শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছেলেদের আবাসিক হলগুলোতে “ছাত্রলীগের দোসররা সাধারণ ছাত্র পরিচয়ে এখনও ঘাপটি মেরে আছে” এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয়দের দেওয়া আল্টিমেটামের মুখে হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও নয়াবাজার এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে শাহপরাণ হলের সামনে অবস্থান নিয়ে এই আল্টিমেটাম দেন।
এ সময় স্থানীয়রা “ছাত্রলীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান”, “খুনি হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান”, “ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না” ইত্যাদি স্লোগান দেন।
স্থানীয়দের বিক্ষোভ চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবি সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তমঞ্চে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যদি হলে ছাত্রলীগের কেউ থেকে থাকে তাদেরকে আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে হল থেকে বের করব। সেজন্য আমরা একটা গুগল ডক ফাইল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেখানে যারা যারা ছাত্রলীগের সাথে জড়িত আছে তাদের সব কর্মকাণ্ডের তথ্য দেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই করে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন তারা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তার শঙ্কায় হল ত্যাগ করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত ১৫ বছর শেখ হাসিনার আমলে ছাত্রলীগের দোসরেরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অপরাজনীতির চেষ্টা চালিয়ে মানুষকে খুন, গুম হত্যার সাথে লিপ্ত ছিল। ছাত্রলীগের একটা চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে এখনও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই হলের সব শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল ছেড়ে দিতে হবে। নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিলে নিয়ম অনুযায়ী তারা আবার হলে উঠতে পারবে। তবে হঠাৎ হল ছাড়ায় সিদ্ধান্তে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, এর আগে সোমবার দুপুর ১২টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সভায় তারা সিদ্ধান্ত নেন, যতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন না আসবে ততদিন সবাই মিলে নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি গুগুল ডক ফাইল খুলে যারা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের তথ্য সেখানে দেওয়ার আহ্বান জানান সমন্বয়করা। সেই অনুযায়ী যাচাই বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তাদের সেই সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয়রা মিছিল নিয়ে দুই দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।
উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন শাবিপ্রবির উপচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তারপর থেকেই ভিসি-বিহীন রয়েছে ক্যাম্পাস।