আইসল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর গ্রিনদাভিকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) ভোরের দিকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। গত ডিসেম্বরেও শহরটিতে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল।
কয়েকদিনের মধ্যে ১০০ এর মতো ভূমিকম্প হয়েছে আইসল্যান্ডের ওই অঞ্চলে। তারই জেরে জেগে উঠেছে আগ্নেয়গিরি। মাসখানেক আগে একবার অগ্নুৎপাত হয়েছিল ওই আগ্নেয়গিরিটি থেকে। রবিবার সকাল থেকে আবার তা জেগে ওঠে।
দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত রেকেনেস পেননিসুলা। সেখানেই আছে এই আগ্নেয়গিরিটি। রবিবার সকাল থেকে আকাশ লাল করে লাভাস্রোত বের হচ্ছে ওই আগ্নেয়গিরিটি থেকে। লাভার যে দেয়াল এতদিন পর্যন্ত সেখানে ছিল, তা ভেঙে ক্রমশ লাভাস্রোত নিচের দিকে নামতে থাকে। পাহাড়ের নিচেই আছে গ্রিনদাভিক শহর। মৎসজীবীদের ওই এলাকায় ঢুকে পড়ে লাভাস্রোত। তার আগেই অবশ্য একরাতের মধ্যে পুরো শহর খালি করে দেওয়া হয়েছিল। সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
তিন হাজার আটশ মানুষ ওই এলাকায় বসবাস করতেন। তাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত নভেম্বরে একের পর এক ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল ওই এলাকা। তখনো একবার তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে তারা বাড়ি ফিরেছিলেন। এবার আরও একবার তাদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
লাভাস্রোত শহরে ঢুকে যাওয়ার পর আর তারা সেখানে ফিরে যেতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অগ্নুৎপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকার পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়।
রবিবার সকালে একটি স্থানীয় চ্যানেলের ফুটেজে দেখা গেছে, গল গল করে লাভা শহরের বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। একটি বাড়িতে আগুন লেগে গেছে। দাউদাউ করে সেটি জ্বলছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বোঝা সম্ভব নয়। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে সরকার। অগ্নুৎপাতের জন্য এখনো কোনো ফ্লাইট বাতিল করা হয়নি।
আইসল্যান্ডের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রবিবার সকাল ৭টা ৫৭ মিনিটে প্রথম অগ্নুৎপাত শুরু হয় আগ্নেয়গিরিটি থেকে। যেখানে এই ঘটনা ঘটছে সেখান থেকে আইসল্যান্ডের রাজধানী মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে। ওই গোটা অঞ্চলে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।
সারা পৃথিবীতে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির সংখ্যা দেড় হাজার। এসব আগ্নেয়গিরি ছড়িয়ে আছে ৮১টি দেশে।
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরিসংখ্যান ঘেঁটে বলছেন, ১৫০০ সালের পর থেকে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে; যার মধ্যে এক লাখ ৭০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে মাত্র ছয়টি অগ্নুৎপাতের ঘটনায়।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট, সরকারি তথ্য ও ঐতিহাসিক দলিল ঘেঁটে এসব পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে মারা গেছে প্রায় ২,০০০ মানুষ।
এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই হয়েছে ফিলিপিনে, ইন্দোনেশিয়া, জাপান ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে। সারাবিশ্বে যতগুলো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে, সেসবের ১০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বসবাস প্রায় ৮০ কোটি মানুষের। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এই ১০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে।