Tuesday, June 17, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে বড় হয়ে হত্যা করলো দত্তক মাকে

সদ্যোজাত ওই শিশুকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়ে নিজের কাছে রেখে লালন-পালন করে ওই নারী

আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম

সদ্যোজাত এক শিশুকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়ে নিজের কাছে রেখে লালন-পালন করে বড় করে এক নারী। আর সেই শিশুই বড় হয়ে পালক মাকেই খুন করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। গত ২৯ এপ্রিল ভারতের ওডিশা রাজ্যের গজপতি জেলার পারালাখেমুন্ডি শহরে এক ভাড়া বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটেছে। খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির।

ভারতের ওডিশা রাজ্যের পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিশোরীর বয়স এখন মাত্র ১৩ বছর। সে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার দুই প্রেমিক মন্দিরের পুরোহিত ২১ বছর বয়সী গণেশ রাঠ এবং ২০ বছর বয়সী দীনেশ সাহুর সঙ্গে মিলে নিজের পালক মা রাজলক্ষ্মী করকে (৫৪) হত্যার ষড়যন্ত্র করে।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, ওই কিশোরীর সঙ্গে দুই তরুণের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তার পালক মা এমন সম্পর্কের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার সম্পত্তি দখলের লোভও ছিল ওই কিশোরী ও দুই তরুণের। পরে ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় কিশোরী প্রথমে তার পালক মায়ের খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশায়। যখন তিনি অচেতন হয়ে পড়েন, তখন ওই কিশোরী তার দুই প্রেমিককে ডেকে আনে। তারপর ৩ জন মিলে বালিশচাপা দিয়ে তাকে খুন করে। পরে রাজলক্ষ্মীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

আত্মীয়স্বজন ও হাসপাতালকে জানানো হয়, তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার আগে থেকেই হৃদ্‌রোগ ছিল। তাই কেউ সন্দেহ করেনি। পরদিন আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে তার মরদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হয়।

ঘটনার নতুন মোড় আসে এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর। এ ঘটনা ধামাচাপা থাকলেও নিহতের ভাই শিবা প্রসাদ মিশ্রর মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা সামনে আসতে শুরু করে। তিনি কিশোরীর ফেলে যাওয়া মোবাইল ফোনটি খুঁজে পান এবং তা ঘেঁটে দেখতে পান যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম চ্যাটে খুনের পরিকল্পনার পুরো বিবরণ রয়েছে। ওই চ্যাটে নিজের পালক মাকে খুন করার পরিকল্পনা, স্বর্ণ ও নগদ টাকা নেওয়ার বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

এর পর গত ১৪ মে শিবা প্রসাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ নিহতের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু করে এবং ওই কিশোরী ও তার দুই প্রেমিককে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে গজপতি জেলার পুলিশ সুপার যতীন্দ্র কুমার পান্ডা জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে ওই শিশুকে রাস্তায় কুড়িয়ে পান নিহত রাজলক্ষ্মী ও তার স্বামী। পরে তাকে দত্তক নেন এবং নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করতে থাকেন। তবে কিছুদিন পরেই রাজলক্ষ্মীর স্বামী মারা যায়। এরপর একাই মেয়েটিকে লালন–পালন করছিলেন তিনি। পড়াশোনার সুবিধার্থে তিনি পারালাখেমুন্ডিতে এসে একটি বাড়ি ভাড়া নেন ও কিশোরীকে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করান।

শিশুটি ধীরে ধীরে কিশোরী হয়। এরই মধ্যে তার সঙ্গে দুই তরুণের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ঘটনা জানার পর নিহত রাজলক্ষ্মী এমন সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে তাদের মাঝে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় অনেকবার।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, একপর্যায়ে ওই কিশোরীর প্রেমিক যুগল নিহত রাজলক্ষ্মীকে হত্যা করার জন্য উসকানি দিতে থাকে।

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার আগেই কিশোরী তার মায়ের কিছু স্বর্ণের গহনা গণেশ রাঠকে দিয়েছিল। গণেশ সেগুলো প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার রুপিতে বন্ধক রেখেছিল। পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ গ্রাম স্বর্ণের গয়না, ২ টি মোবাইল ফোন এবং রাজলক্ষ্মীকে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি বালিশ উদ্ধার করেছে। এখন তিন অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে আছে ও তদন্ত চলছে। ঘটনাটি রাজ্যজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

   

About

Popular Links

x