মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এক গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে মানুষের মতামতের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা গেছে।
বুধবার (১১ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
বিশ্বের মোট ২৪টি দেশে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি দেশে গত বসন্তের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক মনোভাব কমে এসেছে। সেই ১৫টি দেশের মধ্যে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির বিষয়ে মনোভাব জানতে চাওয়া হয়।
তাছাড়া, ব্যক্তি হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিষয়েও তাদেরকে মতামত দিতে বলা হয়। ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আচরণ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়াদি সামলাতে তার সামর্থ্য নিয়ে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে প্রশ্ন করা হয়।
২৮ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের পর থেকে ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ট্রাম্পের আরোপ করা ট্যারিফের ঘোষণার আগে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির অবনমন
জরিপে স্থান পাওয়া ২৪টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির সবচেয়ে বেশি অবনমন ঘটেছে প্রতিবেশী ম্যাক্সিকো এবং নরডিক দেশ সুইডেনে। এরমধ্যে মেক্সিকোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক ভাবমূর্তি ২০২৪ সালের তুলনায় ৩২ পয়েন্ট কমে এসেছে। আর সুইডেনে তা ২৮ পয়েন্ট কমেছে। মেক্সিকোয় যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ৬১ থেকে কমে ২৯-এ এসে দাঁড়িয়েছে এবং সুইডেনে তা ৪৭ থেকে কমে ১৯-এ দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিবেশী দেশ কানাডা এবং ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয়তা ২০%-এর বেশি কমে এসেছে। জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয়তা ১৬% কমে এসেছে। তাছাড়া, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, সাউথ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা এবং ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে এসেছে।
অবশ্য সব দেশেই যে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয়তা কমেছে বিষয়টি এমন নয়। উল্টো চিত্রও দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল, নাইজেরিয়া এবং তুরস্ক। এই তিন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয়তা কিছুটা বেড়েছে।
ইসরায়েলের বিপরীত চিত্র সুইডেনে
জনপ্রিয়তা বাড়ার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে এশিয়ার দেশ ইসরায়েল। দেশটির ৮৩% মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। সুইডেনে দেখা গিয়েছে তার বিপরীত চিত্র। সেখানকার ৭৯% অংশগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। জার্মানিতে ৬৬% অংশগ্রহণকারী নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।
প্রজন্মগত ও দর্শনগত বিভাজন
পিউ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের জরিপের ফলাফল বলছে, অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগ দেশের ৩৫ বছরের কম বয়সীরা ৫০ এবং তার বেশি বয়সীদের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।
উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের কথা বলা যেতে পারে। এই দেশটি থেকে জরিপে অংশগ্রহণকারী নাগরিকদের মধ্যে ৩৫-এর কম বয়সী ৭৩% ইতিবাচক এবং ৫০ বা তার বেশি বয়সী ৩৭% ব্যক্তি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
তাছাড়া রাজনৈতিক আদর্শও মতামতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে- এমনটা লক্ষ্য করা গেছে। ইসরায়েলের ৫১% উত্তরদাতা নিজেদের ডানপন্থী বলে মনে করেন, যাদের ৯৭% যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
একই পরিস্থিতি দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটির ডানপন্থীদের ৬০% যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ইতিবাচক এবং বাম ঘরানার ১২% নেতিবাচক কথা বলেছেন। জার্মানির বেলায়ও একই চিত্র উঠে এসেছে। কট্টর ডানপন্থী দল এএফডির সমর্থকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা গেছে। সংখ্যার বিচারে এটি ৬৩%। আর যারা এই দলটি সমর্থন করেন না, তাদের মধ্যে ইতিবাচক মননোভাব পেষণকারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম, ২৫%।
ট্রাম্পের বিষয়ে মনোভাব
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। জরিপের ১৯টি দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের অর্ধেকের বেশি মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে বিশ্ব রাজনীতি সামলানোর সামর্থ্য রয়েছে- সে বিষয়ে তাদের সামান্য আস্থা রয়েছে বা কোনো আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন।
যদিও অন্তত ১৮টি দেশের অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ট্রাম্পকে একজন “শক্তিশালী নেতা” বলে মনে করেন।
জরিপ বলছে, প্রাপ্ত বয়স্কদের ৩৪% ব্যক্তির ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্ব রাজনীতিতে নেতৃত্বে দেওয়ার সামর্থ্যের বিষয়ে অনেক কিংবা কিছুটা আস্থা রয়েছে। আর ৬২% জানিয়েছেন তাদের কিছুটা আস্থা আছে কিংবা কোনো আস্থা নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখছেন নাইজেরিয়ার ৭৯%, ইসরায়েলের ৬৯%, কেনিয়ার ৬৪%, হাঙ্গেরির ৫৩% এবং ভারতের ৫২% উত্তরদাতা। আর ন্যূনতম আস্থার কথা জানিয়েছেন মেক্সিকোর ৮%, সুইডেনের ১৫%, তুরস্কের ১৬% জার্মানির ১৮% এবং স্পেনের ১৯%।
জলবায়ু ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে ট্রাম্প
জরিপের ১৭টি দেশে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর বেশি আস্থা লক্ষ্য করা গেছে। সুইডেন, পোল্যান্ড, এবং যুক্তরাজ্যে এই পার্থক্য সবচেয়ে বেশি।
ডান ঘরানার উত্তরদাতারা ট্রাম্পকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
জলবায়ু নীতির বিষয়ে ট্রাম্পের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব কম দেখা গেছে। মাত্র ২১% উত্তরদাতা মনে করেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সৃষ্ট জটিলতা মোকাবিলা করতে পারবেন ট্রাম্প।
এদিকে ৩৩% উত্তরদাতা মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সমাধান করতে পারবেন। আর ২৯% উত্তরদাতার মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল ও এর প্রতিবেশীদের মধ্যে সংঘাতের সমাধান করতে পারবেন।