বার্সেলোনার সঙ্গে ব্যবধান বাড়িয়ে তিন পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বেতিসের মাঠে খেলতে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে শুরুতে এগিয়ে গিয়েও ধারহীন পারফরম্যান্সে ম্যাচটি হেরে তিন পয়েন্ট তো খুইয়েছেই, উল্টো বার্সেলোনা ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে আগে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল।
শনিবার (১ মার্চ) আন্দালুসিয়ার বেনিতো ভিয়ামারিন স্টেডিয়ামে লা লিগার ২৬তম রাউন্ডের ম্যাচটি রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
এই হারে ফের তিনে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে গতবারের শিরোপাজয়ীদের। হারের ফলে ২৬ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে এখনও বার্সেলোনার সঙ্গে পয়েন্ট সমতায় দুইয়ে আছে রিয়াল, তবে আগামীকাল নিজেদের ম্যাচটি জিতে তাদের চেয়ে তিন পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বার্সেলোনার। এছাড়া, ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে তিনে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সামনেও সুযোগ এসেছে দুইয়ে ওঠার। নিজেদের ম্যাচটি জিতে তারাও নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে দুই পয়েন্ট এগিয়ে যেতে পারে।
নিজেদের ম্যাচে চারে থাকা অ্যাথলেটিক বিলবাউয়ের বিপক্ষে কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠে নামবে দিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা।
বেতিসের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ব্রাহিম দিয়াস। কিন্তু দুই অর্ধে দুই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল মাদ্রিদ, যা থেকে পরে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি দলটির।
বেনিতো ভিয়ামারিনে এদিন সাবধানি শুরু করে দুদলই। যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে গোলের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করায় কিছুটা ধীরগতিতে শুরু হয় খেলা। তবে দশম মিনিটে চকিতে আক্রমণে উঠে গোল পেয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। অবশ্য এই গোলে অ্যাসিস্টের জন্য ফেরলঁ মদিঁর নাম থাকলেও মূল কারিগর ছিলেন তারই জাতীয় দলের সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপ্পে।
সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে বেতিসের বক্সের কিছুটা ওপর থেকে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সামলে বক্সের মধ্যে বাঁ দিকে অসাধারণ এক পাস বাড়ান এমবাপ্পে। এরপর ছুটে গিয়ে বল ধরে গোলমুখে ক্রস দেন মদিঁ, আর ট্যাপ-ইনে বল ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন বেলিংহ্যামের নিষেধাজ্ঞায় তার পজিশনে একাদশে সুযোগ পাওয়া দিয়াস।
ত্রয়োদশ মিনিটে আরও একটি ভালো আক্রমণে ওঠে রিয়াল, তবে এবার তাদের আটকে দেয় বেতিস।
এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর খোলস থেকে বেরোনো শুরু করে রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যদিকে, সমতায় ফেরার চেষ্টা শুরু করে বেতিসের খেলোয়াড়রাও। ফলে চলতে থাকে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ। তবে এই সময়ে আক্রমণের পাল্লা ভারী থাকে তারকায় ঠাঁসা রিয়ালের দিকেই।
রিয়ালের আক্রমণের চাপ সামলে ৩০তম মিনিটে প্রথমবার ভালো আক্রমণে ওঠে বেতিস, প্রথমবার গোলে শটও নেয় তারা; কিন্তু দুর্বল শটে সমতায় ফেরার ভালো সুযোগ নষ্ট করেন হেসুস রদ্রিগেস।
এর চার মিনিট পর অবশ্য আর ভুল হয়নি বেতিসের। দারুণ এক ফিনিশিংয়ে দলকে সমতায় ফেরান জনি কারদোসো।
ড্রিবলিং করে রিয়ালের বক্সে ঢুকে গোলমুখে ডিফেন্ডাররা তাকে ব্লক করে দিলে বক্সের ঠিক পেছনে ব্যাক পাসে বল উড়িয়ে দেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ইসকো। এরপর বল ধরে কুচো এরনান্দেস জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করতে গেলে কর্নারের বিনিময়ে তা প্রতিহত করেন রিয়ালের এক ডিফেন্ডার। তবে কর্নার থেকে ইসকোর পাঠানো ক্রস লাফিয়ে উঠে চমৎকার এক হেডারে জালে জড়িয়ে দেন কারদোসো।
