বাংলাদেশের দ্বিতীয় দশকের একজন কবি রনক জামান। তিনটি কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার এ পর্যন্ত। কবিতার পাশাপাশি অনুবাদও করে থাকেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর গবেষণাকর্মের অংশ হিসেবে নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সমকালীন কবিতার প্রবণতা ও পার্থক্য, ভাষা, শৈলী এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি শৌর্যদীপ গুপ্ত।
১৯৪৭ পরবর্তী অধ্যায়ে বাংলাদেশের সাহিত্যে আত্মপরিচয় অনুসন্ধান ও নির্মাণের যে ধারার সূচনা হয়েছিল, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর সেই ধারা কালক্রমে পরিপুষ্ট হয়ে আবহমান বাংলা সাহিত্যের ধারায় নতুন ও স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে। এতে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ভাষা ও ভূগোলের বিশেষ পার্থক্য না থাকলেও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে সাংস্কৃতিক স্তরে অনন্যতা পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের সাহিত্য প্রথাগত বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত রূপ থেকে ক্রমশই হয়ে উঠেছে ভিন্নতর। কবিতায় ছন্দ, শব্দ, অন্বয়, চিত্রকল্প ও অন্যান্য রূপ-নির্মাণের চর্চায় যদি পশ্চিমবঙ্গের কবিতা অনেকাংশে প্রথানুসারী বলা চলে, তবে বাংলাদেশের কবিতা অনেকাংশেই প্রথাবিরোধী।
দুই বাংলার কবিতার তুলনামূলক বিচারের প্রয়াসে তাই ষাটের দশক থেকে দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের কবিতার তত্ত্বালোচনা ও কবিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের অংশ হিসেবে আলাপ হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় দশকের কবি রনক জামানের সঙ্গে। গত দশকের মাঝামাঝিতে ‘ঘামগুলো সব শিশিরফোঁটা’ (২০১৬) কবিতাগ্রন্থ দিয়ে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর আরো দুইটি কবিতাগ্রন্থ “অগ্রন্থিত ওহী” (২০১৯) এবং “শামুকচর্য” (২০২৪) প্রকাশিত হয়। শেষোক্ত বইটি কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা-২০২৪ এ “আদিবর্ণ” থেকে প্রকাশ পায়।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: বাংলাদেশের কবিতায় লক্ষ্য করেছি ইমেজারির (দৃশ্যকল্প) একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তোমার প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ “ঘামগুলো সব শিশিরফোঁটা”, “অগ্রন্থিত ওহী” ও প্রকাশিতব্য বইয়ের পাণ্ডুলিপির কবিতাগুলো সব পড়া হলো এবং অনেক কবিতায় দেখেছি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাকে ভেঙে অদ্ভুত বিমূর্ততায় নিয়ে গেছো, যে বিমূর্ততা দিশাহারা হয় না, বরং ইঙ্গিতবাহী। ইমেজারি বিষয়ে তোমার ভাবনাটা বিস্তারিত জানতে চাই।
রনক জামান: ধন্যবাদ, শৌর্য। ইমেজারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাব্যালঙ্কার। কবিতাকে আরো জীবন্ত করতে বলো বা পাঠকের সাথে কম্যুনিকেট করতে বলো, ইমেজারি ব্যবহারের তুলনা হয় না। এর ব্যবহারের দক্ষতাও কবিকে সহজে স্বকীয়তা দেয়। ইমেজারি তো শুধু দৃশ্যের উপস্থাপন না, যে পাঁচটি ইন্দ্রিয় দিয়ে জীবনকে অনুভব করি, জগতকে বুঝতে পারি—সেই স্পর্শ, স্বাদ বা অন্যান্য ইন্দ্রিয়গত অভিজ্ঞতা কেবল শব্দ-বাক্যের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া—আমার কাছে মনে হয়, আশ্চর্য এক শিল্পকৌশল। কাজটা যদিও জটিল কিছু না, তবে আমার এই মুগ্ধতাটা সত্য।
কিন্তু নতুন বা অনন্য দৃশ্যকল্প তৈরি করতে তীক্ষ্ণ কল্পনাশক্তির প্রয়োজন, নিজস্ব ও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। এতে দক্ষতা না থাকলে দিশেহারা হতেই হয়। এর সাথে আরো কিছু বিষয় থাকে, যেমন: পুরো কবিতা বা স্তবক বা বাক্য কীভাবে থ্রো করব, সে সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা থাকলে অর্থময় রাখাটা সহজ। অর্থময় কথাটা আক্ষরিক অর্থে বলছি না। ‘দুটো বৃষ্টিফোঁটার ব্যবধানে—ঝরতেছে রাশি রাশি শুকনো পাতা’ এর আক্ষরিক অর্থের স্বাদই-বা কী, চিত্রটাই মুখ্য।
আমি তো দেখি শুধু বাংলাদেশে কেন, সব দেশে ও সব ভাষাতেই দৃশ্যকল্প বহুল ব্যবহৃত হয়। সচেতনভাবে হোক বা অসচেতনভাবে। এর একটা কারণ হতে পারে, দৃশ্যকল্প তৈরি করাটা তুলনামূলক সহজ। চারদিকে যা দেখছি তা-ই কবিতার সম্ভাব্য দৃশ্য, যা অনুভব করছি তা-ই দৃশ্যকল্প হবার দাবি রাখছে। অর্থাৎ আমরা সারাক্ষণ বেঁচেই থাকছি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতার ভেতরে। আমরা ইন্দ্রিয়সর্বস্বতায় এমনভাবে আটকে থাকছি যে চাইলেও এড়াতে পারব না। ঘুমের ভেতর কিছুটা মুক্তি হয়ত ঘটে, কিন্তু স্বপ্ন দেখার সময় তো ইমেজারি আরো শক্তিশালী, কারণ এর সাথে তখন ইমোশনও স্ট্রংলি এটাচড থাকে।
অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ অলঙ্কার, যেমন- উপমা ও রূপক তৈরির চেয়ে দৃশ্যকল্প তৈরি করাটা সহজ। এ কারণে এর ব্যবহারও হয়ত বেশি। অন্যদিকে, একটা নতুন বা অনন্য উপমা তৈরি করা কিন্তু খুব কঠিন। আমার মনে হয় এটা কবিতার সবচেয়ে কঠিন কাজ। এমন হয়, অনেক কবির আস্ত কবিতার বইয়ে একটা স্ট্রং মেটাফোর খুঁজে পাই না। অথচ নির্ভুল ছন্দ আছে, প্রাণবন্ত ইমেজের উপস্থাপন আছে। এই কারণে একজন কবি ঠিক কতটা মেধাবী, তার মেধা ব্যবহারের দক্ষতা কতটা গভীর তা সচরাচর আমি বিচার করি তাঁর উপমা ব্যবহারের দক্ষতা দেখে। চাইলেই কেউ ভালো উপমা তৈরি করতে পারে না। এর জন্য সত্যিকারের মেধা, কল্পনাশক্তি ও ধ্যানের প্রয়োজন।
আমার কবিতায় যতটুকু ইমেজারি ও অন্যান্য ডিভাইসের ব্যবহার, তা এই চিন্তাগুলোরই নির্যাস।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: আমার মনে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কবিতার গঠন মূলত ছন্দকেন্দ্রিক। বাংলাদেশের কবিতায় সে তুলনায় ছন্দচর্চা কম। এ কারণেই কি বাংলাদেশের কবিতায় চিত্রকল্প এত প্রধান হয়ে উঠেছে? ছন্দ এবং চিত্রকল্প ব্যবহারে তোমার ধারণা যদি স্পষ্ট করো…
রনক জামান: বাংলাদেশের কবিতায় চিত্রকল্প ব্যবহারের প্রবণতা আসলেই বেশি কিনা নিশ্চিত নই। তবে ছন্দের ব্যবহার যে আশঙ্কাজনকভাবে কম এ ব্যাপারে নিশ্চিত। ছন্দের কাজ কম বলে হয়ত কবিতায় অন্যান্য অলঙ্কার চোখে পড়ে বেশি।
