জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষা নিয়ে কম-বেশি সব শিক্ষার্থীর মনেই অনেক স্বপ্ন থাকে। কিন্তু শিক্ষাজীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষাটি মুবাশিরা সাদিক সাইদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে এসেছিল। বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথেই যে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছিল এ ছাত্রীকে।
তবে দুর্ঘটনায়ও আহত হয়েও দমে যায়নি মুবাশিরা সাদিক সাইদ। অদম্য ইচ্ছা এবং মনোবলের জোরে অ্যাম্বুলেন্সে শুয়েই দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে আঞ্জুমান-ই-ইসলাম স্কুলের এ শিক্ষার্থী। ভারতের মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা পারাপারের সময় সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট রোডের কাছে গাড়ির ধাক্কায় আহত হয় মুবাশিরা সাদিক সাইদ। দুর্ঘটনায় তার বাঁ পায়ে গভীর ক্ষত হয়।
মুবাশিরাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার করতে হয়। তবে অস্ত্রোপচারের টেবিলে যাওয়ার আগেই সে পরীক্ষক ও স্কুল শিক্ষিকাদের কাছে বাকি পরীক্ষাগুলো দেওয়ার ইচ্ছের কথা জানায়।
প্রধান পরীক্ষক সন্দীপ কারমালে বলেন, “আমার পরীক্ষা কেন্দ্র সেন্ট স্ট্যানিসলাস উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর আমরা ওই ছাত্রীর স্কুলের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
আঞ্জুমান-ই-ইসলাম স্কুলের অধ্যক্ষ সাবা প্যাটেল বলেন, “হাসপাতালে মুবাশিরা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। মুবাশিরা মেধাবী ছাত্রী। স্কুলের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাই চাচ্ছিলেন যেন সে পরীক্ষা দিতে পারে। এরপর আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করি।”
বোর্ড প্রধান সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুবাশিরাকে অ্যাম্বুল্যান্সে বসে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেন। সেন্ট স্ট্যানিসলাস উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করা হয় বলে জানান সন্দীপ কারমালে।
সাবা প্যাটেল বলেন, “দুর্ঘটনার পরদিন অর্থাৎ শনিবার মুবাশিরা সাদিক সাইদের বাড়িতে গিয়ে শিক্ষকরা দেখতে পান সে পড়াশোনায় ব্যস্ত। মুবাশিরার বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় স্কুলই তার চিকিৎসার পুরো দায়িত্বই নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সোমবার অ্যাম্বুলেন্সে শুয়েই মুবাশিরা পরীক্ষা দেয়। এমনকি তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলেও জানায় সে।”
মুবাশিরার ভাষ্য, “পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষকরা আমাকে উৎসাহিত করে। মা-বাবাও আমার পাশে ছিল। আমি আমার শিক্ষকদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এভাবেই (অ্যাম্বুলেন্সে) আমি বাকি পরীক্ষাগুলো দিতে চাই।”