Saturday, April 19, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

গাজায় হামাসবিরোধী বিক্ষোভ, ‘হামাস তুমি চলে যাও’

২০০৭ সাল থেকে গাজা এককভাবে শাসন করছে হামাস

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪০ পিএম

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় হামাসবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির শত শত মানুষ। এসময় বিক্ষোভকারীদের দমনে হামাসের সদস্যরা বল প্রয়োগ করেছেন। হামাস সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠসোঁটা ও অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির।

হামাসবিরোধী বিক্ষোভের বেশকিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন হামাসের সমালোচক অ্যাক্টিভিস্টরা। এতে দেখা যায়, বুধবার (২৬ মার্চ) ‍উপত্যকার বেইত লাহিয়ার রাস্তায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তরুণরা স্লোগান দিয়ে বলছেন, হামাস তুমি চলে যাও, হামাস তুমি চলে যাও।

বিক্ষোভ নিয়ে হামাস সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বুধবার(২৬ মার্চ) এক বিবৃতিতে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছে হামাস।

অন্যদিকে হামাসের সমর্থকরা বিক্ষোভটিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে না এবং অংশগ্রহণকারীদের বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করেছে।

ইসলামিক জিহাদের সদস্যরা ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানোর একদিন বেইত লাহিয়ার বিশাল অংশ খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এর পরই মূলত বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে এই বিক্ষোভ শুরু হয়।

প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় আবারও সামরিক অভিযান শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল৷ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব হামাস প্রত্যাখান করেছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের৷ অন্যদিকে হামাস অভিযোগ করেছে, জানুয়ারিতে সই করা মূল চুক্তি লঙ্ঘণ করেছে ইসরায়েল।

চলতি মাসের ১৮ তারিখ ইসরায়েলি সামরিক অভিযান পুনরায় শুরুর পর থেকে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

বুধবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেইত লাহিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ দিয়াব বলেন, “এক বছর আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং তার ভাইকে তিনি হারিয়েছেন।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা কারও জন্য, কোনো দলের কর্মসূচি বা বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য মরতে রাজি নই।’’

তিনি বলেন, ‘‘হামাসকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে এবং শোকাহতদের দাবি মানতে হবে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উঠে আসা কণ্ঠস্বর- এটি সবচেয়ে বাস্তব কণ্ঠস্বর।’’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শহরটির ভিডিওতে “হামাসের শাসন নিপাত যাক, মুসলিম ব্রাদারহুডের শাসন নিপাত যাক” বলে বিক্ষোভকারীদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

ফিলিস্তিনি নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে ২০০৭ সাল থেকে গাজা এককভাবে শাসন করছে হামাস। এর এক বছর আগে সহিংসভাবে প্রতিপক্ষকে উৎখাত করেছিল হামাস।

তবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার সড়কে এবং অনলাইনে হামাসের প্রকাশ্য সমালোচনা বেড়েছে। যদিও এখনও এমন অনেকে আছেন যারা প্রচণ্ডভাবে হামাসকে সমর্থন করেন। যদি গোষ্ঠীটি কতটুকু সমর্থন হারিয়েছেন- তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা কঠিন।

গাজায় যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই হামাসের বিরোধিতা ছিল। প্রতিশোধের ভয়ে এর বেশিরভাগই প্রকাশ্যে নয়।

মোহাম্মদ আল-নাজ্জার নামে গাজার এক বাসিন্দা তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘‘মাফ করবেন, কিন্তু হামাস আসলে কিসের ওপর বাজি ধরছে? তারা আমাদের রক্তের ওপর বাজি ধরছে, রক্ত যাকে সারা বিশ্ব শুধু সংখ্যা হিসেবে দেখে।’’

তিনি লিখেছেন, ‘‘এমনকি হামাসও আমাদের সংখ্যা হিসেবে গণনা করে। পদত্যাগ করুন এবং আমাদের ক্ষতের নিরাময়ের সুযোগ দিন।’’

হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালালে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। সেসময় হামাসের হামলা প্রায় ১,২০০ জন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। আর ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

হামাসকে ধ্বংস করতে গাজায় সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল ওই হামলার জবাব দেয়। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশই এখন বাস্তুচ্যুত। বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই বেশ কয়েকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গাজায় আনুমানিক ৭০% ভবন ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ধসে পড়েছে জনপদটির স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের প্রবল সংকটের মুখোমুখি উপত্যকাটির বাসিন্দারা।

   

About

Popular Links

x