ছন্দ প্রসঙ্গে, বাংলাদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। শিল্প-সাহিত্যে ঠিক কতটুকু—সে সম্পর্কে ধারণা আরো স্পষ্ট হয়েছে তোমাদের সঙ্গে আলাপ করে। পশ্চিমবঙ্গে একাডেমিকদের অবস্থান বেশ উঁচুতে। একজন তরুণ যশোপ্রার্থী কবিকে প্রাথমিকভাবে নিজের ভাষা দক্ষতার প্রমাণ দিয়েই উত্রে যেতে হয়। প্রবীণ কবি বা অধ্যাপক তোমার কবিতা হাতে নিয়ে প্রথমে খেয়াল করতেই পারেন যে বাক্য পয়ারে লিখেছো কিনা। তোমার শক্তি সম্পর্কে জানতে উনারা এইসব বেসিক জিনিসই পরখ করবেন। হয়ত এর পরে দেখবেন কবিতায় টেক্সটা কতটা নতুন বা জোড়ালো।
বাংলাদেশে বিষয়টা বেসিক্যালি একইরকম। তবে আরো শিথিল, অন্যান্য সেক্টরের মতোই। এবং এখানে প্রতিযোগিতা তুলনামূলকভাবে খুব কম। একজন কবি, যিনি কিনা মূলত ভাষাশিল্পী, কিন্তু ভাষায় তার দখল কতটুকু তা বাকিরা তো দূর, নিজে বুঝে ওঠার আগেই অনেকদিক দিয়ে খ্যাতি পেয়ে বসছেন। এতে তাঁর নিজের বিশ্বাসেও প্রভাব পড়ছে, পরবর্তীতে যারা আসছে তারাও ছন্দকে হেঁয়ালিপূর্ণভাবে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।
এসবের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুদিকই আছে। প্রথাগত ছন্দ থেকে সরে যাবার প্রবণতাটা নতুনদের মধ্যে স্পষ্ট। হতে পারে ছন্দ সম্পর্কে তারা জানেন না বা জানতে চান না। কবিতার লিরিক্যাল ভঙ্গিতে অনেকে বিরক্ত। সচেতন বা অসচেতনভাবে হোক তারা এটাকে ভাঙতে চান। এর বদলে ন্যাচারাল কথ্যভাষার সুরেই কবিতা লিখতে চান। এতে কবিতা সহজাত দেখায়, পাঠকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ-সম্ভব হয়ে ওঠে। তাছাড়া গদ্যভঙ্গিতে লিখতে গিয়ে প্রচুর স্বাধীনতাও তারা পাচ্ছেন।
কিন্তু স্বাধীনতার সঠিক গুরুত্ব অনুধাবন না করতে পারলে তা কাজে লাগানো যায় না। এতে প্রচুর ভুলভাল চর্চা হয় ও হচ্ছে। অনেকে জানছেনই না একটা বাক্য কীভাবে সর্বজনীনভাবে পাঠযোগ্য করে তুলতে হয়। অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে সিনট্যাক্স সাজাচ্ছেন। যারা কবিতাপ্রেমী বলে দাবি করেন তাদের অধিকাংশই জানেন না কবিতা কীভাবে পড়তে হয়; কীভাবে লিখতে হয়—সে প্রসঙ্গ আরো অনেক পরে।
আমার ক্ষেত্রে, ছন্দের জ্ঞান সব সময় ছিল পুঁথিগত। ছন্দে লিখিনি যে ব্যাপারটা এমন নয়। কিন্তু দুর্বল মনে হতো বলে প্রকাশ করতাম না। আমার হাতেখড়িই হয় ছড়া লিখে, সুকুমার রায়ের প্রভাবে। এরপর দুর্বল টেক্সটে চৌদ্দ ও আঠারো মাত্রার ভুলভাল সনেটও লিখেছি অনেক। দুই-একটা এদিক-সেদিক প্রকাশও পেয়ে গেছে। তবে সেসব অনেক আগের কথা। পুরোদমে প্রকাশ যখন শুরু করি ২০১২/১৩ তে, তখন ইচ্ছে করেই কবিতার গীতল ভঙ্গিটা এড়িয়েছি। এতে কিছু সমস্যা হয়েছে। অধিকাংশ কবিতা প্রতি-কবিতার স্বভাব নিয়েছে এবং এই ধাঁচে বাক্য নির্মাণ করাটা অভ্যাসের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ছন্দ-সচেতনতা থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম। বিশেষ করে আমার প্রথম ও দ্বিতীয় কবিতার বইয়ের কবিতাতে প্রথাগত কোনো ছন্দের কবিতা রাখিনি। দ্বিতীয় বইটাতে গদ্যকবিতার বিভিন্ন ফর্মের এক্সপেরিমেন্টই শুধু করেছি। নতুন পাণ্ডুলিপিতে ছন্দের কবিতা রেখেছি কিছু। তবে টেক্সটের মানগত দিক নিয়ে সন্তুষ্ট হবার পরে। আমার দুর্বলতাও বলতে পারো, আমি অভ্যাসবশতই গদ্যভঙ্গিতে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, স্বাধীনতাটা উপভোগ করি। সহজ বলে নয়, চ্যালেঞ্জিং ও রিস্কি বলেও।
