Saturday, April 19, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় সম্পৃক্ততা নেই, দাবি চারুকলার ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’

  • নির্দিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় অতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ
  • এবারের বৈশাখকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম

বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে বের হবে “মঙ্গল শোভাযাত্রা”।

এবারের নববর্ষ উদ্‌যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান”। বরাবরের মতো এ বছরও নববর্ষের শোভাযাত্রার মূল আয়োজন করবে ঢাবির চারুকলা অনুষদ ।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার শোভাযাত্রা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। এতে দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তারা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপাদানগুলো নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে তারা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

তবে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। শোনা গিয়েছিল, পরিবর্তন হতে হতে পারে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম। তবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

এরপর জানা গিয়েছিল, এ বছর শোভাযাত্রায় থাকবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য। দুই হাত প্রসারিত বুক টান করে দাঁড়ানোর অকুতোভয় দৃশ্যটি ভাস্কর্যে তুলে আনা হবে। আর এই ভাস্কর্যটি হবে ২০ ফুট দীর্ঘ। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসে ঢাবির চারুকলা অনুষদ।

এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই এবার নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে ঢাবির চারুকলা অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি বিবৃতি। চারুকলা অনুষদের ৭০তম ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দেওয়া ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্ব থাকে চারুকলা অনুষদের নির্দিষ্ট একটি ব্যাচের ওপর। সেই হিসেবে এ বছর শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্ব অনুষদের ৭০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের।

তবে বুধবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ৭০তম ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, এবার শোভাযাত্রায় তাদের সম্পৃক্ততা নেই। তাদের অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় খুবই অতর্কিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে স্পষ্ট বিবৃতি শিরোনামের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ২০১৭-১৮ সেশন তথা, ২৬ তম ব্যাচ (চারুকলা ৭০তম) এর শিক্ষার্থীরা আমাদের পক্ষ থেকে কিছু বিষয় স্পষ্ট করতে চাই। শুরুতেই সবার অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, এবারের বৈশাখের আয়োজনের সাথে আমাদের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। মূলত বৈশাখ প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধায়নে এবং সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়ে থাকে। যে আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর আমাদের ব্যাচের দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারের আয়োজন একেবারেই চারুকলা অনুষদের পূর্বাপর রীতির ব্যতিক্রমীভাবে কোনরকম শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা ছাড়া শুধুমাত্র শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে করা হচ্ছে যা আমাদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এছাড়া এবার একাডেমিকভাবে বৈশাখ আয়োজন করার এই সিদ্ধান্ত অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ছাত্র প্রতিনিধি কারো সাথে কোনরকম পূর্ব আলোচনা ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় খুবই অতর্কিতভাবে নেওয়া হয়েছে।

উপরন্ত, শোভাযাত্রায় বানানো স্ট্রাকচার এর ডিজাইন এবং আইডিয়া সম্পূর্ণ শিক্ষকদের দেওয়া, চারুকলার আপামর সাধারণ শিক্ষার্থী এর সাথে কোনও ভাবেই সংযুক্ত এবং অবগত না। শহীদ আবু সাঈদের স্ট্রাকচার সম্পর্কে ও আমরা অবগত ছিলাম না এবং কারো ব্যক্তিগত মতাদর্শে আঘাত দেওয়ার পক্ষেও না আমরা। এহেন কুরুচিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে নেওয়া হয়নি এবং চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের সাথে ছিলনা অতএব এর জন্য অনলাইনে তৈরি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার দায় সমগ্র চারুকলার নয় বরং দায়িত্বে থাকা নির্দিষ্ট কতিপয় আয়োজক এবং ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ওপর বর্তায়।

এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈশাখ। এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের চাটুকারিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা এটুকু স্পষ্ট করে জানাতে চাই যে, আমরা মোটাদাগে প্রতিবছর চারুকলা অনুষদে আয়োজিত হয়ে আসা বৈশাখের আয়োজন নয় বরং স্বজনপ্রীতিদুষ্ট ও দেশের পরিবর্তনকালীন সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী এবারের 'বৈশাখ ১৪৩২' এর আয়োজন ও আয়োজক কমিটিকে আমরা, চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি আমাদের এই সিদ্ধান্তকে সবাই সমর্থন ও সম্মান জানাবে।”

উল্লেখ্য, ঢাবির চারুকলা অনুষদ ১৯৮৯ সাল থেকে পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে এটির নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।

জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।

   

About

Popular Links

x