক্ষার পরিবেশসহ নানান সেবা রয়েছে। সুপেয় খাবার পানির জন্য ১১টি পয়েন্ট পানি নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাছ লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে। কোন নতুন পদক্ষেপ নিলে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু কৈগরদাসকাঠি চরের গুচ্ছ গ্রামে এখনও কোনো ধরনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া সম্ভব হয়নি।”
তিনি বলেন, “প্ল্যান্টটি অত্যাধুনিক অতি-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যা প্রচলিত কয়লা কেন্দ্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছাই নির্গমন নিশ্চিত করে। উপরন্তু, আমাদের ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (FGD), ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক প্রিসিপিটেটর (ESPs) এবং জিরো লিকুইড ডিসচার্জ সিস্টেম কঠোর পরিবেশগত সম্মতি নিশ্চিত করে। দূষণের দাবির বিপরীতে, ১,৬৫,০০০ এরও বেশি গাছ লাগানো হয়েছে এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্বাধীন সংস্থাগুলি নিয়মিতভাবে পরিবেশের বায়ু এবং পানির মান পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করে। অপরিশোধিত ছাই এবং বর্জ্য জল নিঃসরণের দাবি সঠিক না। সমস্ত বর্জ্য পদার্থ আধুনিক সুবিধাগুলিতে শোধন করা হয় এবং পরিবেশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মান পূরণ করে বা অতিক্রম করে। মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে, চালু হওয়ার পর থেকে ৮,৫০০ মিলিয়ন ইউনিটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, যা শিল্প ও পরিবারগুলোকে সরাসরি উপকৃত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আইনি বিধান অনুসারে জমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণরূপে পরিচালিত হয়েছিল, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত আইন অনুসারে সমস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) দ্বারা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছিল। আর্থিক সহায়তা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং জীবিকা পুনরুদ্ধার কর্মসূচিসহ একটি বিস্তৃত পুনর্বাসন ও পুনর্বাসন (আরএন্ডআর) পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।”