কবিতার বেসিক বৈশিষ্ট্য যেহেতু একটা সুরের আবহ তৈরি করা, এতে দখল রাখতে গেলে ছন্দের ধারণা মাথায় রাখতেই হবে। ভাঙতে হলেও, জানোই তো এসব। প্রাচীন একঘেয়ে মনে হলেও প্রথাগত ছন্দ যে আধুনিক বা উত্তর-আধুনিক কবিতার বাঁধা না সেটাও আস্তে-ধীরে পরিষ্কার হবে নতুনদের মাঝে।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: তোমার কবিতায় প্রায়শই একটা অস্তিত্ব-বোধের এক্সটেনশন লক্ষ করেছি। এ বিষয়ে যদি বিস্তারিত কিছু বলো…
রনক জামান: কবিতা হোক বা সাধারণ চিন্তায়, অস্তিত্বের তাড়না পৃথিবীর সবখানে সব সময় ছিল ও থাকবে। বিশেষ করে গত শতকের শুরু থেকে দার্শনিকেরা অস্তিত্ববাদ নিয়ে যখন সরব হতে শুরু করেন, এক্সপ্রেশনিজমের মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন তৈরি হলো, এর পাশাপাশি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখল সবাই, তখন মানুষ অস্তিত্ব নিয়ে আরো ক্রিটিক্যালি ভাবতে শুরু করে। অস্তিত্বসঙ্কট থেকেই তো অস্তিত্ববোধ নিয়ে এত এত আলাপ, শিল্প ও শিক্ষা; তাতে কি অস্তিত্বের মুক্তি সহজ হয়েছে?
বরং পুঁজিবাদ আরো শক্তিশালী হচ্ছে আর ব্যক্তি-মানুষ—অস্তিত্ব কোলে নিয়ে আরো কোণঠাসা হচ্ছে। ইচ্ছার স্বাধীনতা হারাচ্ছে দিনদিন। সিস্টেম-নির্ধারিত জীবন নিয়ে সুখে থাকার ভান করতে হচ্ছে। ভেতরে অস্থিরতা, ভয় ও শূন্যতা। এর বাইরে থাকতে চাইলে সিস্টেম এমন সব দিক দিয়ে মেরে দিচ্ছে যে জীবন তেজপাতা। প্রচলিত সমাজ, রাষ্ট্র ও নিয়মের ফাঁপা দিক টের পেতে তো খুব বেশি চিন্তাশীল হবার দরকার নেই। প্রতিনিয়ত সবাই টের পাচ্ছে। কার্যের কারণটা হয়ত সবসময় টের পাচ্ছে না। ভয়, হতাশা ও শূন্যতাটা টের পাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে মানুষ খোদাকে খুঁজছে, পরকালের আশ্রয় চাইছে, জাগতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৌড়াচ্ছে, শিল্প-সাহিত্যে ডুব দিচ্ছে। মোট কথা মানুষ চিরকাল নিরাপদ ঠিকানা খোঁজে। যেখানে সে স্বাধীন ও চিন্তামুক্ত অনুভব করবে। আশ্রয়টা যে স্থায়ী, নিরাপদ—তারও নিশ্চয়তা নেই। তবু মানুষ নাগালের মধ্যে সবচেয়ে সেরা ঠিকানাটাই খোঁজে।
আমি এর বাইরের কেউ নই। গর্ব করার মতো বিশেষ কিছু না জানি, তবু কবিতায় আমাকে যতটুকু চেনা সম্ভব তা আমার অস্তিত্ববোধ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতাটা ধরতে পারার মধ্য দিয়েই।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: তোমার বিভিন্ন কবিতায় “মা”, “বাবা”র প্রসঙ্গ অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্যে ব্যবহার হয়েছে। এই সম্পর্ক দুটোকে কবিতার আলোতে তুমি কীভাবে দেখো?
