আগামী অর্থবছর থেকে নারীদের গৃহস্থালি কাজ জিডিপি হিসাবে যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে বলে গত মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অস্বীকৃত ও অমূল্যায়িত গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজ যোগ করার নির্দেশ দেওয়ায় সরকারের এ সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জিডিপিতে নারীর গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি না থাকার একটা বড় কারণ কীভাবে এই অবদান হিসাব করা হবে তার পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা।যেহেতু আর্থিক মূল্য ছাড়া কোনো কাজই বাজার অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয় না, তাই বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতিবিদরা সাধারণত স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট সিস্টেমের ওপর নির্ভর করেন।বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে বলে এর আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
তিনি বলেছিলেন, “দেশে জিডিপির হিসাব করা হয় আন্তর্জাতিক মডেল অনুসরণ করে। জাতিরসংঘের পরিসংখ্যান কমিটির ন্যাশনাল সিস্টেম অব অ্যাকাউন্টস পদ্ধতিতে জিডিপি হিসাব করা হয়। সারাবিশ্বে এই নিয়মে হিসাব করা হলেও বাংলাদেশে নারীর গৃহকর্মকে হিসাবে আনা হয় না।”
বিশেষজ্ঞের মতে, স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট পদ্ধতিতে একটি হিসাব করে নারীর কাজ মূল্যায়ন করা সম্ভব। নারীরা বাসার কাজে যে সময় দিচ্ছেন, তা বাইরে করলে কত টাকা পেতেন, এটার হিসাব করে জিডিপির মূল হিসাবের পাশাপাশি এই হিসাব করা যায়। এটা এক ধরনের ছায়া মূল্যায়ন।এই স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে লিঙ্গ সমতা, পরিবারের আয়-ব্যয়, সার্বিক দায়িত্বপালনের মতো বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অর্থনীতিতে নারীর এ অবদান যুক্ত করা সম্ভব হলে ৭০ থেকে ৮০% জিডিপি বাড়বে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “নারীরা যেসব কাজ করছেন তার মধ্যে যেগুলো সেবামূলক কাজ নয়, যেসব কাজ অর্থনৈতিক, কিন্তু জিডিপিতে নেই— সেসব কাজকে মূল্যায়ন করা দরকার এবং সেটাই করার কথা ভাবা হচ্ছে। যেসব অর্থনৈতিক কাজে নারী অবদান রাখছে, কিন্তু অর্থনৈতিক মূল্যায়ন হচ্ছে না— সেসব কাজকে আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করা। যেমন, কৃষিতে ২৩ ধরনের কাজের ১৭টা কাজ নারীরা করে থাকেন। সেই কাজগুলো বাইরের লোকদের দিয়ে করালে অর্থ খরচ করতে হতো। সেই পরিমাণ অর্থ এখানে নারীর অবদান হিসাবে অর্থনীতিতে যুক্ত হবে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরুষদের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি মজুরিবিহীন কাজ করেন নারীরা। একজন নারী সপ্তাহে গড়ে ২৪ ঘণ্টা, অর্থাৎ দিনে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা গৃহস্থালির মজুরিবিহীন কাজ করেন।
অন্যদিকে, “শ্রম জরিপ ২০২২” এর প্রতিবেদনে কৃষিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অবদান বেশি বলে তথ্য উঠে এসেছে। নারীদের শুধু মাঠে গিয়ে কাজ নয়, ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব করে দেখা গেছে— কৃষিতে পুরুষের তুলনায় নারীদের অবদান বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৪৩% এর বেশি নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্ত। পুরুষের সংখ্যা সেখানে ১% এর কম। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০%। তবে নারীর এই গৃহস্থালি কাজকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে (এসএনএ) যোগ করা গেলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮%।