ক্ষেত বা বাগানে শামুকের উপদ্রব সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। কিছু শামুক মাটির জন্য উপকারী হলেও অন্য কিছু প্রজাতি বেশ ক্ষতি করে। এমন প্রাণী দূরে রাখতে বেশ কিছু কার্যকর অথচ নিরাপদ সমাধানসূত্র রয়েছে।
শামুক তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলে। একটি শামুক ঘণ্টায় ০.০০৩ কিলোমিটার গতিতে এগোতে পারে। সেটির ঘাড়ে বোঝাও কম নয়। সঙ্গে আস্ত বাড়িঘর রয়েছে, বেশি ঠাণ্ডা বা গরম লাগলে তার মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে। প্রবেশদ্বারের এক ছিদ্র দিয়ে শামুক নিশ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে।
প্রাণীটির চোখও কম বিস্ময়কর নয়। প্রথমে শুঁড়গুলি টেলিস্কোপের মতো বেরিয়ে আসে, যার উপর চোখ বসানো রয়েছে। সেই চোখ শুধু আলো ও অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারে। সে তুলনায় শামুক অনেক দক্ষতার সঙ্গে গন্ধ শুঁকতে পারে এবং কোন বাগানে কোথায় সুস্বাদু কিছু বেড়ে উঠছে, দুই সপ্তাহ ধরে তা মনে রাখতে পারে। কারণ ধীর গতি ও এদিক-ওদিক ঘোরাফেরার পাশাপাশি শামুক বিশাল পরিমাণ খোরাক খেতে খুব ভালোবাসে। দিনে তাকে প্রায় নিজের ওজনের সমান খোরাক গিলতে হয়।
এমন রাক্ষুসে খিদের কারণে সহজেই সংঘাত দেখা দিতে পারে। প্রত্যেক মালীর জন্য শামুক উত্তেজনার কারণ হয়ে ওঠে। কিন্তু শামুক শুধু বিরক্তির কারণ নয়। এই প্রাণী বাগানের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কারণ সেটি মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্ট অংশ খায়। শামুক একই সঙ্গে হিউমাস গঠন ও বাগান পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে।
একমাত্র স্লাগ জাতের শামুক বাগানের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে গণ্য করা হয়। জার্মানিতে স্প্যানিশ স্লাগ বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে।
কীভাবে শামুকের মোকাবিলা করা সম্ভব? শামুক মেরে ফেলাই বেশিরভাগ প্রচলিত পদ্ধতির লক্ষ্য। কিন্তু তার ফলে এমনকি উপকারী শামুকেরও মৃত্যু হয়।
লবণও অত্যন্ত ক্ষতি করে। লবণের সংস্পর্শে এলে শামুকের শরীর ভীষণভাবে শুকিয়ে যায়। তথাকথিত বিয়ারের ফাঁদ শামুককে এতই আকর্ষণ করে যে, তার টানে পাশের বাগানের শামুকও চলে আসে। আজকাল বাজারে ফেরিক ফসফেটসহ স্লাগ পেলেটের যে অরগ্যানিক সংস্করণ পাওয়া যায়, সেটি সজারু, ইঁদুর ও পাখির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এই সব প্রাণী কত পরিমাণ শামুক খাচ্ছে, তার উপর বিপদের মাত্রা নির্ভর করে।
তাহলে উপায় কী? দৈনন্দিন ভিত্তিতে শামুক ধরে স্থানান্তরের বদলে শুকনা উপাদান দিয়ে ফুল বা ফলের বেদির সুরক্ষা অনেক বেশি কার্যকর। সডাস্ট, ডিমের খোসা, বালি, ছাই, বা কফি গ্রাউন্ড করার পর অবশিষ্ট অংশ শামুক মোটেই পছন্দ করে না। এই প্রাণী আর্দ্রতা চায়।
শামুক তাড়াতে হাস অত্যন্ত কার্যকর হলেও সেই প্রাকৃতিক সমাধানসূত্রের জন্য বেশ পরিশ্রম করতে হয়। সমান পরিমাণ দারচিনি ও মরিচের মিশ্রণও বেশ কার্যকর কৌশল। জার্মানির শামুক দারচিনির গন্ধ চেনে না। ফলে শামুক লেটুস পাতার গন্ধও পায় না।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে হাইকে বোমখার্ডেন বলেন, “শামুক একবার কোনো উদ্ভিদে লাগানো মরিচের স্বাদ পেলে আর কখনো সেখানে ফিরবে না। সেই বিপদের বার্তা ছড়িয়েও দেবে।”
সেই মিশ্রণ কিছুটা পাতার উপর, কিছুটা মাটির উপর ছড়িয়ে দিতে হবে। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত হলেও শামুকের একেবারেই পছন্দের স্বাদ নয় সেটা।