প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৩:২২ পিএমআপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ০৩:১৫ পিএম
কক্সবাজারের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম রশিদ আহমেদের। পড়াশোনাও হয়নি। জন্মের পর থেকেই সমুদ্রের পানি দেখে দেখে বড় হলেও, সাঁতারটা শেখা হয়নি। নেই অন্য কোনো কাজের দক্ষতা। সংসার চালাতে তাই কিশোর বয়সেই দুই হাতে ফ্লাস্ক ঝুলিয়ে
নেমে পড়েন সমুদ্র পাড়ে চা-কফি বিক্রির কাজে। ঘুরতে ঘুরতে তিনি দেখতেন, সমুদ্রে বেড়াতে এসে আর সাঁতার কাটতে গিয়ে প্রায়ই কেউ না কেউ হারিয়ে যায়। তখন তার খুব আফসোস হতো সাঁতার না জানায়,ডুবন্ত মানুষগুলোকে সমুদ্র থেকে তুলে আনতে না পারায়!
একদিন তারই চোখের সামনে একটি ১০-১২ বছরের ছেলে ডুবে যাচ্ছিল। তখন হন্তদন্ত হয়ে একজন সাহায্যকারীর খোঁজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু যতক্ষনে সাহায্যকারীর খোঁজ মেলে ততক্ষণে তলিয়ে যায় ছেলেটি। উদ্ধার করে আনতে আনতে মারা যায় সেই কিশোর। এই ঘটনা চূড়ান্ত দাগ কাটে রশীদের মনে।
তিনি পণ করেন, যেভাবেই হোক তাকে লাইফগার্ড হতেই হবে। সমুদ্রের পানিতে ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধার করে তাকে বাঁচানোর কৌশল শিখতেই হবে। যাতে চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটলে অন্য উদ্ধারকারীর জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। চোখের সামনে তিনি আর কাউকে সমুদ্র গহ্বরে হারিয়ে যেতে দেবেন না।
তখন স্থানীয় কিছু বড় ভাইয়ের সাহায্য চান রশীদ। যারা সাঁতার জানে, সার্ফিং জানে। তারা রশীদকে নিয়ে যান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)-এর একটি প্রকল্প সি-সেইফ এর কর্মকর্তাদের কাছে।
তখনই সি-সেইফ প্রকল্প কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য নিরাপদ করতে বেশ কিছু লাইফগার্ড তৈরির প্রশিক্ষণ শুরুর কাজ করছিল।
রশীদ সানন্দে যুক্ত হয়ে যান সেই কর্মযজ্ঞে। শিখে নেন সাঁতার, সার্ফিং আর ফার্স্ট রেসপন্ডার ট্রেনিং। যা লাইফগার্ড হওয়ার অত্যাবশকীয় তিন মূলমন্ত্র।
সিআইপিআরবি’র সি-সেইফ প্রকল্পের লাইফগার্ড সার্ভিসকে ২০১৫ সাল থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাহায্য সংস্থা আরএনএলআই রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফগার্ড ইন্সটিটিউশন, ইউকে)। দুইশ’ বছরের পুরাতন এই এনজিও আর লাইফগার্ডিং তাদের মূল কাজের জায়গা। আরএনএলআই এর
প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়ে নিজের লালিত স্বপ্নকে পেশা হিসেবে বেছে নেন রশীদ। চা-কফির ফ্লাস্ক ছেড়ে তিনি হাতে তুলে নেন বাঁশি, রেসকিউ টিউব আর সার্ফিং বোর্ড।
রশীদ জানান, “আমি চাইনি আমার চোখের সামনে দিয়ে কেউ চলে যাক। এখানে সারা দেশ থেকে মানুষ আসে। আনন্দ করতে ছুটি কাটাতে এসে কেন তারা মরে যাবে? সেজন্যই এই কাজকে বেছে নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “সি-সেইফের ট্রেনিং থেকে আমি যা শিখেছি তা যেন কাজে লাগাতে পারি। সমুদ্র থেকে উঠিয়ে আনার পর হাসপাতালে নেওয়া পর্যন্ত যা যা
সেবা তার লাগবে, তা যেন আমি দিতে পারি। এখন আমি আমার স্বপ্নকে পেশা হিসাবে নিয়েছি। কোনো দিন বা কোনো বেলায় আমার ডিউটি না থাকলেও আমি বিচের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হাঁটি, যদি আমার কাণে কারও জীবন বেঁচে যায়, তাহলেই আমি খুশি।”
সমুদ্রের কোলে জন্ম হলেও সাঁতার না জানায় যে পানি ছিল রশীদের কাছে মূর্তিমান আতংক, সেই পানি থেকেই মানুষকে উদ্ধার করে জীবন বাঁচান তিনি। আর এই কাজই এখন তার জীবিকা। লাইফগার্ড সেবায় যুক্ত হওয়ার পর ২০১৫ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে তুলে এনেছেন রশীদ। এই কাজের মাঝেই এখন আনন্দ খুঁজে পান ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ।
সৈকতের চা বিক্রেতা থেকে লাইফগার্ড হয়ে যাওয়া রশীদের গল্প
লাইফগার্ড হিসেবে এ পর্যন্ত অর্ধশত মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন এই তরুণ
কক্সবাজারের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম রশিদ আহমেদের। পড়াশোনাও হয়নি। জন্মের পর থেকেই সমুদ্রের পানি দেখে দেখে বড় হলেও, সাঁতারটা শেখা হয়নি। নেই অন্য কোনো কাজের দক্ষতা। সংসার চালাতে তাই কিশোর বয়সেই দুই হাতে ফ্লাস্ক ঝুলিয়ে
নেমে পড়েন সমুদ্র পাড়ে চা-কফি বিক্রির কাজে। ঘুরতে ঘুরতে তিনি দেখতেন, সমুদ্রে বেড়াতে এসে আর সাঁতার কাটতে গিয়ে প্রায়ই কেউ না কেউ হারিয়ে যায়। তখন তার খুব আফসোস হতো সাঁতার না জানায়,ডুবন্ত মানুষগুলোকে সমুদ্র থেকে তুলে আনতে না পারায়!
