একদিকে করোনাভাইরাস মহামারি অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমের শুরু না হতেই পাবনায় নতুন করে সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। দেখা মিলছে অতি বিষাক্ত দুর্লভ প্রজাতির সাপ রাসেল ভাইপারের। গত সপ্তাহে ২ জনসহ জেলায় এক বছরে সাপের কামড়ে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন।
অথচ সাপে কাটা মানুষের চিকিৎসার জন্য ওষুধ নেই জেলার কোনো সরকারি হাসপাতালে। ফলে চলমান মহামারির মধ্যে পাবনাবাসীর জন্য বাড়তি চিন্তা সাপের উপদ্রব। সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩০ মে রাতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরাঞ্চলে এক নারীকে সাপে কামড় দেয়। ওই নারীকে নিয়ে যাওয়া হয় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে। সাপটিকেও মেরে হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। তিন দিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান ওই নারী।
চিকিৎসকরা জানান, সাপটি কামড় দিয়ে পুরোপুরি বিষ ঢালতে না পারায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি।
এরপর পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা মৃত সাপটিকে পাঠান পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবে। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা পর্যবেক্ষণ করে সাপটি আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংঘের (আইইউসিএন) বিলুপ্ত তালিকায় থাকা দুর্লভ প্রজাতির রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত হন।
পাবনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী মুহিউদ্দিন বলেন, এই বিষধর সাপটিকে এখানে সংরক্ষণ করে গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে।
ওই এলাকা পরিদর্শন করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা মিতা জানান, রাসেল ভাইপার নামে বিষধর সাপের খবর পেয়ে স্থানীয় কৃষকসহ সবাইকে চলাফেরায় সতর্কতার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গামবুটও সরবরাহ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ন্যাচারাল এন্ড ওয়াইল্ড কনজারভেশন কমিউনিটির সভাপতি সুপ্রতাপ চাকী বলেন, রাসেল ভাইপার অত্যন্ত বিষধর সাপ। এই সাপ কামড় দেওয়ার ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে মৃত্যুর সম্ভাবনা খুব বেশি। এই সাপের প্রতিষেধক পাওয়া বেশ দুষ্কর।
স্থানীয়রা জানান, ঈশ্বরদীর পদ্মার তীরবর্তী চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রামে এবার ব্যাপক হারে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলায় সাপের কামড়ে মারা গেছেন দুজন। অসুস্থ হয়েছেন আরও অনেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সাপে কামড় দেওয়ার পর চিকিৎসার জন্য পাবনার কোনো সরকারি হাসপাতালে লাভ হয় না। পাবনা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারায় বাঁচানো সম্ভব হয় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে ঈশ্বরদীতে পলি খাতুন, শাহজালাল ইসলাম, রাজা আলী, পাবনা সদরের আফজাল কাজী, বিএনডিসির নৈশ প্রহরী জোনাব আলী, চাটমোহরের মাদরাসা শিক্ষক শফিউল আলম, সাঁথিয়া উপজেলার হান্নান খানসহ মারা গেছে প্রায় ১৫ জন।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মেহেদী ইকবাল বলেন, জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রতিষেধক থাকাটা খুবই জরুরি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিতে না পারলে জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, “চিকিৎসকদের সঙ্গে সভায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করব। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করে হাসপাতালগুলোতে কীভাবে সাপের আনা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।”