পাহাড় আর সমুদ্রবেষ্টিত হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রাম পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি জমি দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়। সেখানে দৃষ্টিনন্দন পর্যটনককেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। তারই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শুরু হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ফুলের মেলা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বেরিয়ে ঝাউগাছ আর জলাশয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া “বন্দর-ফৌজদারহাট টোল রোড” যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে। ফৌজদারহাট থেকে এ টোল রোড ধরে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়ে রঙবেরঙের ফুলের বাহার।
দেড় দশকের বেশি সময় বেদখলে থাকা সাগরের কাছে ১৯৪ একরের বেশি জমি পুনরুদ্ধার করে সেখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তার আগে ১০ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি সেখানে হবে ফুল উৎসব।
সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর ছলিমপুর মৌজার বালুচর শ্রেণির এ জায়গাটি দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল “শুকতারা” নামে একটি পর্যটনকেন্দ্র ও রেস্টুরেন্ট। সম্প্রতি সেখান থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন।
উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, “পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম পর্যটকদের তেমনভাবে আকৃষ্ট করতে পারছে না। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে উদ্ধার করা এ জমি ঘিরে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যেখানে তৈরি করা হবে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট।”
পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে প্রাথমিকভাবে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে। তার আগে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পার্কটি দৃশ্যমান হবে। তৈরি করা হবে আবহাওয়া ও মাটির ধরন অনুযায়ী নানা রকমের ফুল বাগান।
সহকারী কমিশনার আশরাফুল জানান, ফুলের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করতে আগামী ১০-১৮ ফেব্রুয়ারি “ফ্লাওয়ার ফেস্টিভাল” আয়োজন করা হয়েছে। পরে সেখানে করা হবে স্থায়ী ফুল বাগান। থাকবে নার্সারি, জলাশয়ে থাকবে কায়াকিং ও তার পাড়ে ঘুড়ি ওড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে পার্কে।
সাগর পাড়ের এ ফুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, জলাশয়ের পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে রঙবেঙরের ডালিয়া ফুল। খালি জায়গায় শেড তৈরি করে লাগানো হয়েছে হরেক রকমের টিউলিপ। লাল-হলুদ-সাদা-মেরুন রঙের টিউলিপ ফুটে আছে। পাশেই লাগানো হয়েছে নানা রকমের ফুলের গাছ।
খোলা জায়গার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দায়িত্ব পাওয়া ফৌজদারহাটের ইফা নার্সারির স্বত্বাধিকারী কাউসার আল ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রদর্শনীর জন্য ১২২ প্রজাতির শীতকালীন ফুলের তিন লাখ গাছ লাগানো হবে। ইতোমধ্যে দুই লাখ গাছ লাগানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম ছাড়াও যশোর, রংপুর, ঢাকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব ফুল গাছ আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে ওই এলাকার মাটিতে লবাণাক্ততার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাইরে থেকে মাটি এনে গাছ লাগানো হয়েছে। আর অনেক গাছ প্যাকেটসহ মাটি খুঁড়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন বাগানে কাজ করা মালি মো. হানিফ।
তিনি জানান, যেখানে এখন ফুল দেখা যাচ্ছে, সেই জমি বর্ষার সময় তলিয়ে যায়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সহকারী কমিশনার আশরাফুল জানালেন, আপাতত বাগানটি করা হচ্ছে মেলার জন্য। পানি ওঠানামা এবং মাটির শ্রেণিভেদ ও উর্বরতার ওপর ভিত্তি করে পার্কে স্থায়ী বাগান হবে।
“নাগরিক ব্যস্ততা ছেড়ে লোকজন এখানে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে সময় কাটাবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা। এ পার্ক সপ্তাহে একদিন প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হবে। তারা সেখানে নিজেদের মত করে সময় কাটাবে।”
এছাড়াও বয়স্ক, এতিম এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যও এ পার্কে আসার ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান সহকারী কমিশনার আশরাফুল।