পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে শিল্প কোনো তথ্যচিত্রের তুলনায় বেশি কার্যকর বলে মনে করেন ফ্রান্সের এক শিল্পী। উপকরণ হিসেবে আবর্জনা ব্যবহার করে তিনি দূষণের পরিস্থিতি তুলে ধরছেন।
স্টেফানি কিলগাস্ট নামে ওই শিল্পীর সৃষ্টিকর্মে প্রকৃতিই জগত পুনর্দখল করছে। ফরাসি এই শিল্পী কাদামাটি দিয়ে গাছপালা ও প্রাণীর প্রতিকৃতি সৃষ্টি করেন।
স্টেফানি বলেন, ‘‘এমন সব আবর্জনা দেখলে আমার সবসময় মনে হয়, মানবজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে শিল্প বা বিজ্ঞান নয়, আমাদের প্লাস্টিক আবর্জনাগুলোই পড়ে থাকবে। সে কারণে আমার সৃষ্টির কাজে সেগুলোকে ব্যবহার করি।’’
আবর্জনা দিয়ে তৈরি ভাস্কর্য মানবজাতির জন্য অশনি সংকেতের প্রতীক হয়ে ওঠে বলে কিলগাস্ট মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘‘শিল্প অবশ্যই আমাদের বর্তমান জগতকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। কোনো তথ্যচিত্রের তুলনায় সেটি আরও বেশি মর্মভেদী হতে পারে। সাধারণত শিল্পকর্ম মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি নয়, বরং আবেগ ছুঁয়ে যায়। আমার কাছে সেটাই সবচেয়ে জরুরি বিষয়।’’
স্টেফানি স্থাপত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু শিশু বয়সেই তিনি ক্ষুদ্র ভাস্কর্য তৈরি করতেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি বাতিল জিনিসপত্র দিয়ে ‘‘ডিসকার্ডেড অবজেক্টস’’ সৃষ্টি করে আসছেন।
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ফলোয়ারের সংখ্যা বেশ কয়েক লাখ পেরিয়ে গেছে। ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকায় তার শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়।
স্টেফানি বলেন, ‘‘আমার সৃষ্টিকর্মে আর কোনো মানুষ অবশিষ্ট নেই। আমি একে প্রলয়-পরবর্তী প্রফুল্ল ভাব হিসেবে বর্ণনা করি। যেন চারিদিকে আনন্দের রেশ, সবকিছু বেশ রঙিন, আমোদের পরিবেশ। মানবজাতির অবশিষ্ট অংশই টিকে গেছে, দুর্ভাগ্যবশত যা কোনো সুন্দর জিনিস নয়, শুধুই আবর্জনা।’’
আবর্জনা নিজে থেকেই বেড়ে চলেছে। আজকাল এমনকি বন্ধুবান্ধবরাও স্টেফানিকে আবর্জনা উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছেন। এভাবে মানুষের জঞ্জাল তার শিল্পের কাঁচামাল হয়ে উঠছে।
স্টেফানি বলেন, ‘‘আমার সৃষ্টিকর্ম মানুষকে নিজেদের জীবনযাত্রা, ভোগের প্রবণতা এবং ‘কনজিউমার’ বা ভোক্তা হিসেবে মানুষের অবস্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে বলে আমি সত্যি আশা রাখি। কারণ আমরা তো শুধু ক্রেতা নই।’’
মানুষের অত্যাচারে প্রকৃতি এখনও পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। কিন্তু পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা সেই প্রকৃতিকে আর বাসযোগ্য রাখছি না। স্টেফানি কিলগাস্টের সৃষ্টিকর্ম এমন জীবনধারার অবশিষ্ট অংশ তুলে ধরে।