রনক জামান: মা-বাবার প্রসঙ্গ সব সময় সহজাতভাবেই আনতে চেয়েছি আমার কবিতায়।
প্রায় সবার মতো আমার জীবনেও মা-বাবার মতো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আর নেই। আমার অস্তিত্বও তাদের ভালোবাসা। আর ভালোবাসার মতো মিনিংফুল জিনিস আমি এই জগতে দ্বিতীয়টি দেখিনি। আমার এই কনক্লুশান যে ভুল না তাও সময়ের সাথে সাথে নিশ্চিত হয়েছি। এই ভালোবাসা, মায়া-মহব্বত তো মানুষ প্রথম ও প্রধানত মা-বাবার কাছ থেকেই শেখে। আমার কবিতা যেহেতু আমারই চিন্তার ফল, তাই মা-বাবার প্রসঙ্গ সহজাতভাবেই এসেছে।
কিন্তু ঐ যে, ক্যাপিটালিজম। কবিতায় মা-বাবার মতো এক সময় প্রেমিকার প্রসঙ্গ প্রচুর আসতো। কারণ কবিতা-লেখকেরা অনেক আগেই টের পেয়ে গেছেন যে কবিতার সাথে পাঠকের কম্যুনিকেট করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো ‘আবেগ’। তাই ‘প্রেমের কবিতা’ শিরোনামে প্রচুর বই করে বাজারজাত করা হয় ও হচ্ছে। কিন্তু প্রেমিকার প্রসঙ্গ পণ্য হিসেবে জনপ্রিয় হতে হতে ক্লিশে হয়ে গেছে। এখন মা-বাবাকে পণ্য করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। মানগত দিক থেকে যেমন-ই হোক, পাঠক এই ধরণের কবিতা গোগ্রাসে খাচ্ছে।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: বাংলাদেশের কবিতায় রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গে যা ধীরে ধীরে ক্ষয় পেয়েছে। তোমার নতুন পাণ্ডুলিপির “দাবা” কবিতাটাই ধরো, যেখানে তোমার সামগ্রিক রাজনীতির বোধ প্রকাশ পেয়েছে। কবিতায় রাজনৈতিক বোধের প্রতিফলন বিষয়ে তোমার অবস্থান কী?
রনক জামান: রাজনীতি-চিন্তা অস্তিত্বচিন্তারই অংশ। এর প্রভাব অস্তিত্বসঙ্কটকে একদম হাতে-কলমে ধরিয়ে দেয়। রাজনীতি যে সবখানে, এর নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব যে সবকিছুতেই—কথাটা বহুল-ব্যবহৃত হলেও চিরকাল বাস্তব। আমাদের মনে সবসময় আকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছে অথচ পাওয়া না-পাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে অনেক উপর থেকে কেউ। সে কিন্তু আমার চেয়ে অধিক মানুষ নয়। জগতে আমি কতটুকু জায়গা ও বিষয়বস্তু ডিজার্ভ করি তাও অনেক উপর থেকে নির্ধারিত হয়ে আসছে। ছোট-বড় প্রতিটা সিদ্ধান্তের ফলাফল তারা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এবং অধিকাংশ মানুষের চিন্তা ও আয়ু পুরোটা ক্ষয় হচ্ছে কেবল এর সঙ্গে মোকাবিলা বা মধ্যস্ততা করতে গিয়ে।
