বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে পরিচয় সংক্রান্ত প্রমাণাদির সাপেক্ষে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নথি হলো জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় পরিচয়পত্র বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভুলবশত জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে ছোটখাটো হয়রানি থেকে শুরু করে আইনি ঝামেলার মুখোমুখি পর্যন্ত হওয়া লাগতে পারে। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে কি কি করণীয় তা জানা থাকা উচিত।
থানায় জিডি করা
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে সর্বপ্রথম যে কাজটি করণীয়, তা হচ্ছে নিকটস্থ থানায় তা লিখিতভাবে জানানো বা একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা। থানা কর্তৃক জিডি গৃহীত হওয়ার পর জিডি গ্রহণকারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। কেননা জিডির কপিটির সঙ্গে এই তথ্যগুলোও পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে।
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যুর জন্য আবেদন
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার ওয়েবসাইট বা এনআইডি উইংয়ে গিয়ে অনলাইন নিবন্ধন করতে হবে। ইতোমধ্যে নিবন্ধিত হয়ে থাকলে এনআইডি নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করা যাবে। আর পাসওয়ার্ড ভুলে গেলেও তা রিসেট করে পুনরায় অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে।
যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করার পর ফেইস ভেরিফিকেশন হবে। এই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলেই পুনরায় লগ ইন করতে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে।
অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে রিইস্যু অপশনে ক্লিক করার পর জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যু করার আবেদন ফর্ম পাওয়া যাবে। ফর্মটি যথাযথভাবে পূরণ করে জমা দেওয়ার পর ফি দেওয়ার সেকশন আসবে। এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়ার জন্য বিতরণের ধরন (রেগুলার অথবা আর্জেন্ট) নির্বাচন করতে হবে। অতঃপর ফি প্রদান করার পর পরের স্ক্রিণে আসবে জিডির সেকশন।
এখানে থানা থেকে নিয়ে আসা জিডির কপিটি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে আপলোডের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন জিডির লেখাগুলো স্পষ্ট বোঝা যায়। জিডির যাবতীয় তথ্যাবলি দেওয়ার পর চুড়ান্তভাবে আবেদনটি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়া
সাধারণত অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার ৭-১৫ দিনের মধ্যে আবেদনটি অনুমোদিত হয়ে যায়। জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যুর আবেদন অনুমোদিত হলে আবেদনের সময় সরবরাহ করা মোবাইল নাম্বারে একটি বার্তা আসবে। বার্তাটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এনআইডি উইংয়ে পুনরায় লগ ইন করে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করে নিতে হবে। নতুবা নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে আর ডাউনলোড করা যায় না।
জাতীয় পরিচয়পত্রের এই অনলাইন কপি পরবর্তীতে প্রিন্ট ও লেমিনেটিং করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
২০১৯ সালের পর যাদের অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র হয়েছে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে, এই এনআইডি উইংয়ে লগ ইন করে বিনামূল্যেই জাতীয় পরিচয়পত্রটি ডাউনলোড করে নেয়া যাবে। আর ২০১৯ সালের আগের ভোটারদের ক্ষেত্রে অথবা যারা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন, তারা এ পোর্টাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।
উল্লেখ্য, স্মার্ট কার্ড হাতে পাওয়ার জন্য সরাসরি নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে জিডির কপিটি নিয়ে সরাসরি থানা বা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যু ফি
সাধারণের ক্ষেত্রে হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র উঠাতে বা রি-ইস্যুর জন্য আবেদন ফি ভ্যাটসহ ৩৪৫ টাকা। আর জরুরি ক্ষেত্রে ভ্যাটসহ তা ৫৭৫ টাকা। ২০১৯ সালের আগের ভোটারদের ক্ষেত্রে এনআইডি উইং থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে ২৩০ টাকা দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যুর আবেদন করতে হবে।
এ টাকা দেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো যেমন রকেট, বিকাশ ব্যবহার করে অনায়াসেই পরিশোধ করা যেতে পারে।
পরিশিষ্ট
এভাবে অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র ফিরে পাওয়া যায়। তবে এই ঝামেলা পোহাতে না চাইলে প্রথম থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত। এখন ব্যাংকের লেনদেন, পাসপোর্ট, বিভিন্ন লাইসেন্স প্রতি ক্ষেত্রেই যুক্ত হয়ে পড়ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। তাই নিদেনপক্ষে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বারটি আলাদা করে মোবাইল লিখে রাখা যেতে পারে। একাধিক জায়গায় বিশেষ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে (গুগল ড্রাইভ, ড্রপ বক্স, ওয়ান ড্রাইভ) সংরক্ষণ করা থাকলে বিভিন্ন কাজের সময় নাম্বারটি ব্যবহার করা যেতে পারে।