Friday, April 18, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

ঈদযাত্রায় ৮৩২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হবে

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, এবারের ঈদে ৯৮% গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম

এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা ও আশেপাশে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথের বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে ২২ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার বার যাতায়াত হতে পারে। এসময়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদ বকশিশ বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

মোজাম্মেল হক বলেন, “ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবেন। এ ছাড়া ঈদবাজারসহ নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন গণপরিবহনে বাড়তি ট্রিপ সম্পন্ন হবে। এসব যাত্রীর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতার মধ্যেও এবারে ঈদযাত্রায় কেবল ঢাকা ছাড়তেই ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হবে।”

মহাসচিব বলেন, “গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের উপকমিটির সদস্যরা গত ২০ মার্চ থেকে ঢাকা মহানগরীতে দেশের সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথের ঈদযাত্রা পরিস্থিতি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রীসেবার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আমরা দেখেছি, এবারের ঈদে ৯৮% গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।”

মোজাম্মেল হক বলেন, “সরকার বাস-লঞ্চ ও বিভিন্ন গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে চালক, সহকারীর বেতন-ভাতা ও দুই ঈদের বোনাস প্রতিদিনের আদায়কৃত ভাড়ার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত রেখেছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো পরিবহনে এটি কার্যকর নেই। ফলে ঈদে বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহন ও ভাড়ায়চালিত প্রাইভেট পরিবহনগুলো একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে।”

তিনি আরও বলেন, “দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঈদকেন্দ্রিক পরিবহনে চাঁদাবাজি বৃদ্ধি, পরিবহন কোম্পানিগুলোর বাড়তি খরচের যোগান দেওয়া, পরিবহনের মালিক-চালক-সহকারী ও অন্যান্য সহায়ক কর্মচারীদের ঈদ বোনাস তুলে নেওয়া, পরিবহন মালিকদের বাড়তি মুনাফা লুটে নেওয়াসহ নানা কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।”

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি যাত্রী নৌপথে ঘরে ফিরবেন। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “ঢাকার সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরসহ বিভিন্ন ঘাট দিয়ে ২০০টি ছোট-বড় নৌযানে প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। যাত্রীপ্রতি গড়ে ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত শ্রেণিভেদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গড়ে যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া আদায় হলে ঈদের আগে শুধু নৌপথে ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হবে।”

রাজধানীর গণপরিবহন ও অটোরিকশার বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, “রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। কেনাকাটা, বিভিন্ন টার্মিনালে যাতায়াতসহ দৈনন্দিন নানা কাজে যাত্রীদের গড়ে প্রতি ট্রিপে ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ঈদের আগে রাজধানীতে চলাচলকারী ২০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় প্রায় ৩০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকার বেশি বাড়তি ভাড়া নেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, প্যাডেলচালিত রিকশা ঈদ বকশিশের নামে যাত্রীপ্রতি গড়ে ২০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। আমরা মনে করি, রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ৮ লাখ ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশায় ৮ কোটি ট্রিপ যাত্রী যাতায়াত করতে পারে। এই যানবাহনে যাত্রীদের ১৬০ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।”

দূরপাল্লার বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, “এবারের ঈদে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার রুটে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াতে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৩০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সে হিসাবে দূরপাল্লার রুটে বাস-মিনিবাসের যাত্রীদের ৯০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।”

সংগঠনটি জানায়, প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসের ২০ হাজার, যেখানে ৬০ হাজার ট্রিপে গড়ে ৩,৫০০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সে হিসাবে এই পরিবহন ব্যবহারকারী যাত্রীদের ২১ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।

রেলপথে বাড়তি ঘুষ ও ভাড়া আদায়ের প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদে ট্রেনের ছাদে যাত্রী পরিবহন ঠেকাতে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বিপুল সংখ্যক নিম্ন আয়ের লোকজন কম খরচে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে যাতায়াত করেন। এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ৮০ হাজার যাত্রী ট্রেনের ছাদে যাবেন। তাদের প্রত্যেককে গড়ে ১০০ টাকা হারে ৮০ লাখ টাকা রেলে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হবে। এ ছাড়া বিনা টিকিটে ২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করবেন, যারা গড়ে ৩০০ টাকা হারে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হবেন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি সুপারিশ করেছে, এখান থেকে উত্তরণের জন্য গণপরিবহনে ডিজিটাল ভাড়া আদায় চালু করা, নগদ টাকার লেনদেন বন্ধ করা, সড়ক-মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা পদ্ধতিতে প্রসিকিউশন চালু করা এবং আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহমদ, অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকা আফরোজ ও মোহাম্মদ আরিফ প্রমুখ।

 

 

   

About

Popular Links

x