দেশভাগের পর দুই বাংলা রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন, দুইপাশের মানুষের অভিজ্ঞতাও ভীষণ আলাদা। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র বলে এখানে রাজনৈতিক দিকটা স্পষ্ট। তবে এখানে কেউ সত্তর-দশকের ফর্মে রাজনৈতিক কবিতা লিখছে না এখন। লিখলেও নতুনত্ব নেই, গুরুত্ব নেই। তবে অন্য ফর্মে রাজনীতি আসছে, মিথ ও রূপকের আশ্রয়ে। সরাসরি বিদ্রোহ-বিপ্লব নেই, হয়ত সে সুযোগও নেই অনেক কারণে। তবে কবিতার আগে ও পরে রাজনীতিবোধ যে কবি ধারণ করেন তা বাংলাদেশের কবিতায় বোঝা যায়। আমি মনে করি না যে টেক্সটে রাজনীতিবোধ স্পষ্ট করা জরুরি। বরং কবিতা নিজেই যে রাজনীতি—এটা বুঝতে পারা জরুরি।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে ছোট-বড় বিচ্ছিন্ন অনেক রাজনৈতিক বিপ্লব হয়েছে ও হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে কবিতায়। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের প্রভাব ক্ষয়িষ্ণু হয়ে এলেও আছে এখনো। বাঙালি পরিচয়কে অম্লান রাখার সংগ্রাম এখন তো আরো জোরালো হচ্ছে। কিন্তু ভাষার দিক থেকে আমার মনে হয়, বাংলাটা সংস্কৃত ভাষার মতো থেমে যাচ্ছে, মরে যাচ্ছে; কবিতায় রাজনীতিবোধ না শুধু, বাংলা কবিতার দাপটই ক্ষয় পাচ্ছে, নাকি? তুমি আরো ভালো বলতে পারবে।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: বাংলাদেশের কবিতাকে তুমি সামগ্রিক বিচারে কীভাবে ধরবে, আগে বাংলা সাহিত্য পরে বাংলাদেশের সাহিত্য হিসেবে না আগে বাংলাদেশের সাহিত্য পরে বাংলা সাহিত্য হিসেবে?
রনক জামান: বাংলা ভাষার সাহিত্য নিঃসন্দেহে। আমি তো শুধু বাংলা ভাষার কবিই হতে চাই। কাঁটাতারের ফলে দুই বাংলার ইতিহাস, অভিজ্ঞতা, জীবনমান ও চিন্তা-চেতনার অনেক পার্থক্য হয়ে গেছে, তবে তা ভাষা পরিচয়ের অনেক পরের বিষয়। মানুষে মানুষে যোগাযোগে ‘ভাষা’-র মতো এত বড় বিজ্ঞান আর তো দেখি না। ‘আম’ বলতে আমি যা বোঝাই, পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে বসে কেউ ‘আম’ বলতে যদি তাই বোঝে তবে সে আমার আত্মীয়, আপনজন। এই যে ভাষার কারণে মানুষের একাত্মতার অনুভূতি, এটা অন্য অনেককিছুর ঊর্ধ্বে।
তারপরে আসে রাষ্ট্রীয় পরিচয় ও প্রভাব। সেক্ষেত্রে বলব বাংলাদেশের কবিতা আদতে রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের কবিতাই। এদেশে কবিতায় আত্মপরিচয় নির্মাণের তাগিদ, নিরীক্ষা ও প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক আলাদা হয়ে গেছে গত সাতাত্তর বছরে।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: হাজার বছরের ঐতিহ্যশালী বাংলা ভাষার নানা শাখা-প্রশাখা, এর কোন ধারাকে তুমি গ্রহণ বা বর্জন করার চেষ্টা করো?
