Friday, April 18, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

যে হ্রদে নামলেই জীবিত প্রাণী পাল্টে যায় পাথরে!

এই হ্রদের পানিতে অন্যান্য সমস্ত প্রাণী পাথর হয়ে গেলেও, রেড ফ্লেমিঙ্গো পাখিদের শরীরে এর কোনো প্রভাব পড়ে না

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম

এটি এমন একটি হ্রদ যেখানে নামলেই মারা যায় পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী। শুধু তাই নয়, পানিতে থাকা লবণের আধিক্যর কারণে মৃত প্রাণীরা জমে যায় পাথরের মূর্তির মতো। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি অন্য সব হ্রদ থেকে ভিন্ন। এটি মূলত এর অদ্ভুত রূপ ও ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের জন্য পরিচিত। বিস্ময়কর ভূতাত্ত্বিক এই স্থানটি পূর্ব আফ্রিকার তানজানিয়ায় অবস্থিত একটি লবণাক্ত হ্রদ। রহস্যময় এই হ্রদের প্রথম খোঁজ পান ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার নিক ব্র্যান্ড।

হ্রদ আবিষ্কার

হ্রদের পোশাকী নাম ন্যাট্রন। ২০১৩ সালে তানজানিয়ার অরণ্যে বন্যপ্রাণীদের ছবি তুলতে গিয়ে আরুশা প্রদেশের নেট্রন হ্রদের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার নিক ব্র্যান্ড। সেই সময়ই হ্রদটিকে ঘিরে থাকা পাথরের মূর্তিগুলো তার নজরে আসে।

প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন যে, স্থানীয়রা পাথরের মূর্তি খোদাই করে সেখানে সাজিয়ে রেখে গিয়েছেন। কিন্তু পরে বোঝেন যে, সেই দুর্গম এলাকার ধারে কাছে কোনো বসতি নেই। তার পর সেখানকার সেই মূর্তিগুলোকে ভালো ভাবে নিরীক্ষণ করে তিনি বুঝতে পারেন যে সেগুলো আসলে পাথরের মূর্তি নয়। বরং, পাথর হয়ে যাওয়া প্রাণীর মৃতদেহ। তখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ পাথরে পরিণত হয়নি, এমন বেশ কিছু প্রাণীর দেহাংশও তার নজরে আসে। নিকের তোলা সেই সব ছবি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আর তার পর থেকেই তা নিয়ে ইউরোপ জুড়ে শুরু হয় অনেক আলোচনা।

নামকরণের স্বার্থকতা

নিকের তোলা ছবি প্রকাশ্যে আসার পরই অনুসন্ধানে নামেন গবেষকরা। পানির নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায় যে, হ্রদের তলদেশ আসলে লাভা এবং আগ্নেয় পাথর দিয়ে তৈরি। যে কারণে হ্রদের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে নেট্রন ও ট্রনা নামের দুটি বিশেষ রাসায়নিক যৌগ রয়েছে। এই যৌগগুলোর কারণেই হ্রদের পানি রক্তিম লাল। রাসায়নিক যৌগ নেট্রনের নামানুসারেই এই হ্রদের নামকরণ করা হয়।

পাথরের মূর্তি

এই দুই যৌগের কারণে পানির পিএইচ মাত্রা প্রায় ১২-র কাছাকাছি চলে যায়। যা একটি উচ্চ রাসায়নিক ক্ষার। এবং এই ক্ষারই জীবিত প্রাণীদের শরীর পাথরের মূর্তিতে পরিণত করে। এই হ্রদের পানিতে দীর্ঘক্ষণ কাটালে প্রাণীদের দেহকোষ ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে এবং শরীরে লবণের আস্তরণ জমতে থাকে। একটা সময় পরে, প্রাণীর সমস্ত শরীর সম্পূর্ণভাবে লবণের সাদা আস্তরণে মুড়ে যায়।

ব্যাখ্যাহীন রহস্য

এতো কিছুর মধ্যেও একটা জিনিসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজও মেলেনি। এই হ্রদের পানিতে অন্যান্য সমস্ত প্রাণী পাথর হয়ে গেলেও, রেড ফ্লেমিঙ্গো পাখিদের শরীরে এর কোনো প্রভাব পড়ে না। বহু যুগ ধরে এরা সেখানেই বসবাস করছে। কোনো বিশেষ কৌশলের কারণে তারা হ্রদের বিষাক্ত পানির শিকার হয় না। তা নিয়ে চলছে গবেষণা।

   

About

Popular Links

x