Sunday, March 16, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

৬ বছরে ১২ হাজার হেক্টর কৃষিজমি হারিয়েছে ফরিদপুর

ফরিদপুর সদর ও নয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ৬ বছরে ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে ফসিল জমির পরিমাণ

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ০৮:৫৮ পিএম

কৃষিক্ষেত্রে ফরিদপুরের মাটির সুনাম দেশব্যাপী। এমন কোনো ফসল নেই যে ফরিদপুরের মাটিতে জন্মে না। পাট পেঁয়াজ তো উৎপাদনে দেশ সেরা। আর সেই ফরিদপুরে আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে। যে হারে আবাদি জমি কমছে তাতে ভবিষ্যতে আবাদি জমির সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কাগজ কলমে আছে জাতীয় কৃষি নীতি-১৯৯৯। এই কৃষিনীতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় অপরিকল্পিত ইটভাটা স্থাপন, শিল্প-কারখানা স্থাপন, আবাসনসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠছে কৃষি জমিতে। ফলে গত ৬ বছরে জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি হ্রাস পেয়েছে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর অঞ্চলের মোট ফসলি জমির পরিমাণ ৩ লাখ ৩২ হাজার ৯১৮ হেক্টর। এর মধ্যে নিট ফসলি জমি ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫৮ হেক্টর। পতিত জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৪৬২ হেক্টর। এক ফসলি জমি ১৪ হাজার ১৭ হেক্টর। দো-ফসলি জমি ৭১ হাজার ৭১২ হেক্টর এবং তিন ফসলি জমির পরিমাণ ৫২ হাজার ৪০৪ হেক্টর।

২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী ফরিদপুর জেলার মোট আয়তন ২০৭৩ বর্গ কিলোমিটার (৮০০ বর্গমাইল)। মোট জনসংখ্যা ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৭ জন।

ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়/ ঢাকা ট্রিবিউন


ফরিদপুর সদর ও নয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ৬ বছরে ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে ফসিল জমির পরিমাণ। গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জেলা জুড়ে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৮ হেক্টর। হ্রাস পেতে পেতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে দাঁড়িয়েছে।

জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সর্বত্রই প্রতিদিন অবৈধভাবে আবাদি জমি ধ্বংস করে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। জাঙ্গালিয়া এলাকা থেকে ভেকু মেশিন (খনন যন্ত্র) দিয়ে অবৈধভাবে মাটি খনন করে গাড়িতে জাংগালিয়া এবং বিলমান্দলার নতুন নির্মিত রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত মাটি নেওয়ার কারণে রাস্তার দুই পাশ ভেঙে যাচ্ছে।

ফরিদপুর শহর ঘেঁষে বিভিন্ন গ্রাম এলাকার কৃষি জমিতে একের পর এক গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা। এতে পরিবেশ ও ফসল উৎপাদন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বসতি স্থাপনেও কমছে আবাদি জমি।

এদিকে পদ্মা নদী থেকে সারাবছর অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালি ও কৃষি জমির টপ সয়েলের সহজলভ্যতার কারণে এরইমধ্যে শহর সংলগ্ন ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে এক ডজনেরও বেশি ইটের ভাটা। এর মধ্যে একেবারেই গ্রামীণ এলাকা আইজদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গিতে মাত্র ২০০ গজের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি ইটভাটা। এভাবে কৃষি জমির ওপর একের পর এক ইটের ভাটা গড়ে ওঠায় ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশগুলো বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের কারণে ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হচ্ছে। ইট ভাটার চিমনির ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ ছড়াচ্ছে। ধোঁয়া ও ধুলা দূষণে বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ।


৬ বছরে জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি হ্রাস পেয়েছে/ ঢাকা ট্রিবিউন


সরেজমিনে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গিতে কৃষি জমি ধ্বংস করে পাশাপাশি তিনটি ইটের ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁন মিয়া ও লিয়াকত মাতুব্বরের দুটো পুরনো ভাটার পাশাপাশি আরশাদ ব্যাপারী মালিকানাধীন এবিবি ব্রিক নামে নতুন আরও একটি ইটের ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি খলিফা কামাল উদ্দিন বলেন, “কৃষি জমি নষ্ট করে ভাটা তৈরি হোক এটা আমরাও চাই না। তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তর কিভাবে তাদের অনুমতি দেয়?”

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফরিদপুরের নগরকান্দায় ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। ভাটা মালিকরা ফসলি জমি কেটে মাটি গিলে খাচ্ছে। এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা যায়।

মাটি কাটছেন এমন একটি ফসলি জমির মালিক তালমা ইউনিয়নের বিলনালিয়া গ্রামের মোসলেম মোল্লা বলেন, “মাটির ভালো দাম পাওয়ায় জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছি। জমির ফসলে তেমন লাভ না হওয়ায় মাটি বিক্রি করে পুকুর খনন করছি।”

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলার টোংরাইল গ্রামের সুনীল বিশ্বাস, কালি কুমার বালা, জয়দেব বিশ্বাস, সুতালীয়া গ্রামের অমর বিশ্বাস, ময়না গ্রামের মুকুল কুমার বোস, তারেক হোসেন, খরসুতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আল মামুন রনি বলেন, “আমরা কৃষিকাজ করছি শৈশবকাল থেকেই। দাদা-বাবার হাত ধরে কৃষি কাজে হাতেখড়ি। আগে যে পরিমাণ জমিতে আমাদের পরিবার চাষাবাদ করত, এখন তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ জমিতে ফসল ফলাই।”

বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুসা মিয়া বলেন, “আবাদি জমি হ্রাসের নানা ধরনের কারণের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের কৃষিক্ষেত্রে। প্রতিবছর বেশ কয়েক শতাংশ হারে কমছে ফরিদপুরের আবাদি জমির পরিমাণ।”

নগরকান্দা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এনএম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে কৃষি জমির ক্ষতি করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী বলেন, “জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বাড়ি ঘর নির্মাণ, ফসলি জমিতে ইটভাটা, পুকুর খননসহ নানা কারণে দিন দিন ফসলি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে।”

   

About

Popular Links

x