রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সমর্থকেরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ার চেষ্টার সময় পুলিশ বাধা দিলে এই হামলা চালান তারা। এরপর দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে সিংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। এমন সময় সাঈদীর অনুসারী ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সদস্যরা হট্টগোল সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে জামায়াতের অনুসারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদীর মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার বিকালে পিরোজপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে নিজের গড়া সাঈদী ফাউন্ডেশনে জানাজা শেষে সেখানকার কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মৃত্যুর আগে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় রবিবার সেখান থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনা হয়।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। সাঈদী তার আগে থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো ২০টি মানবতাবিরোধী ঘটনার অভিযোগ আনা হয় সাঈদীর বিরুদ্ধে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এসব মামলায় রায় ঘোষণা করে ট্রাইবুনাল। ঘোষিত রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালে সংঘটিত হত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতনসহ অন্তত ২০টি মানবতাবিরোধী অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে পিরোজপুরে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা এবং বিসা বালি হত্যা।
ওই রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।
সাঈদী আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়। তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ আসে। ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন হলেও তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।