সুফি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত বেকতাশি মুসলমানদের জন্য আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় একটি সার্বভৌম ক্ষুদ্ররাষ্ট্র গঠনের কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী এডি রামা। তবে তার এই চাওয়াকে বেকতাশিরা স্বাগত জানালেও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এডি রামা তার এই পরিকল্পনার কথা জানান।
এই সময় প্রধানমন্ত্রী এডি রামা আলবেনিয়ার নোবেল বিজয়ী মাদার তেরেসার উদ্ধৃতি “আমাদের মধ্যে সবাই অনেক বড় কিছু করতে পারবে না, কিন্তু আমরা সবাই ভালোবাসা দিয়ে ছোট ছোট অনেক কিছু করতে পারবো” ব্যবহার করেন।
এডি রামা বলেন, “ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটির আদলে এটি প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার নাম হবে ‘দ্য সভরেন স্টেট অফ বেকতাশি অর্ডার’।”
১৩০০ শতাব্দীতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের সময় বিকশিত হয় সুফিবাদ ও বেকতাশি আদর্শ। ১৯২৯ সালে আলবেনিয়াতে বেকতাশি আদর্শের প্রধান কার্যালয় বেকতাশি ওয়ার্ল্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিরানার ২৭ একর জায়গাজুড়ে ক্ষুদ্ররাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে আলবেনিয়ার সরকার। এই রাষ্ট্রের নিজস্ব সীমানা, পাসপোর্ট ও প্রশাসন থাকবে।
বেকতাশিদের নেতা অ্যাডমন্ড ব্রাহিমাজ, যিনি ভক্তদের কাছে বাবা মণ্ডি হিসবে পরিচিত। তিনি বলেন, “এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ।” এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও শান্তি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বেকতাশি অর্ডার শান্তি, সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির কারণে সমাদৃত। ভ্যাটিকানের মতো সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে তা আমাদের ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কাজের জন্য সহায়ক হবে।”
আলবেনিয়া সরকারের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে দেশটির জনগণ ও সেখানকার নীতি নির্ধারকদের অনেকেই কিছু জানতো না। এই সিদ্ধান্তে অনেকেই বেশ অবাক হয়েছেন। জার্মানির টুবিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ধর্মতত্ত্বের গবেষক বেজনিক জিনানি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “সমসাময়িক ধর্মীয় কার্যক্রমের মধ্যে এটি অকল্পনীয় ছিল।”
এই উদ্যোগের কোনো নেতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়বে না বলে মনে করেন আলবেনিয়ার বাসিন্দারা। আলবেনিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার জন্য বেশ পরিচিত। দেশটিতে খুব কাছাকাছি দূরত্বেই গির্জা ও মসজিদের উপস্থিতি চোখে পরে। দেশটিতে আন্তঃধর্মীয় বিয়েকেও বেশ সাদরে গ্রহণ করা হয়।
২০২৩ সালের আদমশুমারি অনুসারে আলবেনিয়ার জনসংখ্যা ২৪ লাখ। যার মধ্যে অর্ধেকই মুসলিম ধর্মের অনুসারী। মুসলিম জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই সুন্নি মতাদর্শের অনুসারী, যার মধ্যে আনুমানিক ১০% মুসলিম বেতাকশি সম্প্রদায়ের। বাকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোমান ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী রয়েছেন। আলবেনিয়াতে ঐতিহাসিকভাবে বেতাকশি সম্প্রদায়ের লোকদের মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সেতু বন্ধনকারী হিসেবেই দেখা হয়।