রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। এই সার ব্যবহার করে উৎপাদিত ফসলও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই কেঁচো সার ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেঁচো তাই পাঠ্য করেছে জার্মানির বার্লিনের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির বিশেষ এক পাঠক্রমে শিশুদের এই বিষয়টি নিয়ে পাঠদান করা হয়। মানুষের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত জরুরি এই প্রাণীটি সম্পর্কে প্রকাশ্যে তেমন আলোচনা নেই।
প্রাণীটির মেরুদণ্ড না থাকলেও আর্থওয়ার্ম অত্যন্ত সক্রিয়।৷ আমাদের মাটির নিচের অনেক অদৃশ্য প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এই প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইউরোপের মতো যে সব অঞ্চলে কেঁচো বাস করে, সেখানকার মাটি ও উদ্ভিদজগতের জন্য এই প্রাণীর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্কুলশিক্ষক পাউলা রিসার ক্লাসে পুষ্টি চক্র সংক্রান্ত এক ওয়ার্কশিট দিয়েছেন ছাত্রদের। তাতে দেখানো হচ্ছে, আর্থওয়ার্ম কীভাবে মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী খেয়ে নিয়ে সেগুলো মলে রূপান্তরিত করে। অত্যন্ত পুষ্টিকর সেই মল উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য জরুরি। শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্র এই প্রাণীর অবদানের কদর করবে বলে আশা করছেন এই স্কুলশিক্ষক।
তিনি বলেন, “আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শিশুদের বৃহত্তর চিত্র বোঝা উচিত। জানা উচিত, যে সবকিছু পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। আমি যদি ভালো আচরণ করি, সব প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাই, তখন অবশ্যই আমি আরও ভালো ও বাসযোগ্য পরিবেশ পাবো।”
জার্মানির হালে শহরের কাছে এক গবেষণাকেন্দ্রে বিজ্ঞানীরা বিশাল আকারে আধুনিক কৃষি প্রক্রিয়ার কারণে ক্ষতির মাত্রা বোঝার চেষ্টা করছেন। বিস্তৃত এলাকার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তারা দেখছেন, জমি অন্যভাবে ব্যবহার করলে মাটির মানের কত পরিবর্তন ঘটে। জলবায়ুর বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের আরও উষ্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
ইকোলজিস্ট মারি স্যুনেমান বলেন, “এমন শস্যের জমি আর্থওয়ার্মের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি করছে। কেঁচো মাটিতে নিয়মিত সার দেওয়া পছন্দ করে না, কারণ তার ফলে মাটির পিএইচ মাত্রা কমে যায় এবং মাটিতে অম্লের মাত্রা বেড়ে যায়। এই প্রাণীর ত্বক খুবই নাজুক। কেঁচো একটি মাত্র উদ্ভিদ খায়। ফলে একটি স্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়।”
মার্টিন শেডলার প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক সমন্বয়ক। তার মতে, শুকনা বছরগুলোর পর ঘাসজমির উদ্ভিদ জগত চাষের খেতের তুলনায় অনেক ভালোভাবে সামলে উঠেছে।
শেডলার প্রায়ই গবেষণার ফলাফল অংশীদারদের সামনে তুলে ধরেন। তার মতে, চাষিরা মাটিকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার বিষয়ে অনেক বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, “ব্যবস্থাপনা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনুন। অর্থাৎ মাটির ওপর যান্ত্রিক হস্তক্ষেপ এবং ধাতব সারের মতো রাসায়নিক ব্যাঘাত ঘটিয়ে মাটির প্রাকৃতিক পুষ্টিচক্র নষ্ট করবেন না। তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহার করলেও মাটির নিজস্ব জৈব জগতের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করা উচিত নয়।”
ইকোলজিস্ট হিসেবে মারি স্যুনেমান মনে করেন, “এমন খেতে বীজ বপন করা উচিত, যেখানে জীববৈচিত্র্য বেশি। অনেক ধরনের ঘাস, লতাগুল্ম, সবজি থাকলে ভালো।”
স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঠিক সেই নীতি হাতেনাতে প্রয়োগ করছে। মাটির দেখাশোনার অর্থ কেঁচো ও অন্যান্য জীবের যত্ন নেওয়া। সেগুলোই বীজ বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।