ছোটপর্দার অভিনেত্রীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় শবনম ফারিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। বর্তমানে শোবিজে নিয়মিত না হলেও পাশাপাশি যুক্ত রয়েছেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের প্রসাধনী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
গত ১৮ মার্চ সেই প্রতিষ্ঠানের একটি অনুষ্ঠানে একমঞ্চে হাজির হয়েছিলেন শাকিব খান, ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ, তানজিদ হাসান তামিমসহ বিভিন্ন অঙ্গনের একঝাঁক তারকা
অনুষ্ঠানের কয়েকটি ভিডিও ক্লিপে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠতে দেখা গেছে অভিনেত্রীদের। এরমধ্যে একটি ক্লিপে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াকে হাসতে হাসতে বলতে শোনা যায়, আমি তাসকিনের পাশে দাঁড়াব না। আমাকে খাটো লাগবে। তামিম ভাইয়া, তুমি আসো।
শবনম ফারিয়ার সরল স্বীকারোক্তির সেই ভিডিও ক্লিপের মন্তব্যের ঘরে অশালীন মন্তব্য করেন করেন রাকিবুল হাসান নামের এক ব্যক্তি। পরে ওই ব্যক্তির মন্তব্যের স্ক্রিনশটসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান অভিনেত্রী। এর পরদিনই ওই কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাজিদা ফাউন্ডেশন। রাকিবুল ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী। আজ সন্ধ্যায় দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে ফারিয়া জানিয়েছেন, রাকিবুল হাসানকে চাকরিচ্যুত করেছে সাজিদা ফাউন্ডেশন।
ফেসবুকে শবনম ফারিয়া জানিয়েছেন, রাকিবুলের চাকরিচ্যুতির কথা তাকে ই–মেইলের মাধ্যমে জানিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। নিজের ফেসবুক পোস্টে ই–মেইলটিও শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী।
শবনম ফারিয়া লিখেছেন, “আমি খুবই কৃতজ্ঞ, বিষয়টিকে তারা খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছেন। কীভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে, প্রতিষ্ঠানটি সেই উদাহরণ তৈরি করেছে।”
সহিংসতা কেবল শারীরিক নয়, এটা হতে পারে অনলাইন বা রাস্তায় হয়রানি বা অন্য যেকোনো ধরনের ভীতি প্রদর্শন। কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও উল্লেখ করেছেন ফারিয়া।
নিজের পোস্টের শেষে অভিযুক্ত রাকিবুলকে চাকরিচ্যুত করায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটিকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন শবনম ফারিয়া। তিনি মনে করেন, এভাবেই পরিবর্তন হতে পারে। সবাই মিলে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বানও জানান তিনি।
এর আগে, রাকিবুলের কমেন্টের স্ক্রিনশট ও ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি তুলে ধরে শবনম ফারিয়া লিখেছিলেন, “গতকাল আমরা অনেকদিন পর একটা খুব সুন্দর ইভেন্টে গিয়েছিলাম, সেখানের একটা ক্লিপে দেখা যায়, আমি হাসতে হাসতে বলছি, তাসকিনের পাশে দাঁড়াব না, আমাকে খাটো লাগবে। তামিম ভাইয়া তুমি আসো। যেহেতু তাসকিন আর আমি পূর্ব পরিচিত, একদমই খুনসুটি থেকেই বলা, সেখানে এই ভদ্রলোক নিচের মার্ক করা এই কমেন্ট করেছে।”
শবনম ফারিয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে লিখেছেন, “আচ্ছা একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানসিকতার মানুষের অন্য একটা অচেনা মানুষকে কেন বেশ্যা বা পতিতা মনে হবে? পতিতা মানে কী বুঝেন? যিনি যৌন কর্মের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে। কেউ অভিনয় করা মানে যৌনকর্মী হওয়া? আপনি আমার পরিবার সম্পর্কে জানেন? আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানেন? আপনি অভিনয়ের বাইরে আমার অন্য পেশাগত যোগ্যতা সম্পর্কে অবগত?”
এরপরই আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, “আমরা এ ধরনের কমেন্ট প্রায়ই দেখি, বেশির ভাগ সময় ইগনোর করতে হয়। কিন্তু কেন ইগনোর করব? শুধু আপনার হাতে একটা মোবাইল ফোন আছে দেখে আপনি অযথা একটা মানুষকে যৌনকর্মী ডাকবেন? নাকি আপনাদের জন্ম যৌনপল্লীতে যে, জন্ম থেকে এসবই দেখে বড় হয়েছেন, তাই যাকে দেখেন সবাইকেই যৌনকর্মী মনে হয়?”
সবশেষ তিনি লিখেছেন, “দেশে অনেক ধরনের আন্দোলন হচ্ছে, পরিবর্তনের কথা হচ্ছে, কিন্তু এই মানুষগুলোর মানসিকতা কীভাবে পরিবর্তন করতে পারি বলেন তো? এই ভদ্রলোক সাজিদা ফাউন্ডেশনে এ কাজ করেন। এনজিওগুলোতে নাকি সবচেয়ে উদার মানসিকতার লোকেরা কাজ করে। এই যদি হয় তার উদাহরণ, আমি নির্বাক।
শবনম ফারিয়ার ওই পোস্ট দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। সেখানে অশালীন মন্তব্য করা ওই ব্যক্তির সমালোচনা করে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিও জানিয়েছেন অনেকে। তার পাশে থাকার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ফারিয়া।