একদিন তারই চোখের সামনে একটি ১০-১২ বছরের ছেলে ডুবে যাচ্ছিল। তখন হন্তদন্ত হয়ে একজন সাহায্যকারীর খোঁজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু যতক্ষনে সাহায্যকারীর খোঁজ মেলে ততক্ষণে তলিয়ে যায় ছেলেটি। উদ্ধার করে আনতে আনতে মারা যায় সেই কিশোর। এই ঘটনা চূড়ান্ত দাগ কাটে রশীদের মনে।
তিনি পণ করেন, যেভাবেই হোক তাকে লাইফগার্ড হতেই হবে। সমুদ্রের পানিতে ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধার করে তাকে বাঁচানোর কৌশল শিখতেই হবে। যাতে চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটলে অন্য উদ্ধারকারীর জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। চোখের সামনে তিনি আর কাউকে সমুদ্র গহ্বরে হারিয়ে যেতে দেবেন না।
তখন স্থানীয় কিছু বড় ভাইয়ের সাহায্য চান রশীদ। যারা সাঁতার জানে, সার্ফিং জানে। তারা রশীদকে নিয়ে যান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)-এর একটি প্রকল্প সি-সেইফ এর কর্মকর্তাদের কাছে।
তখনই সি-সেইফ প্রকল্প কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য নিরাপদ করতে বেশ কিছু লাইফগার্ড তৈরির প্রশিক্ষণ শুরুর কাজ করছিল।
রশীদ সানন্দে যুক্ত হয়ে যান সেই কর্মযজ্ঞে। শিখে নেন সাঁতার, সার্ফিং আর ফার্স্ট রেসপন্ডার ট্রেনিং। যা লাইফগার্ড হওয়ার অত্যাবশকীয় তিন মূলমন্ত্র।
সিআইপিআরবি’র সি-সেইফ প্রকল্পের লাইফগার্ড সার্ভিসকে ২০১৫ সাল থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাহায্য সংস্থা আরএনএলআই রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফগার্ড ইন্সটিটিউশন, ইউকে)। দুইশ’ বছরের পুরাতন এই এনজিও আর লাইফগার্ডিং তাদের মূল কাজের জায়গা। আরএনএলআই এর
প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়ে নিজের লালিত স্বপ্নকে পেশা হিসেবে বেছে নেন রশীদ। চা-কফির ফ্লাস্ক ছেড়ে তিনি হাতে তুলে নেন বাঁশি, রেসকিউ টিউব আর সার্ফিং বোর্ড।
রশীদ জানান, “আমি চাইনি আমার চোখের সামনে দিয়ে কেউ চলে যাক। এখানে সারা দেশ থেকে মানুষ আসে। আনন্দ করতে ছুটি কাটাতে এসে কেন তারা মরে যাবে? সেজন্যই এই কাজকে বেছে নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “সি-সেইফের ট্রেনিং থেকে আমি যা শিখেছি তা যেন কাজে লাগাতে পারি। সমুদ্র থেকে উঠিয়ে আনার পর হাসপাতালে নেওয়া পর্যন্ত যা যা
সেবা তার লাগবে, তা যেন আমি দিতে পারি। এখন আমি আমার স্বপ্নকে পেশা হিসাবে নিয়েছি। কোনো দিন বা কোনো বেলায় আমার ডিউটি না থাকলেও আমি বিচের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হাঁটি, যদি আমার কাণে কারও জীবন বেঁচে যায়, তাহলেই আমি খুশি।”
সমুদ্রের কোলে জন্ম হলেও সাঁতার না জানায় যে পানি ছিল রশীদের কাছে মূর্তিমান আতংক, সেই পানি থেকেই মানুষকে উদ্ধার করে জীবন বাঁচান তিনি। আর এই কাজই এখন তার জীবিকা। লাইফগার্ড সেবায় যুক্ত হওয়ার পর ২০১৫ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে তুলে এনেছেন রশীদ। এই কাজের মাঝেই এখন আনন্দ খুঁজে পান ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ।
বিষয়: