Friday, April 25, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার দাবি পর্যটকদের

সুন্দরবনে খুব কাছ থেকে নিজের চোখে বাঘকে দেখতে পেয়ে বেজায় খুশি পর্যটকরা

আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৭ এএম

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে আবারও সরাসরি বাঘের বিচরণ প্রত্যক্ষ করেছেন পর্যটকরা। বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বড় কটকা এলাকায় পর্যটকরা একটি বাঘকে সাঁতার কেটে খাল পার হতে দেখেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে প্রাপ্তবয়স্ক ওই বাঘটি সাঁতরিয়ে খাল পার হচ্ছিল বলে জানান পর্যটকরা। এ নিয়ে এক মাসের মধ্যে সুন্দরবনে পর্যটকরা ৪টি বাঘ দেখতে পেয়েছেন। সুন্দরবনে খুব কাছ থেকে নিজের চোখে বাঘকে দেখতে পেয়ে বেজায় খুশি তারা।

সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে বাঘের বিচরণ দেখে বলা যায়, সুন্দরবনে আগের চেয়ে বাড়ছে বাঘের সংখ্যা। ২০২৪ সালের অক্টোবরের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি।

বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হুমকির মুখে সুন্দরবন। আর বাঘ প্রতিনিয়ত হুমকি উপেক্ষা করে সুন্দরবনে টিকে আছে। বাঘ রক্ষা করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

পর্যটকরা বলছেন, বাঘ রক্ষা করতে না পারলে সুন্দরবন রক্ষা করা যাবে না। সুন্দরবন রক্ষা করতে পারলে বাঘ রক্ষা হবে। আর বাঘ রক্ষা হলে সুন্দরবন রক্ষা হবে।

জানা গেছে, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ এবং ধরা নামে দু’টি সংগঠন যৌথভাবে সুন্দরবন ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে আগামী এক বছরে তাদের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য কর্মশালার আয়োজন করে। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ নানা বয়সের ৪১ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে ‘দি সেইল’ নামে জলযানটি ৩ দিনের ট্যুরে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মোংলা থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা হয়। ওই জলযানটি মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা খাল দিয়ে কচিখালী যাওয়ার পথে বড় কটকা খালের মুখে পৌঁছালে পর্যটকরা একটি বাঘকে সাঁতরিয়ে খাল পার হতে দেখে। এসময় বাঘ বাঘ বলে পর্যটকদের মধ্যে হৈ-চৈই পড়ে যায়। প্রায় দেড় মিনিট ধরে তারা বাঘটি প্রত্যক্ষ করেন। উচ্ছ্বাস আর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ওই জলযানে থাকা সব পর্যটকদের মধ্যে। অনেকে বিরল ওই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ভিডিও এবং স্থির চিত্র ধারণ করেন।

ওই জলযানে কর্মশালায় অংশ নেওয়া পশুর রিভার ওয়াটার কিপার মো. নূর আলম বুধবার দুপুরে জানান, দি সেইল নামে জলযানে সুন্দরবন ঘুরতে ঘুরতে তারা আগামী এক বছরের জন্য কর্মপকিল্পনা গ্রহণ করছিল। তাদের জলযানটি বনের বড় কটকা খালের মুখে পৌঁছালে দূর থেকে খালের মধ্যে কিছু একটা দেখতে পায়। জলযানটি কাছে নিয়ে তারা দেখে একটি প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ খাল সাঁতরিয়ে পূর্ব পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ে যাচ্ছে।

মো. নূর আলম আরও জানান, বিগত ২৫ বছরে তিনি কমপক্ষে ৩০ বার সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু এই প্রথম তিনি সুন্দরবনে নিজের চোখে বাঘ দেখতে পেয়েছেন। বাঘ দেখার পর তার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি মনে হয়েছে। সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ প্রত্যক্ষ করার এই দৃশ্য তার কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে তিনি জানান।

জাহাজে থাকা ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী  শরীফ জামিল জানান, বিগত ২০ বছরে তিনি ৫০ বারের বেশি সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু এই প্রথম নিজের চোখে সরাসরি বাঘ প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। ছবি এবং ভিডিওতে বাঘ দেখা আর সামনা সামনি নিজের চোখে বাঘ দেখার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। বাঘ যে কত সুন্দর এবং শক্তিশালী প্রাণি— তা সামনা সামনি না দেখলে অনুধাবন করা যায় না। তার চোখের সামনে দিয়ে বিশাল একটি খাল সাঁতরিয়ে বাঘটি তীরে উঠার পর তার বিশালতা এবং সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করেছে।

শরীফ জামিল আরও জানান, বাঘ রক্ষা করতে না পারলে সুন্দরবন রক্ষা করা যাবে না। বাঘ দেখার পর এমন ধারণা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন দিন দিন ধ্বংসের মুখে। সুন্দরবনে প্রজাপতি যে পরাগয়ন সেটাও বাঘ বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র ধরে রাখতে না পারলে বাঘ এবং সুন্দরবন কোনোটাই রক্ষা করা যাবে না। এজন্য সুন্দরবন একে অপরের পরিপূরক। বাঘ রক্ষা করা মানে সুন্দরবন রক্ষা করা, সুন্দরবন রক্ষা করা মানে বাঘ রক্ষা করা।”

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, সুন্দরবনে বাঘের বিচরণ এখন অনেক বেশি। প্রায়ই সুন্দরবনের নদী-খাল এবং বনের মধ্যে বনের কার্যালয়ের আশেপাশে বাঘের দেখা মিলছে। সুন্দরবনে বাঘ বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম আরও জানান, বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন নিরাপদ রাখতে তারা চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে বাঘের প্রধান খাদ্য হরিণ যাতে নিরাপদে থাকে, এজন্যও তারা সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, সুন্দরবনে বাঘ বিভিন্ন সময়ে নদী-খাল সাঁতরিয়ে এপার ওপার যাওয়া আসা করে। সুন্দরবনে বাঘ দেখা স্বাভাবিক বিষয়। প্রতি তিন বছর পর পর সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা করা হয়। ওই প্রকল্পের অধীনে সুন্দরবনে নানা কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

পর্যটক ও বন বিভাগ জানায়, ১৮ জানুয়ারি দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার কটকা অভয়ারণ্য এলাকার বেতমোর নদীর পাশে তিনটি বাঘ দেখতে পান। এমভি আলাস্কা লঞ্চ কটকা এলাকা অতিক্রম করার সময় সুন্দরবন ভ্রমণকারী দেশি-বিদেশি পর্যটকরা একই সময় পাশাপাশি তিনটি বাঘ দেখেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল এলাকায় একটি খালে বন বিভাগের স্টাফরা একটি বাঘিনী দেখতে পেয়ে ছিল। গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে কটকা-কচিখালী এলাকায় ৪টি বাঘ দেখতে পায় বন বিভাগের স্টাফরা। এছাড়া বিভিন্ন সময় বন বিভাগের কার্যালয়ের পাশে বাঘ ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে পর্যটকদের নজরে পড়ে বাঘ।

বন বিভাগের তথ্য মতে, বিগত কয়েক বছর ধরে “ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে” সুন্দরবনে বাঘ গণনা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের অক্টোবরের জরিপ অনুসারে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি। এর আগে ২০১৮ সালে একইভাবে গণনা করে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি নির্ধারণ করা হয়। ২০১৫ সালে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে গণনার ফলাফল অনুসারে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি।

   

About

Popular Links

x