প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস এবং জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে মাছের ঘের, প্লাবিত হয়েছে ফসলের জমি। ফসলের জমি নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৩,৭৯৬ জন কৃষক। ক্ষতি হয়েছে ৪২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকার ফসলের। লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে ৩,৬০০ পুকুর এবং ৯,১১৫টি ঘেরে থাকা মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, পোনা। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের।
খুলনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, রিমালের আঘাতে খুলনার নয়টি উপজেলার মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া ও রূপসা উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে ছয়টি উপজেলার ৩৫৫.৩০ হেক্টর জমির ৩,৬০০টি পুকুর এবং ১০,২২৩.৭৫ হেক্টর জমির ৯,১১৫টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে ১,৫৯০ হেক্টর জমির ১,৩৫৬টি কাঁকড়া/কুচিয়া খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারের ঝড়ে মোট ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্যসম্পদ। যার মধ্যে ৬৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৩,০৭৮ মেট্রিক টন মাছ, ১১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ২,৫৬৪ মেট্রিক টন চিংড়ি, ২০ কোটি ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের ৬৩৬ মেট্রিক টন পোনা, ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১০২.২০ মেট্রিক টন কাঁকড়া ও কুচিয়া, ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ২৭০ মেট্রিক টন পিএল, ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২০টি নৌকা-ট্রলার-জলযান এবং ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকার অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “রিমালের প্রভাবে খুলনায় মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাদা মাছ, চিংড়ি, পোনা, কাঁকড়া ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।”
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের ১৩,৭৯৬ জন কৃষকের ১৭,৭৯৬.৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১,০৬৮.৪০ হেক্টর জমির ১৫,৩৭৮.২০ মেট্রিক টন ফসল। যার মূল্য ৪২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকা। এর মধ্যে ৭৭ জন কৃষকের আউশ ধানের বীজতলার ৫৪.৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়ে ক্ষতি হয়েছে ৭৮,৮০০ টাকার, ৩৯ জন কৃষকের ১,৭৫২.৫০ হেক্টর জমির আউশের আবাদে ক্ষতি হয়েছে ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকার, ১৩৫ জন কৃষকের ১,৪৪৭ হেক্টর জমির পাটের ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা, ৫,৮৪৪ জন কৃষকের ৫,৭৫৫ হেক্টর জমির সবজিতে ক্ষতি ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, ৩৫ জন কৃষকের ২১ হেক্টর জমির টমেটোর ক্ষতি ১২ লাখ টাকা, ৭৯১ জন কৃষকের ৪৮৫ হেক্টর জমির তিলে ক্ষতি ৫৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৪৫১ জন কৃষকের আক্রান্ত ২৭০ হেক্টর জমির মুগ ডালে ক্ষতি ২২ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪০ টাকা, ২৮৫ জন কৃষকের ১৭৫ হেক্টর জমির মরিচে ক্ষতি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা।
তবে ৩৩ হেক্টর জমির আদা, ২০৩ হেক্টর জমির হলুদ, ১১৮ হেক্টর জমির তরমুজ, ৭২ হেক্টরের আখ, ৩,৭৫০ হেক্টর জমির বোনা আমন এবং ৩০ হেক্টর জমির চিনাবাদাম আক্রান্ত হলেও আর্থিক ক্ষতি দেখানো হয়নি।
এছাড়া দুইজন কৃষকের আক্রান্ত ১.৫০ হেক্টর জমির ভুট্টায় ক্ষতি ৬৩,৭৫০ টাকা, ৩,৮৬৫ জন কৃষকের ১,৭০৫ হেক্টর জমির আমের ক্ষতি ১০ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা, ৬০ জন কৃষকের ৭৭ হেক্টর জমির লিচুতে ক্ষতি ৪০ লাখ টাকা, ৭৬৭ জন কৃষকের ৩১০ হেক্টর জমির পেঁপের ক্ষতি এক কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, ১,২৩৯ জন কৃষকের ৫৪৫ হেক্টর জমির কলার ক্ষতি ২ কোটি ৭২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ৮১ জন কৃষকের ৮৭৭ হেক্টর পানের ক্ষতি এক কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা এবং ১২৫ জন কৃষকের ১১৫ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৬৩ লাখ টাকার।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ফসলের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।”