আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক খাইরুল ইসলামকে পার্বত্য জেলায় বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে তাকে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পার্বত্য জেলায় বদলি করা হয়।
গত ১৪ আগস্ট সাঈদীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম শোক জানিয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। সেখানে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে তিনি “কোরআনের পাখি” সম্বোধন করে তার জন্য জান্নাত প্রার্থনা করেন। তবে পোস্টটি দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তা ডিলিট করে দেন খাইরুল।
পোস্টটি মেট্রোপলিটন পুলিশের নজরে এলে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী তদন্তে ফেসবুক পোস্টের সত্যতা পান। বুধবার তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুতে শোক জানানো অসদাচরণ। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। খাইরুল ইসলাম পুলিশ বিভাগে কর্মরত। তার কর্মকাণ্ড সরকারি চাকরিবিধি ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ ও শৃঙ্খলা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার বিজয় বসাক জানান, খাইরুল ইসলামের ফেসুবক পোস্টটি নিয়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশ সদর দপ্তরে সেই তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়। সেখান থেকেই বদলির নির্দেশ আসে।
ঘটনার বিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক খাইরুল ইসলাম জানান, তিনি সরল মনে পোস্টটি দিয়েছিলেন। পরে বুঝতে পারেন সেটি দেওয়া তার ঠিক হয়নি। কিছু সময় পর তিনি পোস্টটি ডিলিট করে দেন।
গত ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদীর মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, সাঈদীর মৃত্যুকে ঘিরে সহিংস তাণ্ডব শুরু করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা জনসাধারণের জানমালের ক্ষতির চেষ্টা করে। দেশব্যাপী অনেক জায়গায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়। পুলিশ তাদের তৎপরতা প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, সাঈদীর মৃত্যুর পর তার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠান ও এর জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ঢাকা ও কক্সবাজারে সাত হাজারের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢাকায় একটি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
জামায়াতে ইসলামির মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সারাদেশে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৫০-৬০টি মামলা করেছে পুলিশ। আর প্রায় ২৫৫ জনের মতো নেতাকর্মীকে বিভিন্ন জেলায় আটক করা হয়েছে।