বেতিস সমতায় ফিরতেই ঝেপে নামে বৃষ্টি এবং তা অব্যাহত থাকে শেষ পর্যন্ত।
৪৪তম মিনিটে ডান পাশ থেকে আন্তোনির দেওয়া ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে পারলেই এগিয়ে যেতে পারত বেতিস, কিন্তু বল তার উচ্চতার বেশ খানিকটা নিচে থাকায় তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
যোগ করা পাঁচ মিনিটের তৃতীয় মিনিটে আরও একটি গোল পেতে পারত বেতিস। তবে কারদোসোর মাটি কামড়ানো হেডার অসাধারণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে প্রতিহত করেন থিবো কোর্তোয়া। এ সময় বেতিসের আরও দুটি আক্রমণ রুখে দেন দলটির এই বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ফলে সমতায়ই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দশম মিনিটে গোল পাওয়া শটটিই ছিল প্রথমার্ধে রিয়ালের গোলে নেওয়া একমাত্র শট। তিনটি শট নিয়ে ওই একটিই কেবল লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয় আনচেলত্তির শিষ্যরা। অপরদিকে, ৪৩ শতাংশ সময় বলের পজেশন রেখেও ৯টি শট নিয়ে তার দুটি লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয় বেতিস।
বিরতি থেকে ফিরেই রিয়ালের ওপর ছড়ি ঘোরাতে থাকে মানুয়েল পেল্লেগ্রিনির শিষ্যরা। ৪৮তম মিনিটে একটি সুযোগও পায় তারা। এরপর ৫৩তম মিনিটে স্বাগতিকদের পেনাল্টি দিয়ে বসেন আন্টোনিও রুয়েডিগার।
দুর্দান্ত এক পাল্টা আক্রমণে উঠে সতীর্থের কাছ থেকে বল ধরে রিয়ালের বক্সে ঢুকে পড়েন হেসুস রদ্রিগেস। তখন তার সামনে শুধুই একজন ডিফেন্ডার, আর ডান পাশে ফাঁকায় অপেক্ষারত আন্তোনি। এই সময়ে পেছন থেকে ছুটে এসে রদ্রিগেসকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন রুয়েডিগার। ফলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তারপর নিখুঁত স্পটকিকে দলকে এগিয়ে নেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ইসকো।
গোল পাওয়ার তিন মিনিট পর আরও একটি পাল্টা আক্রমণে ওঠেন আন্তোনি। তবে বক্সের বেশ বাইরে থেকে তাকে ফেলে দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন ডাভিড আলাবা। তিন মিনিট পর কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে মাথা দিলেও লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন মার্ক বার্ত্রা।
শুরুতে এগিয়ে গিয়েও পরপর দুই গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ার পর হুঁশ ফেরে রিয়ালের। ধীরে ধীরে চেনা ছন্দে ফেরার চেষ্টা শুরু করে তারা। মাঝে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় বদলও করেন আনচেলত্তি। এর ধারাবাহিকতায় ৮৩তম মিনিটের শেষ দিকে দারুণ একটি শট নেন ভিনিসিউস, কিন্তু ঝাঁপিয়ে তা ঠেকিয়ে ব্যবধান ধরে রাখেন বেতিস গোলরক্ষক আদ্রিয়ান।
শেষের দিকে বেতিসকে একেবারে চেপে ধরে রিয়াল। কিন্তু সমন্বয়ের অভাব আর বেতিসের খেলোয়াড়দের পাল্টা আক্রমণের ওঠার সামর্থ্যের কথা ভেবে অল-আউট আক্রমণে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাদের। ফলে ম্যাচে আর ফেরা হয়ে ওঠেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
শেষমেশ শেষের বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি এবং জয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন বেতিসের খেলোয়াড়রা। অন্যদিকে, হতাশ রিয়ালের খেলোয়াড়দের কারও কারও চোখ দিয়ে অশ্রু বের হলো কিনা, বৃষ্টির জলে তা আর বোঝা যায়নি।
এই জয়ে ২৬ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ছয়ে উঠে এসেছে রিয়াল বেতিস। আগামী রবিবার লা লিগায় তাদের পরের ম্যাচ ১৬ নম্বরে থাকা লাস পালমাসের বিপক্ষে। অন্যদিকে, মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলার পর রবিবার ৭ নম্বরে থাকা রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে লা লিগায় মাঠে নামবে আনচেলত্তির দল।