Friday, April 25, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ২০২৫: নতুন রেটে কত মুনাফা পাবেন

২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা এই পুননির্ধারিত মুনাফা হারের সুবিধা ভোগ করবেন

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম

১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রসহ প্রতিটি সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পুননির্ধারিত করা হয়েছে। নতুন রেটে মুনাফা হার বিগত সব সংস্করণের তুলনায় সর্বাধিক। মেয়াদপূর্তির পাশাপাশি নগদায়নে রিটার্নের হারও পূর্বাপেক্ষা বেশি। একই সঙ্গে বিনিয়োগ সীমাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিবর্ধিত করা হয়েছে।

অবশেষে গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বিগত উৎসে কর অব্যাহত থাকার বিষয়টি প্রকাশ করা হয়। ফলে মেয়াদ শেষে বা নগদীকরণের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা তাদের প্রাপ্য অর্থের ব্যাপারে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছে।

চলুন, সেগুলোর মধ্য থেকে ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের পরিবর্তিত মুনাফা হারের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের পুনর্নির্ধারিত মুনাফার হার

৫ বছর মেয়াদের এই স্কিমে ভিন্ন বিনিয়োগ সীমারেখায় নগদায়ন ও মেয়াদপূর্তিতে প্রদেয় মুনাফা নিম্নের টেবিলে উল্লেখ করা হলো-

টেবিল: ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয় ব্যবস্থায় বিভিন্ন বিনিয়োগের বিপরীতে ধার্য করা মুনাফার হার

সময়

বিনিয়োগ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত

 

বিনিয়োগ ৭ লাখ ৫০ হাজার ১ টাকা হতে তদূর্ধ্ব

 

 

৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে উৎসে কর (%)

 মুনাফার হার (%)

 

৫,০০,০০১ টাকা থেকে ৭,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে উৎসে কর (%)

মুনাফার হার (%)
 

উৎসে কর (%)
 

মুনাফার হার (%)
 

১ম বছরান্তে

 

১০.১৩

১০

১০.১৩

১০

১০.১১

২য় বছরান্তে

 

১০.৬৪

 

১০.৬৪

১০.৬২

৩য় বছরান্তে

 

১১.১৯

১১.১৯

 

১১.১৭

৪র্থ বছরান্তে

 

১১.৭৮

১১.৭৮

১১.৭৫

 

৫ম বছরান্তে

 

১২.৪০

 

১২.৪০

 

১২.৩৭

 

সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ লাখ (৭,৫০,০০০) টাকা মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে মুনাফা হবে সর্বোচ্চ ১২.৪০% (১২.৪০%) হারে। যারা ৭ লাখ ৫০ হাজার (৭,৫০,০০১) টাকার বেশি মূলধন দিয়ে সঞ্চয়পত্রটি কিনবেন, তাদের জন্য এই লাভ দাড়াবে সর্বোচ্চ ১২.৩৭%।

মুনাফায় আরোপিত উৎসে করের জন্য বিগত বিনিয়োগ সীমা অব্যাহত রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ ৫ লাখ (৫,০০,০০০) টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে উৎসে কর ৫%, আর ৫ লাখ টাকার বেশি (৫,০০,০০১ বা তদূর্ধ্ব) হলে উৎসে কর ১০%।

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নগদায়ন করলে টেবিলে উল্লিখিত প্রতি অতিক্রান্ত সময়ের জন্য সংশ্লিষ্ট হারে ধার্যকৃত মুনাফাসহ মূল টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

৫ লাখ (৫,০০,০০০) টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারিদের প্রথম বছর শেষে নগদায়নে বার্ষিক ১০.১৩% হারে মুনাফা ধার্য হবে। দ্বিতীয় বছরান্তে নগদায়নে ১০.৬৪%, তৃতীয় বছর শেষে ১১.১৯% এবং চতুর্থ বছর পর ১১.৭৮% মুনাফা পাবেন। সব ক্ষেত্রেই কাটা হবে ৫% উৎসে কর।

৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার (৫,০০,০০১ - ৭,৫০,০০০) টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে প্রথম বছরের নগদায়নে ১০.১৩% হারে মুনাফা হবে। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বছর শেষে নগদায়নে মুনাফা পাওয়া যাবে যথাক্রমে ১০.৬৪%, ১১.১৯% এবং ১১.৭৮%। এক্ষেত্রে প্রতি বছরান্তের মুনাফা থেকে কাটা হবে ১০% উৎসে কর।

