বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে বের হয়েছে “শোভাযাত্রা”। তবে এ বছর শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর নতুন নাম করা হয়েছে “বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা”।
চারুকলা অনুষদ ১৯৮৯ সাল থেকে পহেলা বৈশাখে এই শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে এর নাম ছিল ‘‘আনন্দ শোভাযাত্রা”। পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা”।
জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর এই শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।
“মঙ্গল শোভাযাত্রা অন পহেলা বৈশাখ” – বাংলা বর্ষবরণের আয়োজনটিকে ইউনেস্কোর অপরিমেয় বিশ্ব সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতির সনদে এভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছিল নাম বদলের ফলে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না, তা নিয়ে।
এই বিষয়ে জানতে চেয়ে ইউনেস্কোকে ই-মেইল করেছিল সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা। সেই মেইলের জবাবে জাতিসংঘের সংস্থাটি জানিয়েছে, “মঙ্গল শোভাযাত্রা” নাম পরিবর্তন করে “বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা” রাখায় ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ধরে রাখতে নতুন করে আবেদন ও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
বিবিসি বাংলাকে ইউনেস্কো জানিয়েছে, অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের “জীবন্ত প্রকৃতি এবং গতিশীলতাকে” বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের (নাম) পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে। এজন্য ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ কমিটি বা অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ওই কমিটি ২৪টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত।
তবে, এখন পর্যন্ত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়নি বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে ইউনেস্কো।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া মেইলে সুরক্ষা বিষয়ক একটি বার্তাও জুড়ে দিয়েছে ইউনেস্কো। সেখানে বলা হয়েছে-
"উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, অপরিমেয় সাংস্কৃতি ঐতিহ্যের সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কোর সনদে, নির্দিষ্টভাবে এথিক্যাল প্রিন্সিপালস্ বা নৈতিক অবস্থান সংক্রান্ত নীতিমালায় জোর দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এ ধরনের ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রকৃতি ও গতিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় ও অংশীজনদের যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি, সম্ভাব্য ও নির্দিষ্ট প্রভাব সম্পর্কে সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন করতে হবে যেন ঐতিহ্য বা সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”