ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জিহাদ হাওলাদার নামে এক ব্যক্তিকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি।
পুলিশ বলছে, আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পর তার দেহ টুকরা করেছিলেন “কসাই” জিহাদ।
কলকাতা পুলিশ সেখানকার গণমাধ্যমকে আরও বলেছে, জিহাদ অবৈধভাবে ভারতের মুম্বাইয়ে বাস করতেন। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার মাসখানেক আগে জিহাদকে কলকাতায় এনে রাখেন খুলনার ফুলতলার কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়া। এই শিমুল ভূঁইয়া নাম বদলে সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে পাসপোর্ট তৈরি করে কলকাতায় গিয়েছিলেন। আমানুল্লাহ নামধারী এই শিমুল ভূঁইয়াই এমপি আনোয়ারুলের মূল খুনি বলে দাবি করছে বাংলাদেশ ও কলকাতার পুলিশ।
এই ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আনোয়ারুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। হত্যার জন্য আমানুল্লাহ নামধারী শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন শাহীন।
এ ঘটনায় শিমুল ভূঁইয়াসহ ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিকে বারাসাতের আদালত জিহাদ হাওলাদারের ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে, খুলনায় খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে জিহাদ হাওলাদারের বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানার বারাকপুরে।
স্থানীয়রা বলছেন, জিহাদ এলাকায় থাকাকালে রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। স্থানীয় দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা মামলাসহ, মারামারি, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামি হয়ে তিনি বেশ কিছুদিন ধরে এলাকাছাড়া।
আনসার হত্যা মামলাসহ ফুলতলা ও যশোরে তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। চার ভাই এবং এক বোন তারা। জিহাদের ভাইয়েরা স্কুল ও মাদ্রাসায় চাকরি করেন। বারাকপুরের বাড়িতে তার বাবা জয়নাল হাওলাদার, মা, স্ত্রী মুন্নি বেগম ও ১৯ মাস বয়সী শিশুসন্তান রয়েছে।
দিঘলিয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিহাদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় ২০২৩ সালের ৮ জুন অস্ত্র আইন, ২০২০ সালের ২৫ মে মারামারি ও ২০২০ সালের ২২ এপ্রিল মারামারির মামলা রয়েছে। সে অনেকদিন ধরে আত্মগোপনে রয়েছে।
জিহাদের বাবা জয়নাল আবেদীন হাওলাদার ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “জিহাদের সাথে বহুদিন কথা হয়নি। ঢাকায় একটি ঝামেলার কারণে জেলে ছিল সে। স্থানীয় মারামারি থেকেই জিহাদ সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।”
জিহাদের স্ত্রী মুন্নী বেগম জানান, ২০১৯ সালে প্রেমের সম্পর্কে জিহাদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সে সময় জিহাদ রং মিস্ত্রির কাজ করত। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর একটা ছেলে সন্তান হয়।
তিনি বলেন, “এখানে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা ছিল। ঢাকার একটি মামলায় বাড়িতে কয়েকবার ডিবি পুলিশ এসেছিল। প্রায় ১ বছর জিহাদ চলে গেছে। যোগাযোগও করেনি, টাকাপয়সাও পাঠায়নি। মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল প্রায় ৯ মাস আগে। শুধু তার ছেলে ও বাবা-মা কেমন আছে সেই বিষয়ে খবর নিয়েছিল।”
মুন্নি বেগম আর বলেন, “জিহাদের কারণে আমার নিজের মা-বাবার সাথে আমার আজ সম্পর্ক নেই। জিহাদেরবড় ভাইয়েরও কোনো যোগাযোগ করে না। শ্বশুরে আয়ে সংসার চলে।”
বারাকপুরের বাসিন্দা নজরুল আকন্দ জানান, জিহাদ রং মিস্ত্রির কাজ করত। কয়েক বছর আগে এখানে গ্রামের স্থানীয় রাজনীতির দুই গ্রুপের মারামারি ঘটনায় সেসহ গ্রামের অনেকের নামে মামলা হয়। তারপর থেকে সে পালিয়ে বেড়াত।
জিহাদের প্রতিবেশী মো. সোহেল জানান, স্থানীয় বিরোধে মামলায় জড়ানোর পর জিহাদ জেলও খাটে। তারপর জামিনে বের হয়ে একটি ডাকাতি মামলায় জড়ায়। একটি হত্যা মামলায়ও সে আসামি।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের কলকাতা যান। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর ২২ মে তার খুন হওয়ার বিষয়টি দুই দেশের পুলিশ নিশ্চিত করে। কলকাতার নিউ টাউনে আক্তারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে আনোয়ারুলকে খুন করা হয়।