৭ লাখ ৫০ হাজার (৭,৫০,০০১) টাকার বেশি মূলধনের গ্রাহকদেরকে যথারীতি ১০% উৎসে কর দিতে হবে। প্রথম বছরান্তের নগদায়ন হিসেবে বার্ষিক লাভের হার হবে ১০.১১%। দ্বিতীয় বছরান্তের নগদায়নে এই হার হবে ১০.৬২%, তৃতীয় বছর শেষে ১১.১৭% এবং চতুর্থ বছর পর ১১.৭৫%।

বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের নতুন মুনাফা হার কারা পাবেন

২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি এবং তার পর থেকে যারা বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন শুধুমাত্র তাদের পুনর্নির্ধারিত হরে মুনাফা দেবে।

কাদের জন্য বাংলাদেশ সঞ্চয় স্কিম

  • শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে প্রত্যেক বাংলাদেশি নাগরিক

নিম্নোক্ত বিধি অনুযায়ী স্বীকৃত বা পরিচালিত ভবিষ্য তহবিল-

  • আয়কর বিধিমালা, ১৯৮৪ (অংশ-২)-এর বিধি ৪৯-এর উপ-বিধি (২)
  • ভবিষ্য তহবিল আইন, ১৯২৫ (১৯২৫-এর ১৯ নং)

আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪-এর ৬-তম তফসিলের পার্ট এ-এর ৩৪ নম্বর অনুচ্ছেদ মতে নিম্নোক্ত আয়ের উৎসসমূহ (অবশ্যই সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনারের মাধ্যমে প্রত্যয়ন করতে হবে)-

  • বীজ উৎপাদন ও স্থানীয় উৎপাদিত বীজ বিপণন
  • ফল ও লতাপাতার চাষ
  • পেলিটেড পোল্ট্রি ফিড্স উৎপাদন
  • হাঁস-মুরগীর খামার
  • গবাদি পশুর খামার
  • দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের খামার
  • মৎস্য খামার
  • ব্যাঙ উৎপাদন খামার
  • রেশম গুটিপোকা পালনের খামার
  • ছত্রাক উৎপাদন
  • উদ্যান খামার প্রকল্প

অটিস্টিকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অটিস্টিকদের সেবায় নিয়োজিত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান (অবশ্যই সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃক প্রত্যয়ন করতে হবে)। মুনাফা প্রদানের পূর্বশর্ত হলো- প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ থেকে আসা মুনাফার সমুদয় অর্থ শুধুমাত্র অটিস্টিকদের জন্য খরচ হবে।

  • এতিমখানা, অনাথ আশ্রম, বা নিবন্ধিত আশ্রয় প্রতিষ্ঠান যেগুলো শিশু পরিবারের মতো দুঃস্থ ও অনাথ শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত
  • যে নিবন্ধিত আশ্রয় প্রতিষ্ঠান প্রবীণদের সেবায় নিয়োজিত

বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা

  • একজন ব্যক্তির নামে হলে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা আর যুগ্ম-নামের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা
  • প্রতিষ্ঠান তাদের ভবিষ্যৎ তহবিলের মোট স্থিতির ৫০% বিনিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু এই পরিমাণটি টাকায় ৫০ (পঞ্চাশ) কোটির বেশি হবে না
  • যেকোনো ফার্মের জন্য অনূর্ধ্ব ২(দুই) কোটি টাকা
  • অনাথ ও দুঃস্থ শিশুদের জন্য নিবন্ধিত আশ্রয় প্রতিষ্ঠান (শিশু পরিবার, অনাথ আশ্রম, এতিমখানা ইত্যাদি), অটিস্টিকদের জন্য নিবেদিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রবীণদের জন্য নিবন্ধিত আশ্রয় কেন্দ্র সর্বোচ্চ ৫(পাঁচ) কোটি টাকা বিনিয়োগ দিতে পারবে।

বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের অন্যান্য সুবিধা

  • সঞ্চয়পত্রের উত্তরাধিকার নিয়োগ দেওয়া যায়
  • সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীর মৃত্যু হলে, নিয়োগ করা উত্তরাধিকার মেয়াদ উত্তীর্ণের পর অথবা তাৎক্ষণিক ভাবেই নগদায়ন করে প্রদেয় মুনাফা-আসল উত্তোলন করতে পারেন।

শেষাংশ

২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা এই পুননির্ধারিত মুনাফা হারের সুবিধা ভোগ করবেন। বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের জন্য মুনাফা দেওয়া হবে ১২.৪০% হারে। আর সাড়ে ৭ লাখের অধিক টাকা বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পাবেন ১২.৩৭% হারে। এর মধ্যে আরোপিত উৎসে কর অনূর্ধ্ব ৫ লাখের জন্য ৫% এবং ৫ লাখ মূলধনের জন্য ১০%। উপরন্তু, মেয়াদের পূর্বে নগদায়নের ক্ষেত্রেও বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে।

   

About

Popular Links

x