রনক জামান: আমার খুব গর্ব হয় বাংলা ভাষার ঐতিহ্য এত পুরনো, এই ভাষার আদি নিদর্শন বলতে যা পাই তা ছিল ‘কবিতা’। চর্যাপদের পর বাংলা সাহিত্যে আজ পর্যন্ত যত শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটেছে সময় ও পরিবেশের দাবিতে, সব শাখার কাছেই আমি ঋণী। এই প্রাচীন ইতিহাস বাংলা ভাষার যে কোনো কবির জন্য এডভান্টেজ।
তবে আমার লেখার সময় গ্রহণ বা বর্জনের সীমারেখা মোটাদাগে টানা সম্ভব না। কবিতায় ধর্মীয় মিথ—মহাভারতের বা ইসলামের—আমার খুব পছন্দের বিষয়। কিন্তু এই মিথলজি কোনো বাক্যে বা স্তবকে আনতে গিয়ে আমি অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকি। বেদ, বুদ্ধ বা লালন—সকলের দর্শনই আমার কবিতায় স্পষ্টভাবে প্রভাব রাখে। কিন্তু আধুনিক এক অস্থির সমাজে বাস করে আমি রবি ঠাকুরের অসংখ্য রোমান্টিক সৃষ্টির মতো ক্ষমাশীল ও আনন্দবাদী হতে পারি না। তেমনি, বড় বড় যুদ্ধকে এত পেছনে ফেলে এসে এখন আমি কাজী নজরুলের মতো বিপ্লবী বাক্য নির্মাণ করব না। সমকালীন শৈলী সচেতনতার কারণে আমি জীবনানন্দের প্রভাবও এড়িয়ে চলব। এই কথাগুলো লুইপা থেকে মাইকেল—সবার ক্ষেত্রেই বলছি। কিন্তু এর ভাব ও রসের দিক থেকে আমি এঁদেরই নির্যাস। এঁরা সবাই একইসাথে গৃহীত যেমন বর্জিতও অনেকদিক থেকে।
এই গ্রহণ বা বর্জনের ব্যাপারটা বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে শুধু না, প্রথাগত বাংলা কবিতার ধারা থেকে সরে নতুন কিছুর সন্ধানে আমাকে পাশ্চাত্য সাহিত্য ও চিন্তাকে জানতে হয়, গ্রহণও করতে হয়। হোক তা ইংরেজি-ফরাসি কবিতার শৈলী, ইসলামি ও ইসলামপূর্ব মিথলজির কনটেক্সট—যেগুলো অনুবাদ ও ধর্মীয় সংস্কৃতির মাধ্যমে কালক্রমে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।
তোমার প্রশ্নের ভেতর পড়ে কিনা তবু বলি, ভাষা ও শিল্পসাহিত্য ব্যবহার করে ধর্মকে রাজনীতিকরণের বিপরীতে অবস্থান করি আমি। তাই কিছু জিনিস বর্জন করতে সহজ হয়েছে আমার।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বাংলাদেশে ডায়েলেক্টসের বহুল ব্যবহার। এ বিষয়ে তোমার অনুধ্যান কী?
রনক জামান: বাংলাদেশে আঞ্চলিক ভাষা, আঞ্চলিক শব্দের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি। যতটুকু বুঝতে পারি পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষাটাই সংস্কৃত ভাষার পরিণতির দিকে যাচ্ছে। যদিও তা অন্য প্রসঙ্গ।
বাংলাদেশের কবিতায় বহুরকম প্রবণতা ও নিরীক্ষা রয়েছে। এসবের পেছনে মতাদর্শ ও সংগ্রামগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত যারা টের পান ভাষা ও সংস্কৃতির রাজনীতির গুরুত্ব। তাই অনেকে কলকাতার বানান বা তৎসম শব্দ এড়িয়ে চলছেন। জীবন্ত শব্দের খোঁজে আঞ্চলিক শব্দের দিকে ঝুঁকছেন। এগুলো অনেক পার্থক্যও গড়ে দিচ্ছে।
সংগ্রাম বা সংঘাতটা যে কলকাতার বাংলার সঙ্গে বিষয়টা এমন নয়। কলকাতা যদি বাংলা ভাষা নিয়ে একইরকম সচেতন থাকে তবে বাংলাদেশের সাহিত্যিকেরাই সবার আগে সঙ্গে থাকবেন। সংঘাতটা মূলত প্রচলিত প্রমিতের সঙ্গে, ইংরেজদের নির্ধারণ করে যাওয়া বাংলা ভাষার আদলের সঙ্গে। আমার মনে হয় এতে বাংলাদেশের ভাষা ও সাহিত্যের মঙ্গল হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাঁক নিচ্ছে।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: আমার মনে হয়, দুই বাংলার কবিদের মনোভাব সামগ্রিকভাবে উভয়ের প্রতিই বিরূপ। এ বিষয়ে যদি তোমার মতামত বলো।
