৩-২ গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় লেগ খেলতে নেমেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করতে যে আক্রমণাত্মক মনোভাব ও নিয়ন্ত্রিত ফুটবল খেলার প্রয়োজন ছিল দলটির, তার কিছুই দেখাতে পারেনি তারা। উল্টো দুর্দান্ত রিয়াল মাদ্রিদের কাছে নাকানি-চুবানি খেয়ে প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে গার্দিওলার শিষ্যদের।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় লেগে সিটিকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৩ গোলের বিশাল ব্যবধানে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা।
এ দিন ম্যাচের সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়ালের তিনটি গোলের সবগুলোই এসেছে তার পা থেকে। অপ্রতিরোধ্য এমবাপ্পেকে ঠেকাতেই সবটুকু শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায় সিটির খেলোয়াড়দের। আর ভিনিসিউস, রদ্রিগো, বেলিংহ্যাম ও ফেদেরিকো ভালভের্দেদের যৌথ আক্রমণে দিশেহারা হয়ে দুস্বপ্নের মতো এক রাত পার করেছে ম্যানচেস্টারের দলটি।
গোল দিয়েই কার্যত ম্যাচটি শুরু করে রিয়াল মাদ্রিদ। চতুর্থ মিনিটে নিজেদের ডি-বক্সের সামান্য উপর থেকে ডিফেন্ডার রাউল আসেন্সিওর দুর্দান্ত এক উড়ন্ত লং পাস ধরে সিটির ডিফেন্স ভেঙে ঠিকানা খুঁজে নেন এমবাপ্পে। আক্রমণের ধারা অব্যাহত রেখে ৩৩তম মিনিটে আরও একটি দর্শনীয় গোল করে দলকে তিন গোলের লিড এনে দেন তিনি। এবারের গোলটির মূল কারিগর ছিলেন রদ্রিগো। সিটির বক্সে ঢোকার মুখে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের মাঝ দিয়ে এমবাপ্পেকে পাস দেন তিনি, আর তা থেকে ব্যবধান বাড়াতে মোটেও কষ্ট হয়নি ফরাসি তারকার।
অসুস্থতার কারণে বেঞ্চে থাকা কেভিন ডি ব্রুইনে ও আর্লিং হালান্ডের অুনপস্থিতিতে এদিন বলের ওপর একেবারেই নিয়ন্ত্রণ হারায় সিটি। প্রথমার্ধে গোলে শট নেওয়া তো দূরের কথা, তেমন কোনো আক্রমণই শানাতে পারেনি তারা। সেইসঙ্গে দুর্দান্ত রিয়ালের ক্রমাগত চাপে বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল তাদের।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে ডি ব্রুইনে, হালান্ডকে নামানো হতে পারে বলে ধারণা করা হলেও তাদের আর মাঠে নামাননি গার্দিওলা। অপরদিকে, আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে রিয়াল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাচের ৫২ ও ৫৬তম মিনিটে দারুণ দুটি গোলের সুযোগ তৈরি করে রিয়াল। তবে সেগুলোতে সফল না হলেও ৬০তম মিনিটে হ্যাটট্রিক গোলটি করে সিটিকে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে দেন এমবাপ্পে।
সিটির সব খেলোয়াড় মিলে এ সময় ডিফেন্স করলেও ডি বক্সের বাইরে এমবাপ্পে যখন বল ধরেন, তখন তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোরও প্রয়োজন মনে করেনি কেউ, ফলে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে কোনাকুনি নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। এটি রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এমবাপ্পের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম। আর দলটিতে নিবন্ধনের পর ৩৮ ম্যাচ থেকে ২৭তম গোল তার।
একই সঙ্গে দারুণ একটি মাইলফলক স্পর্শে করেছেন ফরাসি স্ট্রাইকার। পেশাদার ফুটবলে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৫০০ গোলে অবদান (৩৫৮ গোল, ১৪২ অ্যাসিস্ট) রাখার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি। যোগ করা সময়ে সিটিকে অবশ্য স্বান্তসূচক একটি গোল এনে দেন মিডফিল্ডার নিকো গন্সালেস। ফলে ৩-১ গোলে শেষ হয় ম্যাচ। আর ৬-৩ গোলের অগ্রগামিতায় সিটিকে কাঁদিয়ে পরের রাউন্ডে উঠে যায় মাদ্রিদ জায়ান্টরা।
দিনের প্রথম ম্যাচে স্পোর্তিংয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। তবে প্রথম লেগে স্পোর্তিংয়ের মাঠে ৩-০ গোলে জয় পাওয়ায় সহজেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে নিকো কোভাকের দল। অপর ম্যাচে লিগ প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রেস্তকে তুলোধুনা করে নকআউটে উঠেছে লুইস এনরিকের পিএসজি। দ্বিতীয় লেগে দলটিকে ৭-০ গোলে হারিয়েছেন দেম্বেলে-বারকোলারা। প্রথম লেগে ৩-০ গোলের জয়ের ফলে ১০-০ গোলের অগ্রগামিতায় শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছে প্যারিসের ক্লাবটি।