২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মধ্যে প্রতিরোধ ও সামাজিক ভাবনার মাধ্যম হিসেবে নিজের গুরুত্ব ফিরে পেতে শুরু করেছে গ্রাফিতি। এরইমধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় রেলওয়ের একটি পরিত্যক্ত একতলা অফিস ভবনের দেয়ালে দেখা গেছে গ্রাফিতি।
২০ ফুট লম্বা আর প্রায় ১২ ফুট উঁচু সাদা রঙের প্রলেপ দেওয়া দেয়াল। সেখানে একটা গাধার পিঠে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন একজন “ভাবুক”। “ভাবুকটি” আবার যে-সে নয়। বিখ্যাত ফরাসি ভাস্কর আগুস্ত রোঁদ্যার (১২ নভেম্বর ১৮৪০-১৭ নভেম্বর ১৯১৭) “দ্য থিংকার” ভাস্কর্যের প্রতিরূপ।
বিখ্যাত এই ভাস্কর্য জ্ঞান বা দর্শনের রূপক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। একই সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদেরও প্রতীক হিসেবে দেখা হয় “দ্য থিংকার” ভাস্কর্যটিকে।
মজার বিষয় হলো, গাধার পিঠে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন “ভাবুক”। ছবির পেছনে রোমান হরফে “হবেকি” (HOBEKI?) লেখা। যা ২০১৭ সালে ঢাকায় সাড়া জাগানো “সুবোধ” গ্রাফিতির কথাই মনে করিয়ে দেয়।
২০১৭ সালে ঢাকার দেয়ালে আবির্ভূত রহস্যময় “সুবোধ” গ্রাফিতি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ হয়ে সবার মনের গভীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে লেখা ছিল, “সুবোধ তুই পালিয়ে যা, সময় তোর পক্ষে না”; “সুবোধ তুই পালিয়ে যা তোর ভাগ্যে কিছু নেই”; যা এর সূক্ষ্ম রাজনৈতিক অন্তর্নিহিততার কারণে অনেকের কাছে গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছিল।
ঢাকার পর “হবেকি” লোগোযুক্ত গ্রাফিতি প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে দেখা গেল। এখানকার শিল্পী ও শিল্পবোদ্ধারা বলছেন, ঢাকার দেয়ালে আঁকা “সুবোধ” আর চট্টগ্রামের সিআরবির দেয়ালে আঁকা “ভাবুকের” ছবি একই শিল্পীর আঁকা। গ্রাফিতি শিল্পীদের রীতি অনুযায়ী এসব শিল্পকর্মের স্রষ্টাও নিজের নাম গোপন রেখেছেন।
গাধার পিঠে দেশের বুদ্ধিজীবীদের বসিয়ে ভিন্ন এক তাৎপর্য আনতে চেয়েছেন শিল্পী। তীব্র বিদ্রূপে ভরা এই চিত্রে দেখানো হয়েছে সূক্ষ্ম চিন্তার অধিকারী লোকজন বস্তুত বসে আছেন গাধার পিঠে। অর্থাৎ “ভাবুকদের” ভরসা গাধার বুদ্ধির ওপর, গাধা যেখানে নিয়ে যাবে, সেটিই তাদের গন্তব্য।
গ্রাফিতি দীর্ঘকাল ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যের একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ব্যাঙ্কসির মতো বিখ্যাত আন্তর্জাতিক শিল্পীরা সামাজিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য রাস্তার শিল্প ব্যবহার করেন। বিশ্বের কিছু অংশে, এই ধরনের কাজকে সাংস্কৃতিক শিল্পকর্ম হিসেবে গ্রহণ এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে।
“হবেকি” শিল্পকর্ম ইতোমধ্যে সিআরবিকে একটি উন্মুক্ত গ্যালারিতে পরিণত করেছে। বার্তাটি বোঝার জন্য উৎসুক জনতাকে ভিড় করতে দেখা গেছে। সামাজিকমাধ্যমেও ছবিটি ছড়িয়ে পড়ছে। নেটিজেনরা নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়ে “হবেকি” মোটিফের পুনরুত্থান বাংলাদেশে রাজনৈতিক নতুন চিন্তার বিকাশকেই তুলে ধরছে।