উত্তর পূর্ব তিমুরের একটি গভীর গুহায় পাথরের প্রত্নবস্তু ও প্রাণীর হাড় খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তাদের ধারণা, মিশরীয়রা প্রথম পিরামিড তৈরি করারও ৩৫ হাজার বছরের আগে সেখানে প্রাচীন মানুষ বসবাস করতো।
অস্ট্রেলিয়ান ও যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তাদের ভাষ্য, সম্প্রতি পূর্ব তিমুরের উত্তরাঞ্চলে লাইলি রক শেল্টার নামে পরিচিত একটি গুহায় পাওয়া হাজার হাজার পাথরের প্রত্নবস্তু এবং প্রাণীর হাড় ইঙ্গিত দেয়, সেখানে প্রাচীন মানুষেরা প্রায় ৪৪ হাজার বছর ধরে বাস করতো।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একজন প্রত্নতাত্ত্বিক এবং জীবাশ্মবিদ শিমোনা কেলি বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের অন্যান্য স্থান ছাড়াও লাইলি শিলা আশ্রয়কেন্দ্রে গভীর পলি সংরক্ষণ রয়েছে। তবে সেখানে মানুষের পেশার কোনো স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায়নি।’’
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিশিষ্ট অধ্যাপক ও প্রত্নতাত্ত্বিক সুই ও কনর বলেন, ‘‘নতুন গবেষণায় তিমুর দ্বীপে কখন মানুষের আগমন হয়েছে, সেদিকে নজর দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে।’’
তার ভাষ্য, ‘‘অন্তত ৫০ হাজার বছর আগে তিমুর দ্বীপে মানুষের অনুপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ। এটি বোঝায়, এই আদি মানুষরা পূর্বে যা জানা গিয়েছিল, তারচেয়ে আরও দেরিতে দ্বীপে এসেছিল।’’
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ), ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) ও অস্ট্রেলিয়ান বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড হেরিটেজের জন্য এআরসি সেন্টার অব এক্সিলেন্সের গবেষকরা এই সপ্তাহে নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে তাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
এর আগে, প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রাচীন মানুষের জীবন সম্পর্কে নানা তথ্য জানা গেছে। এরই সাম্প্রতিক আবিস্কার এটি।
তিমুর দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, ৪৫ হাজার বছর বয়সী একটি ওয়ারটি পিগের জীবন-আকারের যে চিত্র উঠে এসেছে, এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম রক আর্ট পেইন্টিং হতে পারে।
পেইন্টিংটি খুঁজে পাওয়া জরিপের নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ সুলাওয়েসির একজন ইন্দোনেশিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিক এবং বর্তমান গ্রিফিথ পিএইচডি ছাত্র বসরান বুরহান।
২০২১ সালের আবিষ্কার সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সুলাওয়েসি ওয়ার্টি শূকর শিকার করেছে।’’
বুরহান বলেন, ‘‘দ্বীপের বরফ যুগে সময়কালে এই শূকরের ছবি সবচেয়ে বেশি আঁকা হয়েছে।’’
দলটি এর আগে অন্য একটি সুলাওয়েসি গুহায় ৪৪ হাজার বছরের পুরনো একটি চিত্রশিল্প খুঁজে পেয়েছিল। যেখানে বন্য প্রাণীদের তাড়া করার জন্য বর্শা ও দড়ি ব্যবহার করে অর্ধ-মানব শিকারীদের চিত্রিত করা হয়েছে।
সায়েন্স ম্যাগাজিনের ২০২০ সালের সেরা ১০টি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির মধ্যে সেই পেইন্টিংটির আবিষ্কারটিকে একটি নাম দেওয়া হয়েছে।
পৃথিবীর প্রাচীনতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে অনেকগুলো পূর্ব তিমুর ও ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়।
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী আদিবাসীদের পৃথিবীর প্রাচীনতম অবিচ্ছিন্ন জীবন্ত সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে একটি রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ বলছে, এগুলো অন্তত ৬০ হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক চিত্র।
উত্তর-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মুরুজুগায়, আনুমানিক এক মিলিয়ন পেট্রোগ্লিফের মধ্যে রয়েছে ৪০ হাজার বছর আগেকার খোদাই করা শিলা।
খোদাইতে নখ-লেজওয়ালাবিস ও থাইলাসিনসহ বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের অঙ্কন রয়েছে, যা তাসমানিয়ান বাঘ নামেও পরিচিত।
মুরুজুগা কালচারাল ল্যান্ডস্কেপ আনুষ্ঠানিকভাবে এই বছরের শুরুতে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদার জন্য মনোনীত হয়েছিল।
মুরুজুগা আদিবাসী কর্পোরেশনের সিইও কিম উড বলেন, ‘‘নিগারদা ও নিগারলি এর পূর্বপুরুষরা হাজার হাজার প্রজন্ম মুরুজুগার মধ্যে ছিল ও বিকাশ করেছে।’’