বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করেছে মালদ্বীপ। দেশটিতে বর্তমানে ১ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এজন্য নতুন করে আর শ্রমিক নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে মালদ্বীপের হাইকমিশন।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটির নতুন নিয়ম অনুসারে, যে কোনো দেশ থেকে মাত্র ১ লাখ কর্মী দেশটিতে কাজ করতে পারবেন।
গত ২২ মে মালদ্বীপ হাইকমিশনের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১ লাখের বেশি কর্মী নেওয়া হবে না।
এর আগে, অবৈধ নিয়োগের কারণে বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে মালদ্বীপের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মালদ্বীপের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফাতিমাথ রিফাথ স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রায় এক মাস আগে কার্যকর করা হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “মালদ্বীপের কিছু কোম্পানি জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
এছাড়া দেশব্যাপী অনিবন্ধিত বা অবৈধ অভিবাসী সমস্যা সমাধানেও অভিযান শুরু করেছে মালদ্বীপ সরকার।
অভিযানের অংশ হিসেবে “অপারেশন কুরাঙ্গি” এবং কর্তৃপক্ষ ৭০৫ জন প্রবাসীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করেছে।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে মালদ্বীপ হাইকমিশন কর্মী না নেওয়ার কারণ হিসেবে কোটা পূর্ণ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে।তারা এও বলেছে, কোটা বৃদ্ধি এবং ভিসা পুনরায় চালু করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে অভিবাসীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, “আপনি যে কোম্পানি থেকে ভিসা পেয়েছেন সেখানে আপনাকে কাজ করতে হবে। এই আইন লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যে কোনো সময় আপনাকে গ্রেপ্তার ও নির্বাসিত করা হতে পারে।”
এ কারণে বাংলাদেশের বেশ কিছু অদক্ষ শ্রমিককে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার ও বিতাড়িত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যারা বর্তমানে এদেশে কর্মরত আছেন এবং যারা ভবিষ্যতে মালদ্বীপে আসবেন তাদের সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য আবারও অনুরোধ করা হলো।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছিলেন।
পরে গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
দীর্ঘদিন পর ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য শ্রমবাজার পুনরায় চালু করা হয়। যার ফলে কিছু অসাধু চক্র অবৈধ শ্রমিক নিয়োগ করা শুরু করে।
কাজের অনুমতি ছাড়া ভিসায় মালদ্বীপে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক এবং গ্রেপ্তারের ভয়ে তাদের অনেকেই এখনও বেকার।
মালদ্বীপে কতজন বাংলাদেশি কাজ করছেন?
গত বছরের ডিসেম্বরে একটি সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইহুসান বলেছিলেন, “বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ১৩৯,২২০টি ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করা রয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৩৯,০০৪ জন নিয়মিত প্রয়োজনীয় ওয়ার্ক পারমিট ফি প্রদান করেন।
ডিসেম্বর পর্যন্ত মালদ্বীপে বসবাসকারী বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৯০,৬৪২। যা একটি একক দেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে বেধে দেওয়া সীমা ১০০,০০০-এর নিচে।
বাংলাদেশি কর্মীরা মালদ্বীপে গিয়ে প্রধানত পর্যটন এবং আতিথেয়তার কাজ করে। যেমন হোটেল স্টাফ, রেস্তোরাঁর ওয়েটার এবং শেফ হিসেবে কাজ করে তারা। মালদ্বীপে যেতে প্রত্যেকের মাইগ্রেশন খরচ বাবদ প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা দিতে হয়।
২০২৩ সালে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) একটি সমীক্ষায় বলা হয়, মালদ্বীপে মাত্র ৫৩% বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক প্রতিশ্রুত মজুরি পান; তাদের গড় মাসিক আয় ৩৫,১৪৭ টাকা।
এতে আরও বলা হয়, মালদ্বীপে নথিভুক্ত বাংলাদেশি কর্মীদের গড় মাসিক আয় ৩৭,০৬৬ টাকা। আর নিবন্ধনের বাইরে থাকা কর্মীরা আয় করেন মাসে ২৫,৬৫০ টাকা।
মালদ্বীপে ৩৩% বাংলাদেশি হোটেল এবং রিসোর্টে, ২৫% নির্মাণকাজে, ৭% দিনমজুর হিসেবে এবং ২% অভিবাসী গৃহকর্মী হিসেবে এবং মৎস্য খাতে কাজ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ অর্থবর্ষের জুলাই-এপ্রিল মাসে বাংলাদেশি কর্মীরা মালদ্বীপ থেকে ৩১.৬৯ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।