রনক জামান: হা হা হ্যাঁ, দুঃখজনক হলেও সত্য। কিছুটা হাস্যকরও। কবি-সমাজে তো এরকম প্রায়শই দেখা যায়, এক বাংলা আরেক বাংলার কবিতাকে নাকচ করা শেষ হলে এরপর নিজেদের মধ্যে খারিজি আচরণ শুরু করেন। ভুল বোঝাবুঝি, ব্যক্তিগত রুচি ও অহমবোধ, গোষ্ঠীবদ্ধতার দায় এবং আরো কিছু কারণ থাকতে পারে এর পেছনে। তারপরও বলব, সাহিত্যের জগতটাই এখন পর্যন্ত আমার কাছে সবচেয়ে সহনশীল মনে হয়েছে, না হলে এখানে আমি বা আমার মতো পলায়নবাদী কিছু মানুষ আছে যারা এখনো টিকতে পারতেন না।
আগেই বলেছি, পশ্চিমবঙ্গে এখনো একাডেমিকদের অবস্থান ও দখল বড় পর্যায়ে রয়েছে। ফলে প্রথাগত কবিতার ধারাকেই প্রাথমিক শর্ত হিসেবে নিতে অভ্যস্ত অনেকে। এই অবস্থায় হুট করে বাংলাদেশের কারো গদ্যকবিতা ও নিরীক্ষাপ্রবণ কবিতার স্বাদ নেয়াটা সহজ না, যদি না একদম সেই আশির দশক থেকে বাংলাদেশের কবিতার বাঁক-বদল নিয়ে আগ্রহ ও ধারণা থাকে। যদিও এক্সপেরিমেন্টাল কাজ পশ্চিমবঙ্গেই বেশি হচ্ছে বলে মনে হয় আমার।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটছে উলটোভাবে। প্রথাগত কবিতার ধারাকে একদম নাকচ করে দিয়ে বড় একটা অংশ কবিতা লিখছেন অনেক আগে থেকে। এতটা পথ এসে হুট করে পশ্চিমবঙ্গের কারো ছন্দচর্চা দেখে মনে করতেই পারেন পশ্চিমবঙ্গ এখনো কবিতায় পুরনোকে আঁকড়ে আছে। তবে এই বিরূপভাবটা অল্প কিছু মানুষেই সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের কবিরা এখনো উৎপল, ভাস্কর চক্রবর্তী দ্বারা প্রভাবিত হন, কবিতার নতুন কোনো নিরীক্ষাকে মন দিয়ে পড়েন। পশ্চিমবঙ্গের অনেক কবিকে বাংলাদেশের কবিতার নিরীক্ষা নিয়ে উৎসাহী হতে দেখেছি।
মোটাদাগে যদি এই বিরূপভাব থাকে, তবে তা রুচিগত দুরত্বের কারণেই। দুই বাংলার কবিতার প্রবণতা ও পট দুইরকম বলেই।
শৌর্যদীপ গুপ্ত: এপার হোক আর ওপার, তোমার সমসাময়িক বাংলা কবিতাকে কীভাবে পড়তে চাও?
রনক জামান: কবিতাকে সবসময় আত্মপরিচয়ের অংশ হিসেবে দেখতে ও পড়তে চেয়েছি। আমি চাই না বাংলা কবিতা পড়তে বসে মনে হোক আমরা মানসিকভাবে পাশ্চাত্যের অধীনস্ত। এজন্য নতুন চিন্তা প্রয়োজন। কবিরা যেহেতু ভাষার মূলে ক্যাম্প করে থাকেন, তাঁদের সংবেদনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
আমি চাই না সংস্কৃত বা আরবি ভাষার শব্দে বাংলার মাটি, জলবায়ু, বাঙালির অস্তিত্ব সংজ্ঞায়িত হোক। অন্য ভাষার শব্দ বাংলায় ঢুকবে, তাতে আমাদেরই উপকার। শুধু আমাদের যে নিজস্বতা—সর্বোচ্চ মর্যাদা থেকে কবিতায় কোনো বাক্যেই যেন টলে না ওঠে, বাংলার অকৃত্রিম স্বাদটা যেন ঠিক থাকে। পাশ্চাত্যের ধারা থেকে শিক্ষা ও সার বরাবরের মতোই আমরা নেব, যেমনটা পাশ্চাত্য নিয়েছে উপমহাদেশের দর্শন ও সার।
পশ্চিমবঙ্গের কবিতায় প্রথাগত ভারতীয় সাহিত্যের প্রভাব যেমন থাকছে, আবার বাংলাদেশও নিজস্বতা নির্মাণের তাগিদে নিজেদের মতো করে আগাচ্ছে—এতে দুই বাংলার কবিতার ধারাও দুইদিকে যাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যেকে যেন অন্য বাংলার কবিতার বিস্তারিত স্বাদটা বুঝতে পারি। এটুকুই চাই।