গত ৭ জুন ঈদ-উল-আজহার ধামাকা আয়োজনে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর অন্যতম ছিল “নীলচক্র”। প্রথম সারির চলচ্চিত্রগুলোর সঙ্গে এই থ্রিলার ঘরানার সিনেমাটিও চলে এসেছে দর্শকদের আলোচনার কেন্দ্রে।
আরেফিন শুভ ও নবাগতা মন্দিরা চক্রবর্তী জুটির ছবিটি ইতোমধ্যে নিজের সমুচিত জায়গা করে নিয়েছে ঢালিউড বক্সঅফিসে। চলুন, “নীলচক্র”-এর নির্মাণ, কুশীলব, চিত্রনাট্য, ও সর্বশেষ আয়ের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
এক নজরে টিম নীলচক্র
ছবির নির্দেশনা ও গল্প লেখনীতে ছিলেন মিঠু খান। কাহিনী রূপায়নে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অঞ্জন সরকার জিমি, অংকন পোদ্দার, এবং নাজিম উদ দৌলা। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে এই প্রথমবারের মত একসঙ্গে কাজ করলেন আরিফিন শুভ ও মন্দিরা চক্রবর্তী। “কাজলরেখা”র পর এটি মন্দিরার দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা।
এতে দেখা গেছে ফজলুর রহমান বাবু, খালেদা আক্তার কল্পনা, এবং শিরিন আলমের মত বর্ষীয়ান অভিনেত্রীদের। নতুনদের মধ্যে ছিলেন প্রিয়ন্তী ঊর্বি, পারভীন পারু, মনির আহমেদ শাকিল, দীপান্বিতা মার্টিন, এবং মাসুম রেজওয়ান। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গেছে শিশুশিল্পী মায়েশা আহমেদ অদিতিকে।
এছাড়াও অন্যান্য ভূমিকায় ছিলেন বড় পর্দার পরিচিত মুখ শাহেদ আলী ও টাইগার রবি।
সিনেমায় আলাদা একটি মাত্রা যোগ করেছিলো সঙ্গীতশিল্পী বালামের অভিনয়। এর মাধ্যমে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে বালামের অভিষেক ঘটলো। এছাড়া গোটা চলচ্চিত্রের মিউজিক কম্পোজেও ইমন সাহার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছেন বালাম।
ঈদের দুই দিন আগে সিনেমায় তার গাওয়া “ধোকা” গানটি প্রকাশ পায়। গানটির গীতিকার রবিউল ইসলাম জীবন, আর সুর করেছেন বালাম নিজেই। এছাড়া অন্যান্য কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে ছিলেন জালালী শাফায়াত এবং মাশা ইসলাম।
অ্যাকশন নির্ভর ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন রাজু রাজ। ফিল্ম লাইফ প্রোডাকশন এবং ফিল্ম ফায়োস প্রোডাকশনের ব্যানারে প্রযোজনায় ছিলেন আসিফ আকবর এবং এনায়েত আকবর মিলন। পরিবেশনায় ছিল অভি কথাচিত্র।
সিনেমার কাহিনী
অনলাইনে ক্লিক বেইটের শিকার হয়ে এক দর্শকের অভিজ্ঞতা কেবল একটি ভুল কন্টেন্ট দেখাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অনেকে সরাসরি স্ক্যামের মত সাইবার অপরাধের অসহায় শিকারে পরিণত হয়। এই চিত্র এখন পুরো শহরের। এভাবে একের পর এক ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস হতে হতে গোটা সমাজ ছেয়ে যায় অন্ধকার আর আতঙ্কে। দানা বেধে ওঠে রহস্য, ভয়, ও উত্তেজনা। এমনি সমসাময়িক গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে “নীলচক্র”।
রহস্য, সাসপেন্স, থ্রিলার, অ্যাকশন, ও নাটকীয়তার এক দারুণ সমন্বয় ছবিটি। হলিউডের অপরাধের সয়লাবে পরিপূর্ণ নয়ের ফিল্মের পুরো আমেজটাই পাওয়া গিয়েছে এতে। একই সাথে এর অন্যতম প্রধান উপাদান ছিল আন্তর্জাতিক ডার্ক ফিল্মের অন্ধকার পটভূমি।
ঢালিউড বক্স অফিসে ‘নীলচক্র’-এর আয়
যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে বিশ্ব প্রিমিয়ারের পর কোরবানী ঈদের দিন বাংলাদেশে মুক্তি পায় “নীলচক্র”। মুক্তির পর দ্বিতীয় দিনে সিনেমার সংগ্রহ ছিল ৩.০২ লাখ টাকা। তৃতীয় দিনে সেটি সামান্য বেড়ে হয় ৩.২৬ লাখ টাকা। তবে চতুর্থ দিনে তা সামান্য কমে দাড়ায় ২.৯৯ লাখে। চতুর্থ দিন শেষে মাল্টিপ্লেক্স থেকে “নীলচক্র”-এর উপার্জন সব মিলিয়ে ১০.০৬ লক্ষ টাকা।
শেষাংশ
৭ জুন ঈদ-উল-আজহায় মুক্তি পাওয়া আরেফিন শুভ ও মন্দিরা অভিনীত “নীলচক্র”-এর এই সমুচিত সাফল্য বাংলাদেশি মূলধারার চলচ্চিত্রে সৃজনশীল সংযোজন। বিশেষত সাইবার অপরাধ সারা বিশ্বের জন্যই একটি চলমান সংকট। এমন পটভূমিতে মিঠু খানের এই নির্মাণটি নিঃসন্দেহে বিশ্ব মানের উপাদান সংযোগের একটি যুগোপযোগী প্রয়াস। অভিনয়ের দিক থেকে সিনেমাটি মন্দিরা এবং বালামের ক্যারিয়ারের জন্য এক মাইলফলক রচনা করেছে। সব মিলিয়ে, দর্শকদের কাছে ছবির গ্রহণযোগ্যতা ভবিষ্যতেও একই ধরণের কাস্টিং, সিনেমাটোগ্রাফি ও গল্পচর্চার দাবি রাখছে।